ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

তিন প্রজন্মের মিলনমেলা

নাজমুল হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৪, ১৬ জুন ২০২৪   আপডেট: ১১:১৫, ১৬ জুন ২০২৪
তিন প্রজন্মের মিলনমেলা

এবারের বাবা দিবস কোরবানি ঈদের ঠিক আগের দিন। অন্যান্য বছরগুলোতে কোনও না কোনও কারণে আব্বার সঙ্গে না থাকলেও ঈদের কারণে এবার আষ্টেপৃষ্ঠে রয়ে গেছি। আব্বাকে ঘিরে আমাদের উৎফুল্লতা আরও দিন-দুয়েক আগে থেকেই শুরু। সবাই মূলত কোরবানির ঈদকে টার্গেট করেই একসঙ্গে মিলিত হই। রোজার ঈদে আব্বার আফসোস থাকে, কেননা ওনার সব সন্তান কর্মব্যস্ততার তাগিদে আসতে পারেন না।

আব্বার হাতে এখন অফুরন্ত সময়, গেলো ডিসেম্বরে বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের সফল যবনিকা টানলেন। কোরবানির ঈদের যখন সপ্তাহখানেক বাকি, তখন থেকে আম্মাকে ওনার বলা শুরু, কারা কখন আসতেছে? সারাজীবন কোথাও যেতে বললে আব্বা নিজের কাজের ব্যস্ততা দেখিয়েছেন। সেই আব্বা যেন এখন উল্টো। কিছুই বুঝতে চান না। কাজের দোহায় দিলেই বলেন, ‘তোমরাই চাকরি করো, আর কেউ করে না?’।

আরো পড়ুন:

এবার নাতি-নাতনিসহ আব্বা পরিপূর্ণ। মন খারাপ তো একেবারেই নেই। কে কী খেলো, কোথায় ঘুমাতে গেলো- আব্বা সব খবর রাখতেছেন। আর আম্মা তো আব্বার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। আব্বা-আম্মার আন্তরিকতা চোখের শান্তি দেয়। এখনকার আমাদের সংসারজীবন, আর তাদেরটা যেন রাতদিনের তফাৎ। দুজনের মধ্যে ভালোবাসার মিশেলে এক অভূতপূর্ব শ্রদ্ধাবোধ!

আর একদিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা (১৭ জুন)। একদিকে ঈদ, অন্যদিকে আমার ছেলের প্রথম জন্মদিন। আব্বাকে যখন জানালাম, একগাল হেসে উত্তর দিলেন ‘তাহলে তো আরও ভালো। ঈদের সঙ্গে জন্মদিন পালনও হলো’।

আব্বার শাসন, দূরদর্শীতা নিয়ে এর আগে একবার লিখেছিলাম। আজকের লেখাতে শুধুই তুলে ধরেছি, ওনার স্নেহ আর শিশুসুলভ মনের বাহ্যিকতা। আব্বা এখন নাতি-নাতনিদের বন্ধু, খেলার সাথী। ওনার ছেলেরা যখন কোনও আলোচনা করে, আব্বা তখন বাচ্চার মতো বসে বসে শুনেন। উনি কখনও ছেলেদের কথার বাইরে যাননি। সে আস্থা যেমন উনি রেখেছেন, আমরাও সেভাবে চলার চেষ্টা করেছি।

বাবা দিবসকে কেন্দ্র করে আব্বার অজস্র স্মৃতি মনের সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। কেনই-বা ভাসবে না, আমাদের সব ভালোর সঙ্গে যে আব্বা জড়িত। উনি আমাদের যেমন দেখতে চেয়েছিলেন, তা অনেকাংশেই পূর্ণতা পেয়েছে। সংসারজীবনের শুরু থেকেই তিনি ‘একলা চলো রে’  নীতিতে চলেছেন। আজ পর্যন্ত সেই নীতিতেই আছেন। সমাজব্যবস্থার সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে এখন মনে হয়, আব্বাই সঠিক।

এবারের ঈদ আমার কাছে অধিক আনন্দের। কারণ, আব্বা, আমি আর নিলয় (আমার ছেলে) একসঙ্গে ঈদ করতেছি। গতবারও নিলয় ছিল, তখন মাত্র জন্ম হলো। এবার সে এক বছরের অগ্রগামী শিশু। তিন প্রজন্মের এ মেলবন্ধন আমাকে বেশ নাড়িয়ে দিচ্ছে। দাদাবাড়িতে এসে নিলয়ও বেশ খুশি আর উদ্বেলিত। শহরের ঝঞ্ঝাট ঠেলে সে ফিরেছে প্রাণের নীড়ে। যেখানে আছে তার দাদা-দাদি, চাচা-চাচি মা আর তাকে ঘিরে একঝাঁক ফুল (নিলয়ের বোনরা)।

বাবা দিবসে আজ আমিও বাবা। ছেলের প্রতি বাবাদের তাগিদ আজ আমাকেও ছুঁয়ে যায়। আমাদের বাবারা এসব দিবস-টিবস বুঝেন না। ওসবের ধারও ধারেন না। তারা সন্তানের জন্য নিজেদের সবটুকু উজার করে দিয়েছেন/দিচ্ছেন। হালের বাবা হিসেবে আমারও সে চেষ্টা অব্যাহত আছে। তারপরও, যদি নিজেকে প্রশ্ন করি তাহলে উত্তর আসে, আমার আব্বাই সবচেয়ে সেরা। পিতা হিসেবে আমি আদৌ সেরা হতে পারবো কি না, সেটা সময়ের ওপর ছেড়ে দিলাম।

চলতি বছরের ‘বাবা দিবস’ আমার কাছে যেন ‘তিন প্রজন্মের মিলনমেলা’। সকাল-বিকেল দাদা-নাতির খুনসুঁটির একনিষ্ঠ দর্শক আমি। আমি দাদাকে দেখিনি, মনটা অতিগোপনে কাঁদে। দাদার আদর কী, সেটাও জানি না। তবে, আব্বার স্নেহ দেখলে মনে হয়, হয়তো আমার দাদা আরও সেরা ছিলেন। এ ভালোবাসা সবকিছুর ঊর্ধ্বে, অমূল্য। আমি যুগ যুগ ধরে অপলক দৃষ্টিতে এমন অনিন্দ্য সুন্দর দেখে যেতে চাই। আল্লাহ প্রত্যেকের বাবাকে ভালো ও সুস্থ রাখুক, এটাই দোয়া।

সবাইকে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা, সঙ্গে ঈদ মোবারক।

লেখক: সাংবাদিক

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়