ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

হৃদয় সিক্ত করা ৭ প্রেমকাহিনি

খালেদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০৮:১৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
হৃদয় সিক্ত করা ৭ প্রেমকাহিনি

‘কারো প্রেমে পড়লে তুমি ঘুমাতে পারবে না, কারণ তখন সহসাই আবিষ্কার করবে বাস্তব কল্পনার চাইতেও সুন্দর।’- ড. সিউস।

ভালোবাসা পবিত্র জিনিস এবং কিংবদন্তি প্রেমকাহিনিগুলো আমাদেরকে এমন অনুভূতি দেয়, যা আমরা আমাদের ব্যক্তিজীবনে পেতে চাই। আমরা সকলেই রোমিও-জুলিয়েটের প্রেমের উপাখ্যান সম্পর্কে জানি। কিন্তু হৃদয়ছোঁয়া আরো অনেক প্রেমকাহিনি আছে, যেগুলোও আপনাকে আবেগপ্রবণ করে তুলবে। এমনই ৭টি প্রেমের আখ্যান নিয়ে আমাদের আজকের লেখাটি।

* দশরথ মাঝি- ভালোবাসার জন্য যিনি পাহাড় ভেঙেছিলেন
আমি তোমার জন্য পাহাড় ভেঙে ফেলব। জীবনে যারা কখনো প্রেম করেছেন, তারা সঙ্গীর কাছ থেকে এমন কথা একবার হলেও শুনেছেন, অথবা নিজেই হয়তো সঙ্গীকে বলেছেন। ‘পাহাড় মানব’ হিসেবে পরিচিত দশরথ মাঝি এ কাজটি বাস্তবে করে দেখিয়েছেন। তিনি তার ভালোবাসার জন্য পাহাড় কেটে দেখিয়েছেন।

দশরথ মাঝি। ভারতের ছোট্ট গ্রাম গেহলর এর এক গরিব লোক। পাহাড়ের খাড়ি পার করে ডাক্তারের কাছে পৌঁছতে না পারার কারণে তার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। এরপর তিনি দৃঢ় মনোবল নিয়ে একটানা ২২ বছর যাবত পাথর কাটতে থাকেন এবং পাহাড়ের মধ্য দিয়ে ৪০০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট চওড়া রাস্তা তৈরি করে গ্রামটিকে নিকটবর্তী শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। অনেকে তাকে সেসময় পাগল বলে আখ্যায়িত করেছে। কিন্তু তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল- গ্রামের মানুষদেরকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের বাঁধা দূর করা, যেন আর কাউকে তার মতো প্রিয়জন হারাতে না হয়।  

* ফয়জুল হাসান কাদরী- যিনি দ্বিতীয় তাজমহল নির্মাণ করেছেন
১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ মোগল সম্রাট শাহজাহান তাজমহল নির্মাণ করেন। যা আজও পৃথিবীর বুকে ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শণ স্বরূপ দাঁড়িয়ে আছে। ৭৭ বছর বয়সী ভারতীয় নাগরিক ফয়জুল হাসান কাদরী তার স্ত্রী তাজাম্মুলি বেগমের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘ভালোবাসার সৌধ’ নির্মাণ করেছেন উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলায়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বেগমকে বিয়ে করেন ফয়জুল এবং তাকে উর্দু পড়তে ও লিখতে শেখান। এই দম্পত্তি ছিলেন নিঃসন্তান। বেগমের মৃত্যুর পর ফয়জুল তাকে ভুলে যাবে ভেবে সে সবসময় দুঃখ পেতো। তার মৃত্যুর পর কাদরি একটি সমাধি নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দেন যাতে যুগ যুগ ধরে সবাই তাকে মনে রাখে।  

ফয়জুল বলেন, ‘আমরা ৫৮ বছর যাবত একসঙ্গে ছিলাম এবং সময়ের সঙ্গে ভালোবাসা বেড়েছে। এখন সে চলে গেছে কিন্তু সে সর্বদা আমার চিন্তা-চেতনায় বেঁচে আছে।’ ২০১১ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তাজাম্মুলির মৃত্যু হয়।  

