‘আপনি যখন অন্যের জন্য বাঁচবেন তখন স্বার্থপর হতে পারবেন না’
এ আর রহমান
কয়েক দিন আগে প্রায় তিন দশকের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দেন ভারতের অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান ও তার স্ত্রী সায়রা বানু। একই দিনে সংসার ভাঙার খবর জানান তার দলের বেজ গিটারিস্ট মোহিনী দে।
একই দিনে দুটো সংসার ভাঙার খবরে বিস্মিত হন নেটিজেনরা। গুঞ্জন রটে— “মোহিনী দের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর কারণে সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ আর রহমান!” যদিও এই দাবি নাকচ করেছেন মোহিনী দে ও এ আর রহমানের দুই সন্তান।
বিচ্ছেদ ঘোষণার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে কথা বললেন এ আর রহমান। ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘৫৫তম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ভেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া’। এতে যোগ দেন এ আর রহমান। এ মঞ্চে বেশ কিছু বিষয়ে আলোকপাত করেন এই শিল্পী।
ইঙ্গিতপূর্ণভাবে এ আর রহমান বলেন, “আমাদের প্রত্যেকেরই মানসিক সমস্যা, বিষণ্নতা রয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের সবার মাঝেই একটা শূন্যতা রয়েছে। সেই শূন্যতা পূর্ণ করতে পারে গল্পকার, দার্শনিক, বিনোদন। আপনার শারীরিক চাহিদা, যেমন: সহিংসতা, যৌনতাই কেবল এটা পূরণ করতে পারে না। এসব ছাড়াও আরো অনেক কিছু রয়েছে।”
তরুণ বয়সে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন এ আর রহমান। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি তরুণ বয়সে আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলাম। আমার মা বলতেন, ‘যখন তুমি অন্যের জন্য বাঁচবে তখন তুমি এসব চিন্তা করবে না।’ এটি চমৎকার একটি পরামর্শ ছিল।”
ব্যাখ্যা করে এ আর রহমান বলেন, “আপনি যখন অন্যের জন্য বাঁচবেন তখন আপনি স্বার্থপর হতে পারবেন না। এখানেই আপনার জীবনের অর্থ রয়েছে। আমি এটি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আপনি যখন অন্য কারো জন্য সুর করছেন, কিছু একটা লিখছেন, যার কেনার সামর্থ নেই এমন কারো জন্য খাবার কিনছেন অথবা অন্যের জন্য হাসছেন— এসবই আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ভবিষ্যতের বিষয়ে আমাদের জ্ঞান খুবই কম। আপনার জন্য অসাধারণ কিছু অপেক্ষা করতে পারে। আপনার কাছে যদি এই সমস্ত জিনিস থাকে, আশা থাকে, তবে এটিই আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মাঝে মাঝে মনে হয়, এসবই আমি করেছি। এখন পুনরাবৃত্তির মধ্যে আছি। এরপরই উপলদ্ধি করতে পারবেন, আপনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছেন।”
খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারান এ আর রহমান। এরপর জীবিকার সন্ধানে কাজে নামতে হয় তাকে। মাত্র ১১ বছর বয়সে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার বিভিন্ন সুরকারের সঙ্গে বাজাতে শুরু করেন রহমান। ২৩ বছর বয়সে সপরিবারে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এ আর রহমান। তার নাম ছিল দিলীপ কুমার।
১৯৯২ সালে তামিল ভাষার ‘রোজা’ সিনেমা দিয়ে সুরকার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে রাম গোপাল ভার্মার ‘রঙ্গীলা’ সিনেমার সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে তার বলিউড যাত্রা। ড্যানি বয়েলের ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ সিনেমার জন্য অস্কার, গ্র্যামি, বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জিতে নেন এ আর রাহমান। তা ছাড়াও তার ঝুলিতে জমা পড়েছে ভারতের ছয়টি জাতীয় পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ‘পদ্মশ্রী’ (২০০০), ‘পদ্মভূষণ’ (২০১০) প্রভৃতি।
তথ্যসূত্র: টাইমস নাউ
ঢাকা/শান্ত