ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সৌমিত্রর জ্ঞান ফেরেনি, দেওয়া হতে পারে প্লাজমা থেরাপি

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৮, ১২ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১২:২২, ১২ নভেম্বর ২০২০
সৌমিত্রর জ্ঞান ফেরেনি, দেওয়া হতে পারে প্লাজমা থেরাপি

ফুসফুসে বেশি অক্সিজেন পৌঁছে দিতে বুধবার (১১ নভেম্বর) অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জির শ্বাসনালীতে অস্ত্রোপচার (ট্রাকিওস্টোমি) করা হয়েছে। এদিন রাতে বেলভিউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সৌমিত্র চ্যাটার্জির আচ্ছন্নভাব কাটেনি। বৃহস্পতিবারই প্লাজমাফেরেসিসের পথে হাঁটবেন চিকিৎসকরা।

সৌমিত্রর জন্য গঠিত ১৬ সদস্যের চিকিৎসক দলের প্রধান অরিন্দম কর। তিনি জানান, সৌমিত্র চ্যাটার্জির অস্ত্রোপচার করেছেন ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. দীপঙ্কর দত্ত। প্রবীণ এই অভিনেতার বয়স ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতার কারণে অস্ত্রোপচার বেশ কঠিন ছিল। তবে অস্ত্রোপচার খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে। এখন তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে প্লাজমাফেরেসিসের পথে হাঁটবেন চিকিৎসকরা। প্লাজমাফেরেসিস সফল হলে অভিনেতার আচ্ছন্নভাব ও অসংলগ্নতা অনেকটা কেটে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সৌমিত্র চ্যাটার্জিকে সুস্থ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বিষয়টি স্মরণ করে অরিন্দম কর বলেন—সৌমিত্র চ্যাটার্জির শরীরের বাকি অঙ্গপ্রতঙ্গ স্বাভাবিক আছে। জ্বর নেই, রক্তচাপ ও অক্সিজেন স্যাচুরেশনও স্বাভাবিক। প্লাজমাফেরেসিস পদ্ধতির পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে কিছুক্ষণের জন্য ভেন্টিলেশন থেকে বের করে আনার চেষ্টা করব। অবশ্যই তার শারীরির অবস্থা এবং কো-মর্বিডিটির কথা মাথায় রেখে!

গত ৯ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পাঠানো চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল সৌমিত্র চ্যাটার্জিকে দেখতে যান। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসকরা ট্রাকিওস্টোমি করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা মনে করেন—এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে নিশ্চিতভাবে উপকৃত হবেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি।

করোনা সংকটের কারণে দীর্ঘ দিন টলিউড ফিল্মইন্ডাস্ট্রির শুটিং বন্ধ ছিল। সতর্কতা মেনে সম্প্রতি শুটিংয়ের অনুমতি মেলে। যথাযথ সুরক্ষা মেনে শুটিংয়ে ফিরেছিলেন সৌমিত্র। নিজেকে নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্রের শুটিং করছিলেন। এর মধ্যে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ৬ অক্টোবর কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এই শিল্পীকে।

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি। চ্যাটার্জি পরিবারের আদিবাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। সৌমিত্রর দাদার আমল থেকে চ্যাটার্জি পরিবার নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে বসবাস শুরু করেন। সৌমিত্র পড়াশোনা করেন—হাওড়া জেলা স্কুল, স্কটিশ চার্চকলেজ, কলকাতার সিটি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৫৯ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সৌমিত্র। মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। কবি ও খুব উচ্চমানের আবৃত্তিকার হিসেবে তার দারুণ খ্যাতি রয়েছে।

২০১২ সালে ভারতের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন সৌমিত্র। ২০০৪ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণ পান তিনি। তাছাড়া ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের অসংখ্য সম্মাননা তার প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা পড়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো—ফ্রান্সের ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ (২০১৮)।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়