* চাদিল দেফি ও সারিন্যা কামসুক- তাদের ভালোবাসা মৃত্যুকে অতিক্রম করেছে
চাদিলের পড়াশোনা শেষ হলেই থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের তরুণ-তরুণী চাদিল দেফি ও সারিন্যা কামসুকের বিয়ের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তার জীবনকে একটি সংবাদই এলোমেলো করে দিয়ে যায়। বিয়ের মাত্র দু’দিন আগে এক দুর্ঘটনায় সারিন্যার মৃত্যুর খবর পায় চাদিল। সারিন্যার শেষকৃত্য ও বিবাহ অনুষ্ঠান একইসঙ্গে হয়। চাদিল তার মৃত প্রেমিকাকে বিয়ে করেন। চাদিল তার প্রেমিকার হাতে আংটি পরিয়ে দেয়।  

* ডেভিড হার্ড ও এভ্রিল ক্যাটো- চিঠি তাদের এক করেছে
মানুষ সাধারাণত ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে চিঠি চালাচালি করে। কিন্তু এই দম্পত্তি চিঠি চালাচালির মাধ্যমে প্রেম করেছেন ও একে অপরকে জড়িয়েছেন নিজেদের জীবনের সঙ্গে। তাদের বিয়ের দিনই তাদের প্রথম দেখা হয়। এভাবেই ডেভিড হার্ড ও এভ্রিল ক্যাটো এক হোন। 

১৯০৭ সালে ডেভিড হার্ড নিউ ইয়র্কে স্থানান্তরিত হন এবং তখন থেকেই তিনি এক অপরিচিতা ক্যারিবিয়ান নারী এভ্রিলকে চিঠি লিখতে থাকেন, যাকে জীবনে কখনো দেখেননি। দুজনেই চিঠি চালাচালি করতে থাকেন এবং ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন। ১ বছর পর ডেভিড বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং ১৯১৪ সালে জ্যামাইকাতে তারা একে অপরকে বিয়ে করেন। ওইদিনই তাদের প্রথম দেখা হয়।  

* কার্ট ক্লিন ও গার্দা উইজমান- যুদ্ধদিনের ভালোবাসা
গার্দা উইজমান একজন পোলিশ বংশোদ্ভুত আমেরিকান লেখিকা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন নাৎসীদের দ্বারা ধৃত হয়ে ৪০০০ ইহুদি নারীর সঙ্গে তিনিও কয়েক মাসব্যপী মার্চ করতে বাধ্য হন। তিনি পরিবারের ৬৫ জন সদস্যকে হারান এবং ওই মার্চে তিনিসহ মাত্র ১২০ জন নারী জীবিত থাকে। তাদেরকে একটি ফ্যাক্টরিতে রাখা হয় যৎসামান্য খাবার দিয়ে। মার্কিন সেনাবাহিনীর এক লেফটেন্যান্ট কার্ট ক্লিন তাকে উদ্ধার করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৪৫ সালে এই যুগল বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন।  

* শাহ হুসাইন ও মধুলাল- মৃত্যুর পরেও দুই প্রেমিক একসঙ্গে
পাঞ্জাবী সুফি কবি বা সুফি সাধক শাহ হুসাইন প্রেমে পড়েন এক ব্রাহ্মণ কিশোর মধু লালের। যদিও এই শতাব্দীর পূর্বে পৃথিবীর কোথাও গে ম্যারেজ এর অনুমোদন ছিল না, তারা একে অপরের প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করার সাহস দেখায়। এমনকি সেটি ছিল পাকিস্তানের মতো মুসলিম দেশে। 

তাদের দুজনের নামকে একত্রে মিশিয়ে দুজনকে এক হিসেবে ‘মধু লাল হোসেন’ নামে সম্বোধন করা হয়। প্রতি বছর তাদের মাজারে ‘মেলা চিরঘান’ এ হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে তাদেরকে স্মরণ করে। পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে দুই প্রেমিককে।

* এনা ও বরিস- ৬০ বছর পর পুনরায় একত্রিত
রাশিয়ান দম্পত্তি এনা ও বরিস বিয়ের পর মাত্র ৩ দিন এক ছাদের নিচে ছিলেন। এরপর তাঁ বরিসকে বাধ্যতামূলকভাবে রেড আর্মিতে যোগ দিতে হয়। এনার পরিবার নির্বাসিত হয়। ফলে তারা দুজন সব যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে।  
৬০ বছর পর সাইবেরিয়ার এক রাস্তায় গাড়িতে যাওয়ার সময় এনা বরিসকে দেখতে পায় এবং সে কিছুতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। এরপর এই দম্পত্তি পুনরায় মিলিত হয় এবং তাদের ভালোবাসা আবার প্রস্ফুটিত হয়।

ঢাকা/ফিরোজ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়