ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

উদ্যোক্তাদের হাতেই উন্নয়নের চাবি 

হাবিবা খাতুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ৮ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:৫৪, ৮ অক্টোবর ২০২০
উদ্যোক্তাদের হাতেই উন্নয়নের চাবি 

করোনা মহামারির ভয়ঙ্কর থাবায় বিপর্যস্ত পুরো পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থা। বাংলাদেশের অবস্থাও একই। অসংখ্য মানুষ চাকরি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরছেন প্রবাসীরাও। ফলে কমে গেছে দেশের অর্থনীতির দ্বিতীয় পিলার প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত মার্চে প্রবাসীরা ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রায় ২ লাখ প্রবাসী কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী কাজ হারিয়ে বসে আছেন। তাই দেশে ফেরত আশা প্রবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে, তা সহজেই অনুমেয়। অথচ তাদের রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরশীল দেশের ১২ শতাংশ জিডিপি। এই আবস্থায়, উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি এক ভীতিকর অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।

আবার, বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত এ দেশের বেকারত্বের হার বাড়ছেই। গত দশকে বেকারত্বের হার বেড়েছে ১.৬ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসেব মতে, বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ। যদিও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি। ভয়াবহ মহামারিতে কাজ হারিয়ে বেকারত্বের পরিমাণ আরও বাড়বে। এত পরিমাণ বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে না লাগাতে পারলে অর্থনীতি একেবারেই ভেঙে পড়বে।

এই অবস্থায় দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে একঝাঁক তরুণ উদ্যোগ নিয়ে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা সচ্ছল করার সঙ্গে সঙ্গে এদেশের অর্থনীতি বাঁচাতে এগিয়ে আসছে। তারা অন্যদের কাজ করার চেয়ে, অন্যদের কাজ দিতে বেশি উৎসাহী হয়ে উঠেছে। আত্মবিশ্বাস, দৃঢ় মনোবল, প্রচুর ঝুঁকি নিয়ে তারা উদ্যোক্তা হওয়ার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। 

একজন ব্যক্তি যখন নিজের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে, অন্যের অধিনস্থ না হয়ে নিজে থেকেই কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর পরিকল্পনা করে, তখন তাকে উদ্যোক্তা বলে। আর এই উদ্যোগ যখন সফল বা স্বনির্ভর হয়, তখন তাকে ব্যবসায়ী বলে। এই তরুণ উদ্যোক্তারা দেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তারা একদিকে যেমন নিজেরা বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বের হয়ে আসবে, ঠিক তেমনি দেশের অর্থনীতির প্রাণ ফেরাতে পারবে। ফলে, তাদের নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যকে কাজ দিয়ে সাহায্য করতে পারবে। কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তায় উচ্চ শিক্ষিত ও কাজ হারানো প্রবাসীদের মধ্যে আশার আলো সঞ্চারিত হয়েছে। তাই এসব উদ্যোক্তাদের মূল্যায়ন দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির মোড় ঘুরাতে সক্ষম হবে।

প্রয়োজনীয় ও সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে। যেমন, কর প্রদান, ব্যাংক লোন ইত্যাদি বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি না করে সহজ করে তুলতে হবে। নতুন নতুন উদ্যোক্তারা কীভাবে ব্যবসার লাইসেন্স তৈরি করবেন, কীভাবে পরিকল্পনা করবেন, প্রোডাক্ট সোর্সিং, প্রোডাক্ট সিলেকশন, কোয়ালিটি যাচাই, শিপিং চার্জ, ডেলিভারি, কাস্টিং, প্রোডাক্ট মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, এক্সপার্ট, ইমপোর্ট ইত্যাদি বিষয়ে অবহিত করার জন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গড়ে তুলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ভাবনাকে সম্মান করতে হবে, হেয় করা যাবে না, সামাজিক স্বীকৃতি দিতে হবে, পরিবারকে পাশে থাকতে হবে, সুদের হার শিথিল করে ঋণ প্রদান করতে হবে৷

অনেক সময় দেখা যায়, উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদান করা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়, কাজের ক্ষেত্র অনিশ্চিত বলে তাদের ঋণ দেওয়া হয় না।  কিন্তু এই দিকটা খেয়াল করতে হবে, যাতে তারা সহজেই ঋণ পায়, না হলে তারা মনোবল হারিয়ে ফেলবে। নতুন নীতিমালা তৈরি করে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, তাদের নিয়ে ট্রল করা বন্ধ করতে হবে, ছোট বড় সব উদ্যোক্তাকে সহযোগিতা করতে হবে, যেকোনো কাজ করতে উৎসাহ দিতে হবে। তাই সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাদের কাছ থেকে পণ্য কিনে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে৷ 

এই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে পরিণত করলেই দেশের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হবে। বেকারত্বের অভিশাপে অভিশপ্ত দেশের মানুষ আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে এই উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে। বলা যায়, এসব ছোট ছোট উদ্যোক্তাই একদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠবে। তাই তরুণ উদ্যোক্তাদের আর হেয় নয়, মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের মূল্যায়ন মানে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন। আশা করা যায়, এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হাত ধরেই দেখা মিলবে এক আলোকিত বাংলাদেশের।

লেখক: শিক্ষার্থী, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

ঢাবি/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়