ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

হ‌ুমায়ূন আহমেদের প্রতি অতল শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ১৮:১৩, ১৯ জুলাই ২০২১   আপডেট: ০৯:৪৮, ২০ জুলাই ২০২১
হ‌ুমায়ূন আহমেদের প্রতি অতল শ্রদ্ধা

নন্দিত কথাসাহিত্যিক, তুমুল জনপ্রিয় নাট্যকার, সফল চলচ্চিত্রকার হ‌ুমায়ূন আহমেদের আজ নবম প্রয়াণ দিবস। তার প্রতি অতল শ্রদ্ধা। আমেরিকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মারা যান বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিক। কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

আমি যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তখন হ‌ুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে পরিচয়। যদিও অক্ষরে পরিচয় হয়েছিল আরো আগেই। তার ‘নন্দিত নরকে’র মাধ্যমে। যাপিত জীবনের কথা প্রকাশে তিনি ছিলেন অনন্য-অসাধারণ। 

তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ‘স্রোত’ নামে একটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলি। আমার এ আয়োজনে কয়েকজন বন্ধু পেয়েছিলাম। কলেজে সেই সময়ে ওয়াল ম্যাগাজিন, কবিতা, প্রবন্ধের ছোট ছোট প্রকাশনা তখন দারুণ সাড়া ফেলেছিল। এরই মধ্যে ১৯৮৯ সনের নতুন ছাত্রছাত্রীদের জন্য নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। হঠাৎ করেই মনে হলো হ‌ুমায়ূন আহমেদকে অতিথি করে আনবো। একদিন সকালে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক বন্ধুর মাধ্যমে হ‌ুমায়ূন স্যারের রসায়ন ক্লাসে ঢুকে পড়ি। শুধু তার সঙ্গে কথা বলে অতিথি করার জন্য আমি স্যারের তিনটি ক্লাস করেছিলাম। ক্লাস শেষ হলে স্যারের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে তাকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। স্যার প্রথমে রাজী হননি। কারণ তিনি কখনো প্রধান অতিথি হননি... ইত্যাদি।

আরেক দিন তার সঙ্গে দেখা করি। তাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি। তিনি বাসায় যেতে বললেন। আমি তার বাসায়ও গিয়েছিলাম। তাকে রাজি করিয়েছিলাম। অবশেষে তিনি এসেছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সবুজ ক্যাম্পাসে।

এক বিকেলে আমি আমার বন্ধু তুষার, রুমিসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে তার বাসায় যাই। তিনি তখন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রোভোস্ট। হ‌ুমায়ূন স্যারের  
বাসার নিচে গিয়ে দেখি ব্যালকনিতে তার ছোট ছোট মেয়েরা নিজেদের মধ্যে গল্প করছে। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুটি নিচ থেকে তার মেয়েদেরকে জানালো আমাদের কথা। কিছুক্ষণ পরেই আমরা উপরে যাওয়ার সুযোগ পেলাম। দরজা খুলেই একজন নার্ভাস হ‌ুমায়ূনকে আবিষ্কার করলাম। আমাদের কোথায় বসতে দেবেন- ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। সামান্য কুশল বিনিময়ের পরেই বললাম আমাদের আসার কারণ। তিনি রাজী হলেন প্রধান অতিথি হতে আমাদের অনুষ্ঠানে। কথা হলো অনুষ্ঠানের দিন তাকে আনতে গাড়ি পাঠাতে হবে। তখনো হ‌ুমায়ূন আহমেদের গাড়ি ছিল না।

১৯৮৯ সালের ৬ জুলাই ব্যাচ-৪৬-এর বরণ অনুষ্ঠানে ‘স্রোত’ সভাপতি হিসেবে মঞ্চে আমাকে দেখতে পাচ্ছেন নিশ্চয়। আমার বন্ধু আব্দুন নূর তুষার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করছে। এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ওই সময়ের প্রখ্যাত শর্টফিল্ম পরিচালক জনাব মোরশেদুল ইসলাম। সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠান হলেও বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১নং গ্যালারিতে ‘সূচনা’ ছবিটি দেখানো হয়। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতায় হ‌ুমায়ূন আহমেদ তার সম্মোহনী মায়াবি বক্তৃতায় সবার মন জয় করে নেন। যদিও বক্তৃতার বিষয় ছিল মূলত তৎকালীন বিটিভিতে প্রচারিত ‘বহুব্রীহি’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের বিশ্লেষণ।

তখনো তিনি আকাশচুম্বী জনপ্রিয় হয়ে ওঠেননি। তবু তার গল্প বলার ধরন আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। এরপর আরো কয়েকবার তার সঙ্গে আমার দেখা-কথা হয়েছিল। তবে তার সঙ্গে শেষবার যখন আমার দেখা হয় গুলশান জেড এইচ সিকদার মেডিকেলে; তার সাথে ছিল একজন গানম্যান। তার এক প্রিয়জনকে দেখতে এসেছিলেন। আমি বিস্ময়ে বিমূঢ হয়েছি শুধু। আমি যে নার্ভাস হ‌ুমায়ূন স্যারকে দেখেছিলাম এই হ‌ুমায়ূন ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন।

উল্লেখ্য, ঢাকা মেডিকেল কলেজের এই অনুষ্ঠানেই হ‌ুমায়ূন স্যার তার জীবনে কোনো অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন। সেদিনের সেই বক্তব্যের কথা এখনো আমার মনে পড়ে। আহা সেইসব দিন। হ‌ুমায়ূন স্যারের আত্মার শান্তি কামনা করি।

লেখক: হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা/তারা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়