ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাবার ঋণ শোধ করতে যাওয়া বোকামি

রিমন কান্তি দে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ১৫ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৮:৪৫, ১৫ জুন ২০২৪
বাবার ঋণ শোধ করতে যাওয়া বোকামি

আমি বরাবরের মতোই প্রতিবছর মা দিবসের শুভেচ্ছা জানালেও কখনো বাবা দিবসে তেমন একটা পালনও করতাম না, শুভেচ্ছাও জানাতাম না। আমার সব কথা শেয়ার করি মা’র সঙ্গে। এমনকি বাবার সঙ্গে তেমন ফোনে কথাও বলি না। এমন না যে, বাবাকে ভালোবাসি না।

কিন্তু ওই যে, আমরা মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বা মাকে সবকিছু বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। মায়ের সঙ্গে ছোটকাল থেকে বেশি থাকে তার সন্তানরা। তাই সন্তানদের মায়ের প্রতি আলাদা একটা টান থাকে। তাই সবাই মায়ের সঙ্গে বেশিরভাগ কথা বলে। তাই আমিও মা দিবসটা পালন করতাম।

তবে আমার বাবা আমার জীবনের এক আবেগের এবং এক অনুপ্রেরণার মানুষ। আমার বাবা আমাকে তেমন কিছু কখনো বলেন না। আমার বাবা অনেক পরিশ্রমী একজন মানুষ। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, আমার বাবা কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে কত কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছে। আমাদের চার ভাইয়ের পড়ালেখা খরচ চালিয়েছে। আমার বাবার অনেক কষ্ট হলেও কখনও সেটা প্রকাশ করতেন না। আমার বাবা খুব সহজে সবকিছু সামলিয়ে নিতেন। আমার বাবার একটাই স্বপ্ন আমরা যেন লেখাপড়া শিখে মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠি।

আমাদের খুশির জন্য আমার বাবা রাতের ২-৩টা পর্যন্ত কাজ করেছে। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই, তখন আমার বাবা এতো খুশি হয়েছিলেন, তা বোঝাতে পারবো না। আমার বাবা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তেমন জানে না। কিন্তু আমার বাবা অনেক খুশি আমি ঢাকাতে পড়ালেখা করি।

আমার বাবা এমন একজন মানুষ, যে সব কষ্ট একাই নিতে পছন্দ করেন। আমি যদি কোনো কাজ করতে চাইতাম, তখন বলতেন, ‘তুই করিছ না আমি করব।’ এমনকি আমি যদি আমার বাবার কাছে ৫০০ টাকা চাইতাম, আমার বাবা আমকে ডাবল করে দিতেন। এই যে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা সত্যিই অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। কোথায় পাব 

এ যুগে কেউ দুই টাকা দিলেও পরেরদিন ওই পরিমাণ কথা শুনিয়ে দেয়। কিন্তু বাবা এমন একটা মানুষ যে ছোটবেলা থেকে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পর্যন্ত খরচ চালাচ্ছেন, কখনও না বলেননি। উল্টো আমার বাবা বলেন, ‘যত টাকা লাগবে আমি দিব পড়াশোনার জন্য।’

ছেলেমেয়েদের প্রতি এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কোথায় পাওয়া যায় আমি জানি না। সবাই বলে, বাবা নাকি মাথার উপর এক ছাদ। যে ছাদের নিচে দাঁড়ালে সব ঝড়-ঝাপটা সামাল দেওয়া যায়। আসলে বাবা আমাদের জীবনের একটা ছাদ। যে ছাদের ছত্রছায়ায় আমরা জীবনের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়। যাদের বাবা নাই তারা বুঝে বাবার গুরুত্ব কতটুকু। 

আমার জীবনে বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি। বাবার এই ঋণ কখনও শোধ করতে পারবো কি-না, জানি না। তবে বাবার ঋণ শোধ করতে যাওয়া বোকামি। কারণ সারাজীবন চেষ্টা করলেও তা শোধ করা যাবে না। বাবা এক অমূল্য সম্পদ।

বাবা আমার অনুপ্রেরণার উৎস। যার মুখের দিকে তাকালে আমি সব কষ্ট ভুলে গিয়ে জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে সর্বদা প্রস্তুত থাকি। আমরা সচরাচর বাবাকে নিয়ে তেমন কিছু লিখি না বা বলি না। কিন্তু বাবাকে নিয়ে লিখলে, লেখা কেন জানি শেষ হতে চায় না। সবাই আমার বাবার সুস্থতার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

/মেহেদী/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়