ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সেহরি বরকতের খাবার

মুফতী মাহফূযুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ১৬ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ০৮:৫৬, ১৬ এপ্রিল ২০২১
সেহরি বরকতের খাবার

সেহরি শব্দটি আরবি ‘সাহারুন’ থেকে পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে। আরবি ভাষায় সাহারুন বলা হয় রাতের শেষাংশকে। রাতের শেষ ভাগে রোজা থাকার উদ্দেশ্যে যে খাবার গ্রহণ করা হয় তা-ই বাংলাভাষীদের কাছে ‘সেহরি’ নামে পরিচিত। আরবি ‘সেহরুন’ শব্দের অর্থ যাদু। আর ‘সাহারুন’ শব্দের অর্থ ফুসফুস হলেও সেহরি শব্দের অর্থ খোঁজার জন্য সেদিকে তাকানোর সুযোগ নেই। রোজার উদ্দেশ্যে শেষ রাতে গ্রহণ করা খাবার বুঝানোর জন্য যুগ যুগ ধরে বাংলাভাষীরা সেহরি শব্দটি ব্যবহার করে আসছে। যা এখন বাংলাভাষার শব্দভাণ্ডারে নিজস্ব স্থান শক্তভাবেই দখল করে নিয়েছে।

সেহরি খাওয়া রোজার জন্য অপরিহার্য না হলেও ফজীলত ও বরকতের অবশ্যই। সেহরি না খেলেও রোজা হবে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরি বর্জন করা কাম্য নয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আহলে কিতাবের রোজা আর আমাদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সেহরি খাওয়া। -মুসলিম

তিনি আরো নির্দেশ দিয়েছেন: তোমরা সেহরি খাও। কারণ সেহরি বরকতের খাবার। -বুখারি : ১৯২৩

তিনি আরো বলেছেন: তোমরা সেহরি খেয়ে রোজা রাখার জন্য সাহায্য গ্রহণ করো। -সহিহ ইবনে খুযায়মা

এসব হাদিস থেকে স্পষ্ট হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরি না খেয়ে রোজা রাখলে একদিকে অনেক বরকত থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখা হয়, অপর দিকে এ রোজা হয়ে যায় ইহুদি-খ্রিষ্টানদের রোজার সাদৃশ্য। তবে সেহরিতে আপনি কী খাবেন, কতটুকু খাবেন তা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্ধারিত করে দেননি। তা একান্তই ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাস, সামর্থ, রুচি ও দৈহিক সামর্থ বা সুখ-অসুখের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আপনার শরীরের সঠিক প্রয়োজন বুঝে আপনার সামর্থ অনুপাতে আপনি সেহরি খাবেন।

সেহরির খাবারগুলো একদিকে হবে হালাল উপার্জনের, অপর দিকে তা হবে স্বাস্থ্যকর। হারাম খাবার খেয়ে নিজের দেহকে পরকালে জাহান্নামে জ্বালাবেন না। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নিজের দেহকে ইহকালে রোগের যন্ত্রণা দেবেন না।

আপনার যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার গ্রহণের সময় না থাকে বা সামর্থ না থাকে তাহলে রোজার উদ্দেশ্যে শুধু পানি হলেও পান করে নিন। অথবা খুবই সামান্য হলেও কিছু খেয়ে নিন। এতে আপনি সেহরি খাওয়ার বরকতসমূহ লাভ করবেন। এবং আপনার রোজা হবে মুসলমানের রোজা।

হাদিসে আরো আছে: তোমরা সেহরি খাও, যদিও তা এক ঢোক পানি হয়। আরেক হাদিসে আছে, যদিও তা একটা খেজুর বা কিশমিশের দানা হয়।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: সেহরির উত্তম দ্রব্য খেজুর। সুতরাং আপনি শুধু পানি আর খেজুর দিয়েই সেহরি খেতে পারেন। অথবা রুচিকর ও স্বাস্থ্যকর অন্যান্য খাবারের সঙ্গে সেহরিতে সুন্নত মনে করে ২/১টি খেজুর খেতে পারেন।

সাহাবি যায়দ ইবনে সাবিত বলেন, আমরা রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সেহেরি খেতাম, তারপর নামাজ শুরু করতাম। কোনো একজন তাকে জিজ্ঞাসা  করল, সেহরি ও ফজরের নামাজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কতটুকু? তিনি বলেন, ৫০ আয়াত।

কুরআনের ৫০ আয়াত তিলাওয়াত করতে সাধারণভাবে সময় লাগে প্রায় ১৫/২০ মিনিট। এ হাদিসের আলোকেই সাহাবাগণ দেরি করে সময়ের শেষ ভাগে সেহরি খেতেন।

তবে মনে রাখতে হবে, সেহরির শেষ সময় কুরআন-হাদীসে নির্ধারিত আছে। যা অতিক্রম করলে রোজা শুদ্ধ হবে না। আকাশ দেখে সরাসরি সময় বুঝতে পারা সর্বসাধারণের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সর্বসাধারণের জন্য এ ক্ষেত্রে অপরিহার্য আবহাওয়াবিদ ও আলেমদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মান্য করা। অনেকেই ফজরের আজান পর্যন্ত সেহেরি খেয়ে থাকেন, যা রীতিমতো ভুল। তা রোজা নষ্ট করে দেয়। কেননা ফজরের আজান দেওয়া হয় সেহরির সময় শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরে। তাই সময় জেনে সময়ের মধ্যেই সেহরি খাবেন। ইবনে হিব্বানের এক বর্ণনায় আছে, যারা সেহরি খান, মহান আল্লাহ্ তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য মাগফেরাতের প্রার্থনা করেন।

* কুরআনের মাসে ফিরে আসুন কুরআনের ছায়ায়

* শয়তানকে বন্দি করা হয়েছে মাহে রমজানে

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়