ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া’

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৩, ১ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১৪:৩৯, ১ অক্টোবর ২০২১
‘কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া’

বাংলাদেশে তার জন্ম। নদীমাতৃক বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করা অসাধারণ সব গানে তিনি আজো মানুষের মনেপ্রাণে গেঁথে রয়েছেন।

প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ শচীন দেববর্মনের ১১৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর তিনি কুমিল্লা শহরের পূর্ব চর্থায় জন্মগ্রহণ করেন। 

তখন কুমিল্লা ছিল ত্রিপুরা রাজ্যের অধীন। তার বাবা নবদ্বীপ চন্দ্র দেববর্মণ, মা নিরুপমা দেবী। দাদা ঈশান চন্দ্র দেববর্মন ১৮৩০ থেকে ১৮৪৯ পর্যন্ত ছিলেন ত্রিপুরার রাজা। দাদার মৃত্যুর পর তার বাবার ত্রিপুরার সিংহাসনে বসার কথাছিলো। কিন্তু দাদার ভাই বীর চন্দ্র মানিক্য ত্রিপুরার সিংহাসন দখল করে নেন।

নবদ্বীপ চন্দ্র দেববর্মণ সপরিবারে কুমিল্লায় চলে আসেন এবং কুমিল্লায় স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। সেই সঙ্গে সিংহাসনের দাবি ছেড়ে দেন। কুমিল্লার চর্থায় ৬০ একর জমি নিয়ে প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন কুমার বাহাদুর নবদ্বীপ চন্দ্র। এই প্রাসাদেই জন্ম শচীন দেববর্মণের।  কুমিল্লা শহরের চর্থার স্মৃতিবিজড়িত পৈত্রিক বাড়িটি আজো তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।

রাজ পরিবারে জন্ম হলেও বাল্যকালেই সঙ্গীতের প্রতি অনুরক্ত শচীন। বাবার অনুপ্রেরণায় ধ্রুপদি শিল্পী এবং সেতারবাদকের কাছে সঙ্গীতে তালিম নেন। পড়ালেখাও কুমিল্লায়। এখানে বিএ শেষ করে এমএ পড়েন কলকাতায়। এ সময় কলকাতার বেতারে যোগ দেন। এরপর বোম্বে চলে যান। এরপর একের পর এক পসার ছড়িয়ে পড়ে এই মহান সংগীতজ্ঞের।

‘কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া/ আমার ভাইধন রে কইয়ো/ নাইওর নিতো বইলা/ তোরা কে যাস কে যাস’—শচীন দেববর্মনের এ গান আজো মুখে মুখে ফেরে মানুষের।  এমন আরো অনেক গান- তুমি এসেছিলে পরশু কাল কেন আসোনি,  ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা পান খাইয়া যাও, তুমি আর নেই সে তুমি, তুমি যে গিয়াছ বকুল-বিছানো পথে,  তাকডুম তাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল, নিশিতে যাইও ফুল বনে..মানুষের মনে প্রতিনিয়ত দোলা দিয়ে যায়।

শচীন দেববর্মণ রাজা-জমিদার না হয়ে, হয়ে গেলেন আধুনিক বাংলা গানের মুকুটবিহীন রাজা, সুরের জাদুকর। তিরিশ থেকে ষাটের দশক ছিল বাংলা গানের সোনালি দিন, আধুনিক বাংলা গানের পরম উৎকর্ষতার দিন। আর বাংলাগানের সেই সোনালি দিনের নির্মাণ যাদের হাতে হয়েছিল তাদের অন্যতম ছিলেন শচীন দেব বর্মণ। তিনি এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে এত মিশে গিয়েছিলেন যে, তার সুরের মূল সম্পদ আহরিত হয়েছিল বাংলার ভাটিয়ালি বাউল, কীর্তন, জারি থেকে। পূর্ববঙ্গের এমন কোনো অঞ্চল নেই, এমন কোনো নদী নেই যেখানে তিনি যাননি, ঘুরেননি। 

শচীন দেববর্মণ কুমিল্লায় ছিলেন ১৯২৪ সাল পর্যন্ত। ১৯ বছর বয়সে তিনি চলে যান কলকাতায়, ছিলেন ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত। এই গুণী শিল্পী ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর বোম্বেতে (মুম্বাই) প্রয়াত হন। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়