ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রকৌশলী যখন মাছচাষি  

খুরশিদ জামান কাকন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৫:০৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রকৌশলী যখন মাছচাষি  

সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে দেশে মাছের চাহিদা বেড়েছে। আর চাহিদা পূরণে উদ্ভব হচ্ছে বিভিন্ন প্রযুক্তি নির্ভর মাছ চাষ পদ্ধতি। এমনই সম্ভাবনাময় একটি বৈপ্লবিক পদ্ধতি হলো রিসার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম। সংক্ষেপে একে রাস পদ্ধতি বলা হয়। চীনে উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় অধিক মাছ চাষ করা যায়।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের মছে হাজী পাড়ার তরুণ প্রকৌশলী কামরুজ্জামান কনক রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফল হয়েছেন। 

তিনি ২০১৯ সালে চাকরি ছেড়ে নিজ উদ্যোমে কিছু করার তাগিদে গ্রামে এসে ১১ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চারটি ট্যাংকে মাছ চাষ শুরু করেন। আশানুরূপ ফল পাওয়ায় এই বছর থেকে বাণিজ্যিক আকারে পুরোদমে মাছ চাষ করছেন।

চারটি ট্যাংক দিয়ে রাস পদ্ধতি শুরু করা কনকের ‘জামান অ্যাকুয়া অর্গানিক ফিশ ফার্ম’-এ এখন ছয়টি ট্যাংক। আট হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পূর্ণ প্রতিটি ট্যাংক থেকে তিনি প্রায় ৪০০ কেজি করে মাছ উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন। তেলাপিয়া মাছ দিয়ে যাত্রা শুরু করা জামান অ্যাকুয়া অর্গানিক ফিশ ফার্মে এ বছর শিং, দেশি কৈ ও ভিয়েতনামি কৈ মাছ চাষ করা হচ্ছে।

এরইমধ্যে মাত্র চারমাসে দুইটি ট্যাংকের ভিয়েতনামি কৈ মাছ বিক্রি শুরু হয়েছে। নিত্য দিনই কেমিক্যালমুক্ত তার এই সুস্বাদু মাছ কিনতে জামান অ্যাকুয়া অর্গানিক ফিশ ফার্মে ভিড় জমাতে দেখা যায় আগ্রহী ক্রেতাদের। এছাড়াও ক্রেতাদের নিকট একেবারে টাটকা মাছ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বর্তমানে তিনি সৈয়দপুরে হোম ডেলিভারি সার্ভিসও চালু করেছেন।

বছরে দুইবার মাছ চাষ করার প্রত্যয়ে গড়ে ওঠা কামরুজ্জামানের এই ফার্মে দেশি কৈ ও শিং মাছ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ বাজার উপযোগী হবে। এরমধ্যে ফার্মের ভেতরেই খননকৃত ছোট আকৃতির একটি পুকুরে তিনি শিং মাছের রেণু থেকে পোনা প্রস্তুত করছেন, যা অক্টোবর নাগাদ ট্যাংকে স্থানান্তরের মাধ্যমে রাস পদ্ধতিতে চাষ করবেন।

অল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বে মাছ চাষে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা রিসার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেমে একই পানি পুনরায় সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত হয়ে মাছের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। ফলে, এখানে পানি অপচয়ের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও মাছের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। তবে, এজন্য প্রয়োজন সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। 

রাস পদ্ধতিতে নিবিড় পরিচর্যা থাকায় মাছের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ও কোনো রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। এই পদ্ধতিতে ফ্রেশ খাবার খাওয়ানোর ফলে পুকুরে চাষ করা মাছের চেয়ে রাস পদ্ধতিতে উৎপাদিত মাছ অনেক বেশি সুস্বাদু। মাত্র একজন দক্ষতাসম্পন্ন লোক হলেই এই পদ্ধতিতে গোটা একটি ফার্ম চালানো সম্ভব। 

রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে জামান অ্যাকুয়া অর্গানিক ফিশ ফার্মের কর্ণধার কামরুজ্জামান কনক বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে পুকুরের চেয়ে ৩০ গুন অধিক মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। পুকুরে যেখানে ২ কেজি খাবারে ১ কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়, রাস পদ্ধতিতে সেখানে মাত্র ১২০০ গ্রাম খাবারে ১ কেজি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে দেশি শিং, মাগুর, কৈ, পাবদা, টেংরা, তেলাপিয়া, পাংগাস, চিংড়ি, ভেটকিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে চাষ করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রযুক্তিটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় বর্তমানে বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণ কিছুটা বেশি হলেও পরবর্তী সময়ে রাস পদ্ধতির ব্যবস্থাপনা ব্যয় সাশ্রয়ী ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। বর্তমানে দেশের মানুষের বিপুল পরিমাণ আমিষের ঘাটতি পূরণে আধুনিক রাস পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়