রেখার সিঁদুর রহস্য
সিঁদুরে রাঙানো রেখার সিঁথি
বলিউডের ‘চিরসবুজ’ অভিনেত্রী ভানুরেখা গণেশা। তবে সকলের কাছে তিনি রেখা নামেই পরিচিত। ১৯৫৪ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন এই অভিনেত্রী। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) ৭১ বছর পূর্ণ করলেন বলিউডের এই তারকা।
সত্তরের দশকের অন্যতম সাড়া জাগানো এই অভিনেত্রী অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই বেশি খবরে এসেছেন। এক সময় শোবিজ পত্রিকাগুলোর মূল আলোচনার বিষয় ছিল এই জুটির প্রেম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জয়া ভাদুরিকে জীবনসঙ্গী করেন অমিতাভ। ফলে রেখার সঙ্গেও তার দূরত্ব তৈরি হয়।
অন্যদিকে, গোঁড়া হিন্দু পরিবারের মেয়ে রেখা বিধবা হয়েছেন অনেক আগে। পরবর্তী সময়ে তার বিয়ে হওয়ার কথা শোনা যায়নি। কিন্তু এরপরও রেখার সিঁথিতে সিঁদুর কেন? এ নিয়ে অনেকেই কৌতূহল প্রকাশ করেন। এমনকি বলিপাড়ায় এ নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে।
বলিউডের প্রবীন অভিনেতা পুনীত ইসারের স্ত্রী ও রেখার পুরোনো বান্ধবী দীপালি এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, “রেখা আজও অমিতাভের জন্যই সিঁদুর পরেন।” এমনকি, নিতু ও ঋষি কাপুরের বিয়ের অনুষ্ঠানেও সিঁদুর পরে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।
রেখা
নিতু ও রেখা ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আর কে স্টুডিওতে সেদিন সাদা শাড়ি পরে হাজির হয়েছিলেন রেখা। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় ছিল তার মাথার সিঁদুর। উপস্থিত সকলেই বিষয়টি নিয়ে কানাকানি শুরু করেন। বিয়ের এই অনুষ্ঠানে অমিতাভ-জয়াও উপস্থিত ছিলেন। এই অভিনেত্রীর আত্মজীবনী ‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ বইতে সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ইয়াসের ওসমান।
আশির দশকের অন্যতম নামি পত্রিকা সিনেব্লিজ সেই সময় তাদের প্রতিবেদনে লিখেছিল, “আর কে স্টুডিওর মাঝের লনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রেখা। আর তার চোখ ছিল অমিতাভের দিকে।”
যদিও অনেক পরে হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে রেখা বলেছিলেন, “আমি সরাসরি একটি সিনেমার শুটিং থেকে সেখানে গিয়েছিলাম। আর মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা ছিল না। আমার কাছে এটি ভালোই লাগছিল। সিঁদুর আমাকে মানায়।”
তাছাড়া রেখার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৮২ সালে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘উমরাও জান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন রেখা। অনুষ্ঠানে সেই সময়ের ভারতের রাষ্ট্রপতি নীলম সঞ্জীব রেড্ডি এই অভিনেত্রী সিঁদুর পরার কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। উত্তরে রেখা বলেছিলেন, “আমি যে শহর থেকে এসেছি, সেখানে সিঁদুর পরা একটি ফ্যাশন।”
ফ্যাশন ডিজাইনার ও রেখার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিনা রামানির মাধ্যমে দিল্লিভিত্তিক শিল্পপতি মুকেশ আগরওয়ালের সঙ্গে রেখার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সময়ে বিনা রেখাকে বলেছিলেন—“মুকেশ তোমার ‘পাগল ভক্ত।” ১৯৯০ সালের ৪ মার্চ বিয়ে করেন রেখা-মুকেশ।
রেখা
ধারণা করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে মুকেশ বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। রেখার জীবনীকারদের মতে, “বিয়ের পরই মুকেশের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ব্যাপারে জানতে পারেন রেখা।” বিয়ের কয়েক মাস পর, রেখা লন্ডনে গিয়েছিলেন, তখন মুকেশ আগরওয়াল আত্মহত্যা করেন। একটি চিরকুটে লিখে যান—“কাউকে দোষারোপ করবেন না।” যদিও এ ঘটনার পর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন রেখা।
বিনোদ মেহরা, অমিতাভ বচ্চন, জিতেন্দ্র, শত্রুঘ্ন সিনহা, রাজ বাব্বর, কমল হাসান, সঞ্জয় দত্তের সঙ্গেও রেখার নাম জড়িয়েছে, নানা সময়ে রটে রটেছে। এমনকি, বয়সে ছোট এমন অনেকের সঙ্গে তার নাম জড়িয়েছে। এত কিছুর পর শেষ পর্যন্ত সংসার করা হয়নি রেখার।
ঢাকা/শান্ত