ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এফ-কমার্সে ক্রেতা বাড়াতে অনেক সময় দিতে হয়

মোস্তাফিজুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ৫ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:৪৪, ৫ নভেম্বর ২০২০
এফ-কমার্সে ক্রেতা বাড়াতে অনেক সময় দিতে হয়

প্রতিনিয়ত মানুষ ফেসবুকে চাহিদা অনুযায়ী পেজ খুলে বিভিন্ন ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন। অনেকেই এ ব্যবসায় সফলও হচ্ছেন। নারী-পুরুষ সমানতালে ছুটছেন এই ‘এফ-কমার্স’-এর পেছনে।  এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে এফ কমার্স নিয়ে জানতে শুরু করেন ফারজানা মুন্নি। 

মুন্নির জন্ম ও বেড়ে ওঠা নেত্রকোণায়। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে বসবাস করছেন।   

মুন্নি প্রথমে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) গ্রুপের বিভিন্ন মিটআপ প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে আগ্রহের বিষয় নির্বাচন করেন, পণ্য সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেন।  গ্রাহককে কিভাবে সেবা দেওয়া যায়, তার বুনিয়াদি ধারণা নেন। 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্নি বলেন, ‘আমার আগ্রহের বিষয় বাটিক।  বাটিকের কিছু ধারা টাই ডাই, শিবুরি ডাইয়ের কাজ সম্পর্কে পড়াশোনা করতাম।  উই গ্রুপে প্রতিদিন অসংখ্য কনটেন্ট লিখতাম।’ 

ফারজানা মুন্নি প্রথমে নিয়মমাফিক সালোয়ার-কামিজে বাটিকের কাজ দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু সময়ের অভাবে ব্যবসা  আর হয়ে ওঠেনি।  তবে, আগ্রটা ঠিক রেখে বাচ্চাদের কাপড় নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। ২০১৯-এর এপ্রিল মাস থেকে নিজের ফেসবুক পেজ এইচআরএম কালেকশনের মাধ্যমে নিজের ডিজাইনে বিক্রি শুরু করেন। 

ফারজানা মুন্নি কাজ শুরু করেন মাত্র দুই হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে।  এখন প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা আয় করছেন।  এক বছরে অনলাইন-অফলাইন—উভয় মাধ্যম থেকে আয় করেছেন প্রায় চার লাখ টাকা। 

মুন্নি মনে করেন, কম সময়ে ভালো ক্রেতার সমাগম হওয়ার প্রধান কারণ মানসম্মত পণ্য ও  আকর্ষণীয় ডিজাইন। কিন্তু শুরুটা কেমন সংগ্রামের ছিল—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে কয়েকমাস দারাজের সেলার হিসেবে কাজ করি। বিক্রি ভালো হতে থাকলে ওই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিজের পেজে ব্যবসা শুরু করি। এ সময় ক্রেতাকে আকর্ষণ করা সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল৷ কারণ তারা চান বিশ্বস্ততা। ’

পণ্যের প্যাকেজিং থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানো প্রত্যেকটি কাজ খুবই পেশাদারভাবে হয় বলে মন্তব্য করেন মুন্নি। তিনি আরও বলেন,  ‘এসব বিষয় শেখার জন্য সময় দিতে হয়। একই সঙ্গে কারিগর দিয়ে কাপড় তৈরি করানো, কাপড়ে রুচিসম্মত ডিজাইন তৈরি করা, রঙ কিংবা সুতা পরীক্ষা করে সব ঠিক রাখা আমার প্রধান কাজ  ছিল। এর মাঝে সপ্তাহে এক বা দুই দিন পাইকারি মার্কেটেও যেতাম। আবার বাচ্চাদেরও দেখাশোনা করতে হতো।  একা এতসব করতে গিয়ে প্রতিটা ঘণ্টা আমার জন্য সংগ্রাম ছিল।’ 

প্রতিদিনের এই সংগ্রাম বেশ উপভোগ করেন মুন্নি।  তিনি জানান,  দুই মেয়ের জন্য কাজ করে ভালো ভবিষ্যৎ তৈরির চিন্তা তাকে প্রেরণা জোগায়। 

পোস্ট করার পর কেমন প্রতিক্রিয়া আসে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে ব্যবসায়ী পেজ কতজন সঠিক ভোক্তার নিকট পরিচিত। এটাকে এফ-কমার্সের ভাষায় বলে টার্গেট কাস্টমার। আর টার্গেট কাস্টমার তৈরি করতে নিজের পেজে বা গ্রুপে অধিক সময় সক্রিয় থাকার কোনো বিকল্প নেই।’ 

ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিতে গিয়ে ফারজানা মুন্নি বলেন, ‘কে কী নিয়ে কাজ করছেন, তা দেখে হুজুগের বশে নিজে কিছু শুরু না করা। নিজের কোন কাজ করতে ভালো লাগে, তা নিজেকেই ঠিক করতে হবে। তবে, এসবই প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করা উচিত। তাহলে সেই কাজে কখনো ব্যর্থ হবেন না। ’ বাধা থাকবে, তবে মনোবল  হারানো যাবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।  

লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়। 

গবি/সিনথিয়া/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়