ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

মাহে রমজান: তাহাজ্জুদ আদায়ের মোক্ষম সময়

এমদাদুল হক তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৬ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১১:০৫, ১৬ এপ্রিল ২০২২
মাহে রমজান: তাহাজ্জুদ আদায়ের মোক্ষম সময়

রমজান হলো ইবাদতের মাস। আল্লাহ নৈকট্য লাভের মাস। আর আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রধান মাধ্যম হলো নামাজ। তাছাড়া ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো ফরজ নামাজ। ফরজ নামাজের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করুন, ইহা আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে— মাকামে মাহমুদে।’ (সুরা  ইসরা : আয়াত ৭৯)

ইবাদতের জন্য দিনের তুলনায় রাত উত্তম। আর রমজান মাসে স্বাভাবিকভাবেই রোজাদার ব্যক্তিদের রাত্রি জাগরণ করতে হয়। তাছাড়া শবে কদরসহ বছরের বিশেষ রাতগুলোতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন। আর তাহাজ্জুদের সময়ে প্রতি রাতেই আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে এসে বান্দাদের আরজি-আকুতি ও আবেদন-নিবেদন শোনেন। তাই তাহাজ্জুদ নামাজ হলো মহান রবের কাছে নিজের আকুতি পেশ করার মোক্ষম সময়। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিরাতেই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। 

পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত নফলের মধ্যে তাহাজ্জুদ সর্বোৎকৃষ্ট আমল। হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘যাঁরা রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন, তাঁরাই আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহণ করেছেন। (দিওয়ানে আলী, নাহজুল বালাগা) তাহাজ্জুদ হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের মোক্ষম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ফরজ নামাজগুলোর পর উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম)

আমাদের সমাজ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। এখনো মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে নানা কুসংস্কার বিদ্যমান। যেমন ‘তাহাজ্জুদ অন্ধকারে পড়তে হয়’, ‘তাহাজ্জুদ গোপনে পড়তে হয়’, ‘তাহাজ্জুদ পড়লে জিন আসে’ কিংবা ‘তাহাজ্জুদ শুরু করলে নিয়মিত আদায় করতে হয়।’ এসব কারণেও অনেকে তাহাজ্জুদ পড়েন না। প্রকৃতপক্ষে এসব ভুল ধারণা। রমজানকে আমরা বলতে পারি আমলে অভ্যস্ত হওয়ার মাস। রমজান মাসে কেউ যদি নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়েন তাহলে তার আমলের এই ধারা অন্য মাসেও বলবৎ থাকবে ইনশাআল্লাহ। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত আদায় করতে পারলে তা অনেক ভালো।

আমাদের উচিত নিজে ইবাদত করার পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধব, আপনজন ও নিকটস্থদের ভালোবাসা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে ইবাদতে শামিল করার চেষ্টা করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সেই স্বামীর প্রতি রহম করেন, যে নিজে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার স্ত্রীকে জাগায়। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে, তবে তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটা দেয়।’ (আবু দাউদ ও নাসায়ি)

রমজান মাসে ফরজ রোজা পালনের জন্য সাহরির সময় উঠতে হয়। সাহরি খাওয়া সুন্নত। আর সাহরির সময়ই হলো তাহাজ্জুদের উত্তম সময়। তাই মাহে রমজানে তাহাজ্জুদ আদায় করা খুবই সহজ। তাহাজ্জুদ ২ রাকাত করে ৪ রাকাত, ৮ রাকাত, ১২ রাকাত বা আরও কম বা বেশিও পড়া যায়। তাছাড়া রমজানের নফলের সওয়াব ফরজের সমান, ফরজের সওয়াব ৭০ গুণ। তাই মাহে রমজানে তাহাজ্জুদ আদায়ের মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগানোই বুদ্ধিমানের কাজ। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক ইসলামী বার্তা
 

/তারা/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়