ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সুই-সুতোয় ১৬০০ প্রতিকৃতি

নাসিফ শুভ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০১, ৪ মার্চ ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুই-সুতোয় ১৬০০ প্রতিকৃতি

সূচিশিল্পী মৌলুদা খানম

নাসিফ শুভ : বাংলাদেশে সূচিশিল্পের ইতিহাস অনেক বছরের পুরোনো। যুগে যুগে চর্চা হয়ে আসছে বাঙালির সুই-সুতোর মেলবন্ধনের গল্প। আগে এমন একটা সময় ছিল যখন বাঙালি মেয়েরা কাপড়ের ওপর বিভিন্ন ধরনের ফুল, গাছপালা, পশু-পাখি প্রভৃতির নকশা সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলত তাদের অবসর সময়ে। এ সমস্ত নকশা দিয়ে কখনোবা হাতপাখা, কখনো নকশিকাঁথা আবার কখনো ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহার করা হতো। যার ছোঁয়া হয়তো এখনো অনেকের গ্রামের বাড়িতে গেলে দেখা যাবে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। যান্ত্রিকতার এই দিনে মানুষের শখের বিষয়গুলো আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

 

তবে এত কিছুর পরও স্রোতের ঠিক উল্টো দিকে যেন চলছেন মৌলুদা খানম। অসুস্থ শরীর নিয়ে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন এই সূচিশিল্পী। সেই এগারো বছর বয়স থেকে মৌলুদা সুই-সুতোর সঙ্গে সখ্য গড়েছেন। মূলত শখের বশেই সুই-সুতা নিয়ে তার পথচলা। শুরুর দিকে তিনি গ্রামবাংলার বিভিন্ন দৃশ্যসহ নানা ধরনের নকশা তৈরি করতেন। নিজে কাজ করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বেশ কয়েক জায়গায়। পরবর্তীকালে তিনি কাপড়ের ওপর মানুষের প্রতিকৃতি আঁকা শুরু করেন। বর্তমানে তার নিজ হাতে ফুটিয়ে তোলা মানুষের প্রতিকৃতির সংখ্যা ১ হাজার ৬০০টি। এই গুণী শিল্পী বিশ্ব সাহিত্যিক, কবি, চিত্রজগতের অভিনয় শিল্পীসহ অনেকের প্রতিকৃতি সুই-সুতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, মহাত্মা গান্ধী, কবি নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শাহরুখ খান, আমির খান প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইতিমধ্যে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের আঁকা ছবিটি জাতীয় জাদুঘর এবং মহাত্মা গান্ধীর ছবিটি ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (ভারতীয় হাইকমিশন) দান করেছেন।

 

মৌলুদা তার ঘর নিজের তৈরি করা সূচিশিল্প দিয়ে সাজিয়েছেন। সুই-সুতা ছাড়া তিনি একদিনও চিন্তা করতে পারেন না। চোখে আগের মতো দেখতে পান না। তবু তিনি থামেননি। সুই-সুতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তার আপন মহিমায়। জাতীয় জাদুঘর মৌলুদার সূচিশিল্প দিয়ে ২০০৯ সালে বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিল। প্রদর্শনীতে আগত দর্শনার্থীরা তার শিল্পকর্ম দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। যার স্বীকৃতি স্বরূপ সে বছর তিনি ‘অনন্যা শীর্ষ ১০’ সম্মাননা পান।

 

সুই-সুতার মানুষ মৌলুদা আশাবাদী একদিন বাংলাদেশে সূচিশিল্পের বিস্তত প্রসার ঘটবে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের আদলে সূচিশিল্পের জন্য ইনস্টিটিউটের স্বপ্ন দেখেন মৌলুদা। যেখানে সূচিশিল্পের কারিগরির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও সূচিশিল্পের জন্য কিছু করতে চান তিনি। কিন্তু মৌলুদা আফসোস করলেন তার সাধ ও সাধ্যের বিস্তর ফারাক নিয়ে। স্বামী মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। দুই ছেলেদের কষ্ট করে মানুষ করেছেন। যথাযথ অর্থের অভাবে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কিছু করতে পারছেন না মৌলুদা। তবে সহযোগিতা পেলে সূচিশিল্পের জন্য কিছু করার ইচ্ছে আছে তার।

 

২০০৯ সালের পর আর কোনো প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পারেননি মৌলুদা। একা হাতে ঠিকমতো যত্ন করতে পারছেন না নিজের তৈরি করা ছবিগুলো। এরই মধ্যে বেশ কিছু ছবি নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে মৌলুদা বেশ দুঃখ করেছেন।

 

এত কিছুর মাঝেও মৌলুদার একটি মহৎ উদ্দেশ্য আছে। সেটি হচ্ছে- তিনি বেশ আয়োজন করে একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে চান। সেই প্রদর্শনী থেকে অবিক্রীত ছবিগুলো তিনি জাতীয় জাদুঘরে দান করতে চান। আমরা কি পারি না তার এই মহৎ উদ্দেশ্যের সারথি হতে?

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ মার্চ ২০১৬/সাইফুল /এএন  

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়