ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

হিজড়াদের কি মা থাকে না?

গোলাম হায়দার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫১, ১০ অক্টোবর ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হিজড়াদের কি মা থাকে না?

হিজড়া (ফাইল ফটো)

গোলাম হায়দার, বরগুনা : ‘যখন একটু বড় হয়ে বুঝতে শিখলাম তখন দেখলাম মা বাবা আমাকে নিয়ে অনেক কষ্ট পায়, মানুষ তাদের লাঞ্ছনা দেয়, পাড়া প্রতিবেশীরা অনেক বাজে কথা বলে। এগুলো বুঝতে পেরে সবাইকে ছেড়ে আমি বরগুনা থেকে চট্টগ্রাম চলে যাই।’

 

‘প্রথমে কিছুই জানতাম না আসলে হিজড়া হলে কীভাবে দুবেলা দুমুঠো খাবার সংগ্রহ করতে হয়। তবুও বহু লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করে সেখানে প্রায় পাঁচ বছর বহু কষ্টে দিন কাটিয়েছি। পরে চলে আসলাম ঢাকায়। সেখানেও কোনো মতে দুবছর কাটিয়ে এখন নিজের জন্ম স্থান বরগুনার পাথরঘাটায় থাকছি।’

 

‘সারাদিন অন্য হিজড়াদের সঙ্গে থাকলেও রাতে থাকার জন্য নিজে একটা ফ্ল্যাটবাসা ভাড়া করে থাকি। প্রায় ৪ বছর যাবত পাথরঘাটায় বাসা ভাড়া করে থাকলেও আজ পর্যন্ত আমার মা কোনো দিন আমার বাসায় আসেনি। হিজড়া হলে তাদের মা বুঝি পর হয়ে যায়? হিজড়াদের কি মা থাকে না?’

 

এ সব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ‘আশা হাওলাদার’ ডাক তার নাম আশা। কেঁদে কেঁদে বলতে থাকে ‘আমার মা কী আমার কাছে একটা দিনের জন্যও আসতে পারে না? আমাকে সেই ছোট বেলার মত ভালবেসে আদর করতে পারে না মা?’

 

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার তালতলা গ্রামের জসিম হাওলাদার ও চম্পা বেগমের সন্তান আশা। প্রায় ১৩ বছর আগে আশার বাবা মারা যায়। শুধু আশাই নয় বুক চাপা কষ্টো নিয়ে বেঁচে আছে দেশের হাজারো হিজড়ারা। বরগুনার অন্য সব হিজড়াদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে তাদের জীবনের সব কঠিন কষ্টের দিনগুলোর কথা।

 

পুরুষ নাকি নারী? আসলে হিজড়া নামেই এরা পরিচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাজে এদের দেখা হয় ভিন্ন দৃষ্টিতে। বঞ্চনা, ঘৃণা আর কটূক্তি উপেক্ষা করে পেটের তাগিদে তাদের উপার্জনও করতে হয় অনেকটা ভিন্ন পথে। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, শিশু অবস্থাতেই এদের অনেককে ফিরিয়ে আনা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে।

 

সমাজে হিজড়া নামে পরিচিত এই মানুষগুলো যখন বুঝতে পারে তাদের বাবা মা ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদের জন্ম পরিচয় দিতে বিব্রত বোধ করছেন। তখন বাধ্য হয়েই পরিবারের বাইরে সমাজের অন্য হিজড়াদের সঙ্গে বড় হতে হয় তাদের।

 

শিক্ষা ক্ষেত্রে নেই তাদের কোনো সুযোগ, বিভিন্ন কাজে নেওয়ার ক্ষেত্রে সবার মধ্যে রয়েছে অনীহা। তাই পেটের তাগিদে সমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কখনো কখনো জোর পূর্বক নাচ গান করেন তারা। বিয়ে, সন্তান এবং সংসার জীবন তাদের কাছে স্বপ্ন দেখার মতো। তাই অন্যের সন্তান হওয়ার খবরে ছুটে যান সবাই। দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে তোলেন টাকা।

 

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে গিয়ে যানা যায়, জেলায় হিজড়া প্রতিবন্ধীর সঠিক সংখ্যা কত তার কোনো তথ্যই নেই তাদের কাছে। তবে জরিপ কাজ চলছে বলে জানান বরগুনা জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মন্নান। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, কতজন হিজড়া আছে তা জানার জন্য জরিপ প্রক্রিয়া চলছে। জরিপ শেষ হলে আমরা তা সরকারের কাছে পাঠাব।

 

হরমোনের মাত্রা নির্ণয় করে থেরাপির মাধ্যমে হিজড়াদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার একটি সুযোগ থাকলেও তা সবার বেলায় সম্ভব নয় বলে জানান বরগুনা জেলা সিভিল সার্জন মো. আনিসুর রহমান।

 

তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল পারস্পেকটিভে হরমোন লেভেল যদি কাউকে অ্যালাউ করে, তাহলে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে সব ক্ষেত্রে নয়।’

 

মাঠ পর্যায়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর হিসেব মতে বর্তমানে বরগুনা জেলায় আড়াইশর বেশি হিজড়া রয়েছেন।

 

এদের সামাজিকভাবে অন্যসব মানুষদের মত সকল ক্ষেত্রে অগ্রধিকার দেওয়া হবে এমনটাই প্রত্যাশা হিজড়াদের।



রাইজিংবিডি/১০ অক্টোবর ২০১৪/নওশের/সনি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়