‘বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ অপর্যাপ্ত’

গত বছর শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বরাদ্দ দিলেও এবার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। করোনায় শিক্ষার যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থ দিয়ে মোচন করা সম্ভব নয়। শিক্ষার ক্ষতি পূরণে কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষাবিদরা এ কথা জানান।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাজেটে শিক্ষায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা অপর্যাপ্ত।  শিক্ষায় একদমই যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। কলকারখানা বন্ধ হলে এবং শ্রমিকরা বিদেশে যেতে না পারলে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি, কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাচ্ছে না, সে বিষয়ে মনে হয় কেউ উদ্বিগ্ন নয়। এ উদাহরণ থেকেই আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে শিক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব দিই না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করেছিলাম বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটা উল্লম্ফন ঘটবে।  কিন্তু সেটি হচ্ছে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক। 

আরও পড়ুন: বাজেট শিল্প ও কর্মসংস্থানবান্ধব: নাজনীন আহমেদ

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেই কবে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ চান।  তার সময়ে তৈরি কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন তাদের রিপোর্টে বলছে, শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ৫ থেকে ৭ শতাংশ দরকার।  বঙ্গবন্ধুর দলটিই এখন ক্ষমতায়, কিন্তু তারা শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ২ শতাংশের বেশি কিছুতেই বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না।

‘এই মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা খাত। যদি সত্যিকার অর্থে এই ক্ষতি আমরা মোকাবিলা করতে চাই এবং অনলাইন-অফলাইন শিক্ষাকে সক্ষমতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে সেখানেই তো কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া উচিত।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বাজেট দেখে মনে হয়নি করোনায় শিক্ষার কোনো ক্ষতি হয়েছে।  অন্য খাতের ক্ষতি দেখা গেলেও শিক্ষার ক্ষতি দেখা যাচ্ছে না বলে নীতি-নির্ধারকরা বাজেটে শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যবিত্তরা পড়ালেখা করলে সেখানে ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিচ্ছে আর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর আরোপ করা হচ্ছে।  এটি অন্যায় কাজ বলে বিবেচিত হচ্ছে।  বাজেটে মেয়েদের কথা ভাবা হয়নি। যারা নিয়মিত কর দেন তাদের কর বাড়ানো হচ্ছে আর যারা ফাঁকি দেন তাদের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের শিক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, অথচ শিক্ষার ক্ষতি পূরণে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না।  শিক্ষা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হবে।  এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া না হলে আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুববে। 

তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামী বাজেটে ২০ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ ৭১ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা।  বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট (প্রস্তাবিত) উপস্থাপন করেন।  এবার বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।