ঢাকা     সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

প্রতি বেজোড় রাতে ‘শবে কদর’ তালাশ করুন

প্রকাশিত: ১২:১৩, ১৩ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ২০:০০, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
প্রতি বেজোড় রাতে ‘শবে কদর’ তালাশ করুন

‘কদর’ অর্থ: ১. মহাত্ম্য ও সম্মান, ২. তাকদীর। ‘শবে কদর’ অর্থ কদরের রজনী বা ‘পুণ্যময় রজনী’। কুরআনের ভাষায় এই রাত্রিকে বলা হয় লাইলাতুল কদর। বিখ্যাত সাহাবী হযরত সালমান ফারসি রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. শাবান মাসের শেষ দিন আমাদের সামনে নাতিদীর্ঘ এক বক্তব্য দিলেন। এতে তিনি বললেন, হে লোক সকল! সত্তরই মর্যাদাপূর্ণ ও বরকতময় একটি মাস তোমাদের আবৃত করে নেবে। এ মাসে রয়েছে এমন এক রজনী, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। (বায়হাকী) 

ইবনে আবী হাতেম রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার বনী ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত নিয়মিত জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিল। সাহাবায়ে কিরাম রা. একথা শুনে বিস্মিত হলে আল্লাহ তা’আলা ‘সূরা কদর’ অবতীর্ণ করেন। এ সূরায় আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট করে ঘোষণা করেছেন: ‘লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’। (সূরা কদর: ০৩) 

অর্থাৎ আগের যুগের উম্মতরা তাদের দীর্ঘ জীবনে আল্লাহর ইবাদত করে যে পরিমান নেকী ও মর্যাদা অর্জন করেছেন, উম্মতে মুহাম্মাদী এই এক রজনীতে ইবাদত করে তার চেয়েও অধিক নেকী ও মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হবে। এটা এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব। 

কোনো মানুষের জীবনে ‘লাইলাতুল কদর’ প্রাপ্তি সৌভাগ্যের ব্যপার। জ্ঞাতব্য বিষয় হলো, রাসূল সা. এই রাতটিকে সুনির্দিষ্ট  করে দেননি। এর মধ্যেও রয়েছে চমৎকার অনেক রহস্য।

উবাদা ইবনে ছমেত (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজি (সা.) একদা আমাদের লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট তারিখ জানানোর জন্য আসলেন। পথিমধ্যে দুই ব্যক্তিকে বিতর্কে লিপ্ত পেলেন। অতঃপর, তিনি আমাদের বললেন, আমি তোমাদের লাইলাতুল কদর সম্পর্কে অবগত করতে আসছিলাম। কিন্তু রাস্তায় ওমুক ও ওমুক দুজনকে ঝগড়ায় লিপ্ত হতে দেখেছি। ফলে আমার থেকে সে তারিখ সম্পর্কিত জ্ঞান নিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমার পক্ষে আর সুনির্দিষ্ট তারিখ বলা সম্ভব হলো না। হতে পারে এর মধ্যে কোনো কল্যাণ রয়েছে। (বুখারি: হাদিস নং ২০২৩)

এ রজনী পেতে আমাদের করণীয় কী? এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন: তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো। (বুখারি: ২০২০) 

আয়েশা রা. অন্য বর্ণনায় উল্লেখ করেন, রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে অধিক ইবাদত করতেন যা তিনি অন্য সময় করতেন না। (মুসলিম: ১১৭৫)

কিন্তু মজার বিষয় হলো, অসংখ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা). এর অন্য সময়ের ইবাদতের মাত্রা এতো বেশি ছিল যে, ‘রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পড়তে তার পা দুটো ফুলে যেত।’

তাহলে চিন্তা করে দেখুন, সাধারণ সময়ে ইবাদতের মাত্রা যদি এতোটা হয় তবে রমজানের শেষ দশকে সেটা কতো বেশি ও ব্যাপক হতে পারে!

অতএব, আমাদের দায়িত্ব হলো, রমজানের শেষ দশকের প্রত্যেক বেজোড় রাতগুলো নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির, দোয়া ইত্যাদির মাধ্যমে কাটানো। যাতে আমরা লাইলাতুল কদরের মর্যাদা অর্জন করতে পারি। এক বর্ণনায় রয়েছে রাসুল (সা.) বলেন, যে লাইলাতুল কদর থেকে বঞ্চিত হলো সে সব ধরণের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো। তবে হতভাগা ছাড়া অন্য কেউ এ রাত থেকে বঞ্চিত হয় না। (ইবনে মাজাহ: ১৬৪৪)

আল্লাহ তা’আলা আমাদের লাইলাতুল কদরের মর্যাদা অর্জন করার তৌফিক দিন।

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়