মাটি খাওয়াদের গল্প
তৈয়বুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম
তৈয়বুর রহমান : ‘ছেলেবেলার কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। আমার চাচিকে প্রায়ই কী যেন খেতে দেখতাম। বাইরে গেলে নিজের জন্য তা কিনেও আনতেন।’ কথাগুলো বলছিলেন শিলা নামের একটি মেয়ে। বর্তমানে পড়াশুনা করছেন তিনি ইউনিভার্সিটি অব ফ্রান্সে।
আবার কথা বলা শুরু করেন তিনি : অনেক লোক দেশে ফিরে গিয়ে আবার খাওয়া শুরু করবেন, প্রতিদিন; বাদ যাবে না একদিনও। কেউ কেউ আবার এর উপর নির্ভরশীলও হয়ে পড়েছেন।
ক্যামেরুনের বেশিরভাগ বাজারে আপনি এটি কিনতে পারবেন। নিষিদ্ধ বস্তুর তালিকাতেও এটির নাম নেই। কাওলিন এমন কোনো নতুন মাদ্রকদ্রব্যও নয়, যা লুকিয়ে লুকিয়ে খেতে হয়। আসলে কাওলিন হলো মাটি।
মাটি খাওয়া আমাদের দেশে বিস্ময়কর ঘটনা হতে পারে, কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশে অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা, ক্যামেরুনে তো নিষিদ্ধ নয়-ই। দীর্ঘ একটা ইতিহাসও আছে এর। ঔপনিবেশিক যুগ থেকে দেশের মানুষ খেয়ে আসছে মাটি এবং তা নিয়মিত। ‘আমি আমার সব ছেলেমেয়েকে এটি খেতে বলেছি’- লেখেন ক্যামেরুনের এক লেখক।
মানুষের খাওয়ার জন্য আফ্রিকার বেশিরভাগ বাজারে এটি কিনতে পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ইয়াং নামের এক গবেষকের মতে, শুধু ক্যামেরুনেই নয়, সারা পৃথিবীতেই মাটি খাওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা, ইরান ও নামিবিয়ার কথা উল্লেখ করা যায়। সাধারণত বিষুবীয় অঞ্চলের লোকজনের মধ্যে মাটি খাওয়ার প্রবণতা বেশি। আবার শিশু ও সন্তানসম্ভাবা নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবে বেশি।
বহুলোকের মধ্যে এই মাটি খওয়ার আকাক্সক্ষা অত্যন্ত প্রবল বলে উল্লেখ করে ইয়াং বলেন, ‘মাটি খাওয়া নিয়ে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যা আমরা জানি না বা জানতে পারি না।’ এর দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে ইয়াং নিউ ইয়র্কের বিশিষ্ট এক গায়িকার কথা বলেন। এই গায়িকা মাটি খেতেন গর্ভধারণকালীন সময়ে। তবে তিনি তার মাটি খাওয়ার কথা অতি যত্নের সঙ্গে গোপন রাখতে চাইতেন।
তাঞ্জানিয়ার গ্রামীণ এলাকায় ফিল্ডওয়ার্ক করার সময় একদিন ইয়াং এক নারীর সক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। ইয়াংয়ের মুখেই শোনা যাক কী বলছিলেন ওই নারী। ‘নারীটির বাসায় আমি বসেছিলাম মেঝেতে। এমন সময় তাকে জিজ্ঞেস করি, গর্ভধারণকালীন তিনি কী খেতে পছন্দ করেন। তিনি জবাব দেন, তিনি তার বাড়ির দেয়াল থেকে মাটি নিয়ে মুখে দেন দিনে দুই বার।’
কেনিয়ায় তো বিস্ময়কর সব ব্যাপার-স্যাপার দেখেন ইয়াং। সেখানে প্যাকেটে করে মাটি বিক্রি করা দেখেন তিনি। সেগুলোতে আবার নানা রকম গন্ধ মেশানো থাকে। গোল মরিচের গন্ধ পাওয়া যায় কোনো কোনো প্যাকেট থেকে। কোনো কোনোটি থেকে পাওয়া যায় আবার এলাচের গন্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য তো সাদা মাটির জন্য বিখ্যাত। সেখানকার প্যাকেটে লেখা থাকে ‘অভিনব বস্তু : মানুষের খাওয়ার জন্য নয়’। কিন্তু সকলেই জানেন, কী আছে প্যাকেটে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জুন ২০১৬/তৈয়বুর/রাসেল পারভেজ
রাইজিংবিডি.কম