ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

যে বেবুন রেলে চাকরি করতো

জয়দীপ দে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১২:৫৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
যে বেবুন রেলে চাকরি করতো

১৮ শতকের শেষ দিকের ঘটনা। দক্ষিণ আফ্রিকার বন্দরনগরী কেপ টাউনের ছোট্ট একটা রেল স্টেশন- ইউটেনহাগ। এটি মূলত জংশন। এখানে এসে ট্রেনগুলো বিভিন্ন দিকে যায়। বিশেষ করে কয়লার খনিগুলোতে। ট্রেনের পথ ঠিক করে দেওয়ার কাজ হয় স্টেশনের সিগন্যাল বক্স থেকে। সেখানে অনেকগুলো লিভার থাকে। সঠিক লিভার টেনে নিচে নামিয়ে দিয়ে ট্রেন কোন পথে যাবে ঠিক করে দিতে হয়। আবার ট্রেন ক্রসিং অতিক্রম করলে লিভার টেনে তুলে দিতে হয়। সাধারণত এসব কাজ রেলের সিগন্যাল ম্যানরা করেন। কিন্তু ইউটেনহাগ স্টেশনে কাজটি কোনো মানুষ করতো না। করতো এক বেবুন!

এক ভদ্রমহিলা বিষয়টি জানান রেলওয়ের কর্মকর্তাকে। তারা শুনে তাজ্জব! কারণ কাজটি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য ভুল হলে প্রাণহানীর আশঙ্কা তো আছেই। ডাকা হলো স্টেশনের সিগন্যাল ম্যান জেমস ওয়াইডকে। অবশ্য এ নামে তাকে কেউ চেনেন না। সবাই চেনেন ‘জাম্পার’ নামে। সে খুব চঞ্চল প্রকৃতির মানুষ। ট্রেন স্টেশনে ভিড়লে তার কাজ ছিল এক কামরা থেকে আরেক কামরায় লাফিয়ে বেড়ানো। তাই তার নাম হয়ে যায় জাম্পার। এভাবে লাফালাফি করতে করতে একদিন চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে দুই পা খোয়া যায় তার। ফলে লাফ দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও জাম্পার নামটা থেকে যায়।

জাম্পার কাঠের দুটো নকল পায়ের উপর ভর দিয়ে রেলের ইনকোয়ারি কমিটির সামনে আসে। সে এককথায় অভিযোগ স্বীকার করে। সে জানায়, পা দুটো কাটা পড়ার পর তার পক্ষে সিগন্যাল লিভার তোলা সম্ভব হচ্ছিল না। একদিন সে উইটেনহাগ বাজারে দেখে একটা বেবুন গরুর গাড়ি চালাচ্ছে। কোনো ঝামেলা ছাড়াই বেবুনটি গাড়ি চালাচ্ছিল। এটি দেখেই তার মাথায় নতুন একটা বুদ্ধি খেলে যায়। জাম্পার ছুটে যান সেই বেবুনের মালিকের কাছে। মালিক অবশ্য কিছুতেই তার প্রিয় পোষা প্রাণীটিকে দিতে রাজি হচ্ছিল না। অনেক কাকুতি-মিনতিতে পরে কাজ হয়। তারপর সে বেবুনটিকে তার কাছে নিয়ে আসে, নিজ হাতে কাজ শেখায়। বেবুনটি এখন ট্রেনের হুইসেল শুনলেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে। জাম্পারের কাজ হলো আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া কোন লিভারটা তুলবে এবং কোনটা নামাবে। দেখিয়ে দিলে বাকি কাজ বেবুন করে ফেলে।

রেলের অফিসাররা জাম্পারের সব কথাই শুনলেন। কিন্তু কাজটি যে খুব ঝুঁকিপূর্ণ তাতে সন্দেহ নেই। পশুকে দিয়ে সিগন্যাল দেওয়া- অবিশ্বাস্য!

এরপর সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগে জাম্পারের চাকরি চলে যায়। জাম্পার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে আপিল করে- তার শারীরিক অক্ষমতার কথা বিবেচনা করে বেবুনটিকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হোক। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে। এবার একটি ইনকোয়ারি টিম পাঠানো হয় জ্যাক নামের সেই বেবুনের দক্ষতা পরীক্ষা করার জন্য। টিম জ্যাকের দক্ষতা দেখে রীতিমতো বিস্মিত। জ্যাকের দক্ষতা অভাবনীয়! সে ট্রেনের সিগন্যাল শুনেই সঠিক পয়েন্ট তৈরি করে দিতে পারে। এ জন্য জাম্পার বা কারো সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে না। শুধু তাই নয়, সে আউটার সিগন্যাল হোম সিগন্যালের পার্থক্য বোঝে। নিজেই সিগন্যাল পরিচালনা করতে পারে। জ্যাকের দক্ষতায় সেবার জাম্পারের চাকরি টিকে যায়। শুধু তাই নয়, জ্যাকের নাম ওঠে রেলের খাতায়। রেলের ইতিহাসে প্রথম কোনো পশু চাকরিও পায়! জ্যাক ৯ বছর রেলের চাকরি করেছিল। ১৮৯০ সালে জ্যাক যক্ষায় মারা যায়।

সূত্র: ststworld

ঢাকা/তারা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়