ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সু চি নোবেল পাওয়ার যোগ্য কিনা?

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১১, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সু চি নোবেল পাওয়ার যোগ্য কিনা?

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি’র এক সময় পরিচয় ছিল ‘গণতন্ত্রকামী নেত্রী’ হিসেবে। আপোসহীন মনোভাবের কারণে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন বিভিন্ন সময়। রাজনীতিতে তার ত্যাগের মহিমা ছিল অনেকের গর্বের কারণ। বিশেষ করে নোবেলজয়ের পর তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনুকরণীয় রাজনীতিক।

সেই অং সান সু চি আজ এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যা ভক্তদের তো বটেই, মানবিক বিশ্বের মানুষকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। আজ বিশ্ববাসীর প্রশ্ন- মানবাধিকার রক্ষায় যে মানুষটি পেয়েছিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার, আজ তিনিই মানবাধিকার হরণে মুখ বুজে থাকেন কী করে? এমনকি এই ঘৃণ্য কাজের পক্ষে সাফাই গাইতে দ্বিধা করেন না! বলা যায়, রোহিঙ্গা গণহত্যার কারণে তাকে নিয়ে বিশ্বের মোহভঙ্গ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায় অনেকে মন্তব্য করেন: সু চি’র নোবেল ফিরিয়ে নেয়া হোক। যদিও এমন কোনো নিয়ম নেই, ফলে আশঙ্কাও নেই। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসা যে অনেকেই ফিরিয়ে নিয়েছেন- একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মিয়ানমারের ক্ষমতাশীল দলের এই নেত্রী নিজ দেশেও বিতর্কিত হয়ে উঠেছেন। তার ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছে দেশটির তরুণ সমাজ। এ বছরের জুনে ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে দীর্ঘ পাঁচ দশকের সামরিক শাসনের পর ২০১৫ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে সু চির নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল। ২০১৫ সালে নির্বাচনের আগে জনসমক্ষে সু চির বিরুদ্ধে কথা তেমন শোনা যেত না। কিন্তু তাঁর দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার চার বছরের মাথায় সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে! গণতন্ত্রের আশা নিয়ে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী সু চিকে ক্ষমতায় আনলেও এখন সেই গণতন্ত্র নিয়েই ভয় ধরেছে দেশটির তরুণদের মনে। কারণ সামরিক বাহিনী দেশ শাসনের সময় যেভাবে ভিন্নমত পোষণকারীদের দমন করত, সুচির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার সেই নীতিতে খুব একটা পরিবর্তন আনেনি। সরকারের সমালোচনা করলে সু চির সরকার জনগণকে বিচারের মুখোমুখিও করেছে।

ডয়েচে ভেলেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিয়ানমারের এক শিক্ষার্থী বলেছেন, ‘আমি জানি, আমার বাবা-মা সু চির কাছ থেকে অনেক পরিবর্তন আশা করেছিলেন। কিন্তু আমরা যেটা আশা করেছিলাম, এখন সেখান থেকে বহুদূরে অবস্থান করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘সু চি আমাদের বহু আশা দিয়েছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ, বিশেষ করে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী কিছুই পায়নি। সু চি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু এখন ভাবি, আসলে তিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য কিনা?’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সু চিকে নিয়ে দেশবাসীর মোহভঙ্গ হলেও এখনো তিনি তাঁদের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প। তবে অতীতে তাঁর প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন জনগণ দিয়ে থাকলেও এখন সেই আস্থা আর নেই।

জাতিগত শুদ্ধির নামে মিয়ানমারের সামরিক শাসকেরা রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ আর দেশছাড়া করার মতো জঘন্য অপরাধ করেছে। এই অপরাধে গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মানবতাবিরোধী আর গণহত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেছে। বর্তমানে মামলার শুনানি চলছে নেদারল্যান্ডসের হেগে। গতকাল শুনানি চলাকালে সু চি সেনা অভিযানে নয় বরং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গারা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি করেন। সু চি তার বক্তব্যে রাখাইনে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

 

ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়