ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রিকশা পেইন্টে স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা রাইসা

জি এম আদল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১২:৩২, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০
রিকশা পেইন্টে স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা রাইসা

‘ছোটবেলায় রিকশার গায়ে যেসব ছবি বা চিত্র আঁকা দেখতাম, ওগুলোই রিকশা পেইন্ট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রিকশার পেছনে সিনেমার কোনো বিশেষ দৃশ্যের ছবি। এগুলো দেখতাম, আর হারিয়ে যেতাম মনের অজান্তে।’ কথাগুলো বলছেন ঢাকার মেয়ে রাইসা মানিজা। তিনি (Artgenix) আর্টজেনিক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা।

যারা রিকশার গায়ে ছবি আঁকার কাজ করেন, তারা রিকশা পেইন্টার। এদের নিখুঁত হাতের এই পেইন্টিং দেখলে জীবন্তই চিত্রকর্ম মনে হতো। এক সময় এ পেশায় প্রচুর মানুষ কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত, কিন্তু সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তি আর গ্রাফিক্সের আগমনে আজকে সেইসব রিকশা পেইন্টাররা প্রায় কর্মহীন। হারিয়ে যাচ্ছে সেই রিকশা পেইন্টিং। অনেক হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের মধ্যে এই রিকশা পেইন্ট অন্যতম।

এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে বাচিয়ে রাখতে কাজ করছেন রাইসা মানিজা। একদিকে যেমন ঐতিহ্য রক্ষা পাচ্ছে, অন্য দিকে আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন তিনি। রাইসার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ব্যস্ত নগরী ঢাকাতেই। পড়ালেখা ইংরেজি সাহিত্যে হলেও রঙ নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসেন তিনি। নিজেকে একজন শিল্পী হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করে এই নারী উদ্যোক্তা। সেই শৈল্পিক চিন্তা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জেগেছিল তার।

তার উদ্যোগ (Artgenix) আর্টজেনিক্সের শুরুর গল্প জানতে চাইলে রাইসা মানিজা বলেন, ‘‘আমাদের দেশীয় হারিয়ে যাওয়ার ঐতিহ্যগুলো আমাকে বেশ নাড়া দিত সবসময়। বিশেষ করে লোকশিল্প, যা কিনা রিকশা আর্ট একদমই বিলুপ্তের পথে। এ নিয়ে সবসময়ই ভাবতাম এই শিল্প ও শিল্পীদের জন্য যদি কিছু করা যেত!

এছাড়া বিভিন্ন সময় পারিবারিক ব্যস্ততার কারণে নিজের পরিচয় তৈরি করতে খানিকটা ব্যর্থ হয়েছিলাম। একসময় নিজের মনের ভেতর থেকে তীব্র আকাঙ্ক্ষা জন্মালো নিজেকে স্বাবলম্বী হতে হবে। সেই থেকে ভালোবাসার কাজ নিয়ে '‘(Artgenix) আর্টজেনিক্স’-এর যাত্রা শুরু করলাম।’’

অনলাইন পেজের মাধ্যমে তার উদ্যোগ শুরু হলেও আর্টজেনিক্স এর সুনাম এখন সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি গৃহসজ্জার পণ্য ও কুটির শিল্প নিয়েও কাজ করছেন রাইসা। প্রায়ই বিভিন্ন মেলায় প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে তার আর্টজেনিক্স।

কেটলি, টেবিল ল্যাম্প, চায়ের কাপ, হারিকেন ইত্যাদি জিনিসে গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন গল্প, সেই রূপালি পর্দার নানা পোস্টার, কাহিনী রিকশা পেইন্টের মাধ্যমে তাদের পণ্যে ফুটিয়ে তুলছে। যা গৃহের সৌন্দর্য বাড়াতে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখছে। রুচিশীল অনেক মানুষের প্রথম পছন্দে রয়েছে আর্টজেনিক্স এর এই পেইন্টের পণ্য।

উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলার নানা প্রতিবন্ধকতা ও বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানাতে গিয়ে রাইসা বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে প্রতিবন্ধকতা অনেক বেশি, কারণ মাঠ পর্যায়ে কাজ করা খুব কঠিন। আমি যেহেতু রুট লেভেলের আর্টিস্ট নিয়ে কাজ করি, তাই অনেক বেশি ফিল্ডওয়ার্ক করা প্রয়োজন হয়।

যেহেতু বেচাবিক্রি নিয়মিত হচ্ছে না, সেই কারণে একজন ক্ষুদ্র ও নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ খানিকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। লেগে থাকার কারণ, স্বপ্ন যেহেতু দেখেছি ও কাজ শুরু করে ফেলেছি, তাই নিজেদের টিকিয়ে রাখাই এখন একটা বড় লড়াই। চেষ্টা করছি এই শিল্প নিয়ে যারা কাজ করছে, তাদের কয়েকজনের পাশে যেন আমি দাঁড়াতে পারি। তাদের জীবিকা অর্জনের জন্য কিছুটা অবদান রাখার চেষ্টা করছি।’’

আর্টজেনিক্সের পক্ষ থেকে রাইসা চমৎকার কিছু সামাজিক কাজ করছেন। সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুদের হস্তশিল্পের নানা বিষয় প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি। এই সুবিধাবঞ্চিতদের তৈরি করা পণ্য যেন মার্কেটে বিক্রি করা যায়, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাইসা। তাদের সঙ্গে নিয়ে পথচলার স্বপ্ন দেখছেন এই তরুণ নারী উদ্যোক্তা। অল্প অল্প করে সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন এই স্বপ্নবাজ উদ্যোক্তা।

আর্টজেনিক্স নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে রাইসা বলেন, ‘প্রতিবন্ধকতা, বাঁধা-বিপত্তি কম-বেশি আছে, কিন্তু তারপরও মনের ভেতর একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা আছে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই।’ 

শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হারিয়ে যাওয়া এই শিল্পটাকে তুলে ধরতে চান এই উদ্যোক্তা। রাইসা স্বপ্ন দেখেন শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরেও সুনাম অর্জন করবে তার রিকশা পেইন্ট ব্র্যান্ড '(Artgenix) আর্টজেনিক্স। 

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়