ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগরের ৮৪তম জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৩, ২৫ জুলাই ২০২২  
আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগরের ৮৪তম জন্মদিন

আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ৮৪তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৯ সালের ২৫ জুলাই তিনি কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব। তিরিশ বছরের বর্ণাঢ্য অধ্যাপনার জীবন রয়েছে তার। শিক্ষক হিসেবে জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখর স্পর্শ করেছেন তিনি। 

পৈতৃক নিবাস বাগেরহাটের কচুয়া থানার কামারগাতি গ্রাম। তার বাবা আযীমউদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। মায়ের নাম করিমুন্নেসা। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ১৯৫৫ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৫৭ সালে বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থকে স্নাতক ও ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি সমালোচক ও সুবক্তা। ১৯৭০-এর দশকে টিভি উপস্থাপক হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।  ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। বইপড়া কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি ‘আলোকিত মানুষ’ তৈরি করে যাচ্ছেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র'র একটি চমক হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। এই কার্যক্রমে বই-ভর্তি একটি বাস পাঠকের দুয়ারে গিয়ে হাজির হয়। এই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি ঢাকায় শুরু হলেও আজ তা বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলায় বিস্তৃত।

২০০৪ সালে রোমেন ম্যাগসেসে পুরস্কারে এবং বাংলাদেশে অ-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য ২০০৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি। প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন এই আলোর দিশারি।  

নিজ কর্মগুণে তিনি হয়ে উঠেছেন জীবন্ত কিংবদন্তি ।  কেন তিনি শিক্ষক হয়েছিলেন- এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেছেন, 'শিক্ষক হিসাবে আব্বা ছিলেন খ্যাতিমান। ১৯৫০ সালে আমি যখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র, আব্বা তখন পাবনা এডোয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ। কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তার কথা উঠলে এমন সশ্রদ্ধ উদ্বেলতায় উপচে পড়ত যে মনে হত কোনো মানুষ নয়, কোনো দেবতা নিয়ে তারা কথা বলছে। একজন ভালো শিক্ষক ছাত্রদের হৃদয়ে শ্রদ্ধা ভালোবাসার যে কী দুর্লভ বেদিতে অধিষ্ঠিত থাকেন আব্বাকে দেখে তা টের পেতাম। একজন মানুষের এর চেয়ে বড় আর কী চাওয়ার থাকতে পারে। তখন থেকেই আমি ঠিক করেছিলাম এই পৃথিবীতে যদি কিছু হতেই হয় তবে তা হবে শিক্ষক হওয়া, আব্বার মতোন শিক্ষক।’

প্রথম শিক্ষকতায় যোগদান করেন ১৯৬১ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে বাইশ বছর বয়সে। ওই সময়ে মুন্সীগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন তার বাবা আযীমউদ্দীন আহমদ। ছেলে একই কলেজে যোগ দিলে তার জন্য প্রশাসনিক অস্বস্তির কারণ হবে মনে করে তিনি কলেজের গভর্নিং বোর্ডের সভায় আবদুল্লাহ্ আবু সায়ীদকে অন্তর্ভূক্তি করার ব্যাপারে আপত্তি জানান। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল ভাল থাকায় কলেজের গভর্নিং বডির সদস্যরা খন্ডকালীন প্রভাষক হিসাবে তাকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। গভর্নিং বডির সচিব হিসাবে তার বাবাকেই তার নিয়োগপত্র পাঠাতে হয়েছিলো।  

কলেজে যোগদানের প্রথম দিনের ঘটনা বর্ণনা করলেন তিনি এভাবে,  ‘প্রথম ক্লাশে ছাত্রদের সঙ্গে নতুন শিক্ষকদের পরিচয় করিয়ে দেবার দায়িত্ব অধ্যক্ষই পালন করতেন এটাই ছিল নিয়ম। আমার ব্যাপারেও আব্বাকেও তাই করতে হলো। রুটিন মাফিক আব্বার পেছনে পেছনে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির একটি শাখায় গিয়ে হাজির হলাম। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তার সংক্ষিপ্ত ইংরেজি ভাষণে আব্বা আমার একটা ছোটখাট পরিচয় তুলে ধরে সব শেষে বললেন, যেহেতু ওর শরীরে শিক্ষকের রক্ত আছে আমার মনে হয় ও ভাল শিক্ষকই হবে। 

বাবার কথাই ঠিক হয়েছিলো। তিনি সর্বজন বরেণ্য একজন ভালো শিক্ষকই হয়েছিলেন। এরপর সিলেট মহিলা কলেজ, রাজশাহী কলেজে শিক্ষকতা করার পর যোগ দেন ঢাকার ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজে। এরপর ঢাকা কলেজে। ঢাকা কলেজের শিক্ষকতা জীবন তিনি খুব উপভোগ করতেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েও ঢাকা কলেজ ছেড়ে যাননি৷

এই মানুষ গড়ার কারিগরের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

/টিপু/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়