ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রাজ্জাকের সঙ্গে কবরীর প্রেম-বন্ধুত্ব-দ্বন্দ্ব

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ১৭ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৭:৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২১
রাজ্জাকের সঙ্গে কবরীর প্রেম-বন্ধুত্ব-দ্বন্দ্ব

ঢাকাই চলচ্চিত্রের তুমুল জনপ্রিয় জুটি রাজ্জাক-কবরী। পর্দায় তাদের রসায়ন-সংলাপ দর্শকদের সব সময়ই আনন্দিত করেছে। একের পর এক সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। মজার বিষয় হলো, তাদের রসায়ন এতটাই প্রাণবন্ত ছিল যে, সেই সময় তারা দুজন বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও তাদের ঘিরে প্রেমের গুঞ্জন চাউর হয়।

গতকাল শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) না ফেরার দেশে চলে যান 'মিষ্টি মেয়ে'খ্যাত অভিনেত্রী কবরী। এর মধ্যে দিয়ে এই দুই কিংবদন্তির অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো।

বাংলাদেশি সিনেমার চির স্মরণীয় এই জুটির বন্ধুত্ব, প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে ২০১৯ সালে কথা হয় রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তাদের স্মৃতির প্রতি সন্মান জানিয়ে রাজ্জাক-কবরী জুটি নিয়ে বরেণ্য এই অভিনেত্রীর কিছু কথা তুলে ধরা হলো।

যেভাবে তাদের প্রথম দেখা

নায়করাজ রাজ্জাক ও কবরী দুজনই চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। প্রথম দেখা প্রসঙ্গে কবরী বলেছিলেন, “রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে যখন আমার প্রথম দেখা তখন আমি কিছুই ফিল করিনি। তখন রাজ্জাক সাহেব ওতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। আমিও জনপ্রিয় হয়ে উঠিনি। রাজ্জাক সাহেব আগে থেকেই সিনেমায় কাজ করে আসছেন আর আমি ‘সুতরাং’ সিনেমার কাজ শেষ করেছি। গাজী মাজহারুল আনোয়ার ‘যোগাযোগ’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। তার বাসায় আমাকেও ডেকেছেন আর রাজ্জাক সাহেবকেও। সেদিনই আমাদের প্রথম সামনা-সামনি কথা হয়। শেষ পর্যন্ত ওই সিনেমাটি আর নির্মাণ হয়নি।” 

যে পথে বন্ধুত্বের শুরু

সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তিনি বলেছিলেন, “ময়নামতি’ সিনেমার কাজের সময় আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। একে অপরের কাছ থেকে শিখেছি। আমরা নিজেদের মধ্য ভাবের আদান-প্রদান করেছি। বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা এক্সচেঞ্জ করেছি। সিনেমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছি। সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছে। বিষয়টি এমন না যে, উনার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমার প্রেম হয়ে গেল। বরং কাজ করতে গিয়ে দুজনের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। দুজনই পেশাদারিত্বের সঙ্গে, ভক্তির সঙ্গে কাজ করেছি। এভাবেই অভিনেতা-অভিনেত্রী, বন্ধু হিসেবে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত একসঙ্গে কাজ করেছি। এর মধ্যে কত কথা হয়েছে। এর মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হতেই পারে। আমরা শুধু জুটি হিসেবে সফল হয়েছি তা নয়, আমরা পেশাদার শিল্পী হিসেবেও স্বাক্ষর রাখতে পেরেছি।”

