ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আল-মদিনা ফার্মার ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করবে বিএসইসি

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২১, ২৮ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৭:২৪, ২৮ আগস্ট ২০২৫
আল-মদিনা ফার্মার ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করবে বিএসইসি

পুঁজিবাজারে এসএমই প্ল্যাটফর্মে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আল-মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কারখানা, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মূলধন বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করে কমিশন।

এরই ধারাবাহিকতায় বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে শর্তসাপেক্ষে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়ে আল-মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক এ কে এম ফারুক আলম এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম প্রামাণিক।

বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

সূত্র জানায়, আল-মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফারের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে, তা খাতিয়ে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।এছাড়া কোম্পানির লেনদেন, নগদ অর্থ, বিনিয়োগগুলোর ন্যায্য মূল্যায়ন ও সহযোগী কোম্পানির মধ্যে লেনদেন হয়েছে কি না, তা শনাক্ত করা হবে। একইসঙ্গে পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা অর্থ প্রসপেক্টাসে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করা হবে। এছাড়া কিউআইও’র উদ্দেশ্য বা সময়সীমা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখতে গঠিত তদন্ত কমিটি।

কমিশনের মতে, এই পরিদর্শনের মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো সুদৃঢ় হবে। পাশাপাশি বাজারে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এটি একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে আল-মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কারখানা, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথি পরিদর্শন করা প্রয়োজন। তাই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুল ১৭ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসি এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হলো। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে এবং তদন্ত সংক্রান্ত প্রতিবেদনের দুটি হার্ড কপি এবং একটি সফট কপি কমিশনে জমা দিতে নির্দেম দেওয়া হলো।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে আল-মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বেশি কিছু বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে-
১. কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ প্রসপেক্টাসের ১৪-১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বর্ণিত শর্ত ও কমিশনের ২৩ মার্চ, ২০২৩ সম্মতিপত্র অনুযায়ী ব্যয় করা হয়েছে কি না।
২. সংশ্লিষ্ট লেনদেনের পক্ষগুলো কারা, সেই লেনদেনের নগদ প্রবাহ কেমন ছিল এবং বিনিয়োগের সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে কি না।
৩. আন্তর্জাতিক হিসাবমান (আইএএস) ২৪ অনুযায়ী কোনো সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেন (রিলেটেড পার্টি ট্রানজেকশন) হয়েছে কি না।
৪. কিউআইও’র মাধ্যমে সংগ্রহীত অর্থের ব্যবহার পরবর্তী আর্থিক বিবরণীতে প্রতিফলিত হয়েছে কি না।
৫. ছোটখাটো নগদ খরচ ছাড়া সব লেনদেন ব্যাংক ট্রান্সফার বা ক্রসড চেকের মাধ্যমে হয়েছে কি না।
৬. ব্যাংক হিসাবে থাকা লেনদেন ও অব্যবহৃত অর্থের হিসাব যাচাই করা।
৭. কিউআইও’র মাধ্যমে সংগ্রহীত অর্থ ব্যবহারের উদ্দেশ্য বা সময়সীমা পরিবর্তন হয়ে থাকলে-তা কমিশনের সম্মতিপত্রের শর্ত নম্বর ২৭ অনুযায়ী সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না।
৮. পাশাপাশি এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি আল-মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের লিমিটেডের সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

এদিকে, সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৮৭ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.৫৭ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২০.৩৯ টাকা।

শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি
আল-মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০২৩ সালে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ৪ লাখ। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৬৯.৮৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫.৪৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪.৬৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩৪.৬০ টাকায়।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়