মধুর সম্পর্কের মাঝে দ্বন্দ্ব

মধুর সম্পর্ক থাকলেও একটা সময় গিয়ে তাদের সম্পর্কে চিড় ধরে। কবরী বলেছিলেন, ‘আমাদের মধ্যে মধুর সম্পর্কের পাশাপাশি ঝগড়াও হতো। আমাদের ঘনিষ্ঠ একজন পরিচালক কামাল আহমেদ ছিলেন। উনি আমাকে ছাড়া কাউকে ভাবতে পারতেন না। একবার রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে এমন কঠিন ঝগড়া হয়েছে যে, আমরা একসঙ্গে আর কাজ করব না। কামাল ভাই একটা স্ক্রিপ রেডি করল। আমাকে যখন বলল ‘অধিকার’ সিনেমার কাজের জন্য, আমি কামাল ভাইকে বলে দিয়েছি- কামাল ভাই আমিতো রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে কাজ করব না। রাজ্জাক সাহেবও বলল- আমিও আর কবরীর সঙ্গে কাজ করব না। সবাইতো মাথায় হাত। এরপরে আমি বললাম- আমি এই সিনেমা করতে পারি তবে রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে করব না। এরপর এই সিনেমায় তিনি আমার সঙ্গে বুলবুল আহমেদকে নিলেন আর রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে শাবানা। আমাদের মধ্যেকার ঝগড়ার কারণেই এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল। তবে সিনেমাটি দারুণ হিট হয়েছিলে।’

দূরত্ব

সফল এই জুটির দূরত্ব তৈরি প্রসঙ্গে কবরী বলেছিলেন, 'একবার একটা ঘটনা ঘটেছিল। শুরুর দিকের সিনেমায় কবরী-রাজ্জাক নাম দেওয়া হতো। হঠাৎ করে রাজ্জাক সাহেব বায়না ধরেছেন তার নাম আগে দিতে হবে। বলেন-এটা হতেই হবে তা না হলে আমি শুটিং করব না। এটাতে আমি খুব রাগ করতে লাগলাম। আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে লাগল। তবে এরকম কিছু দূরত্ব দুরন্ত আকারে বেরিয়ে এসেছে জনপ্রিয় জুটির মধ্য দিয়ে।’ 

পেশাদারিত্বে অটল

সম্পর্কের পাশাপাশি পেশাদারিত্বে অটল ছিলেন তারা। কবরী বলেছিলেন, ‘রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে আমার গোপন কোনো প্রেম ছিল না। আমাদের প্রেম ছিল পর্দায়, আমাদের প্রেম হয়েছে অভিনয়ের মাধ্যমে। আমরা যখন অভিনয় করেছি তখন চোখে চোখে কথা বলতাম। আমরা বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বলতাম। আমাদের মনে হয়েছে একজন আর একজনের জন্য তৈরি হয়েছি। আমি বলতে পারি এই বোঝাপড়াটা ঢাকাই চলচ্চিত্রে আর কখনো আসবে কি না আমার সন্দেহ। ভালোলাগা, ভালোবাসার মধ্যে একটা ছেলে একটা মেয়ে শুধু কি প্রেম করে বিয়ে করার জন্য? শুধু কি বন্ধুত্ব হয় বিয়ে করার জন্যই? আমি বলবো, না। তার থেকেও উপরের প্রেমটা হবে শারীরিক কোনো লেনাদেনার সম্পর্ক থাকবে না সেখানে। একটা মেয়ে একটা ছেলের বন্ধুত্ব অনেক বেশি প্রগাঢ় হতে পারে বলে মনে করি। কারণ এতে কোনো শর্ত নেই। রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে আমার কোনো শর্ত ছিল না। শুধু ছিল আমাদের পেশাদারিত্ব। এটাই আমাদের শর্ত ছিল। আমরা দুজন দুজনকে প্রশংসা করতাম। উনি না করলে জোর করে আদায় করে নিতাম। আমরা আমাদের কাজের মধ্যে কার্পণ্য করিনি বলেই আজ পর্যন্ত টিকে আছি। আমাদের জুটি প্রথাটা পেশাদারিত্ব থেকে আমাদের দূরে সরাতে পারেনি। আমাদের মধ্যে যেমন বন্ধুত্ব ছিল, তেমনি প্রতিযোগিতাও ছিল।'

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/মারুফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়