ঢাকা     সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

এ’তেকাফকারীদের করণীয় ও বর্জনীয়

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ১৪ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ১৪:৪৮, ১৪ এপ্রিল ২০২৩
এ’তেকাফকারীদের করণীয় ও বর্জনীয়

এ’তেকাফ অর্থ অবস্থান করা। সাধারণত এ’তেকাফ বলতে আমরা বুঝি, রমজানের শেষ দশ দিন সুন্নতের নিয়তে নির্ধারিত নিয়ম মেনে মসজিদে অবস্থান গ্রহণ করাকে এ’তেকাফ বলা হয়।

এ’তেকাফ তিন প্রকার। ১. সুন্নত ২. নফল বা মুস্তাহাব ৩. ওয়াজিব। রমজানের ২০ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে শাওয়ালের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত নির্ধারিত নিয়ম মেনে মসজিদে অবস্থান করা সুন্নত। এজন্য এটাকে সুন্নত এ’তেকাফ বলা হয়। রাসূল সা. এভাবে এ’তেকাফ করতেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: উবাই ইবনে কা‘ব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. রমজানের শেষ দশকে এ’তেকাফ করতেন। এক বছর তিনি (জিহাদের) সফরে যাওয়ার কারণে এ’তেকাফ করতে পারেননি। ফলে তিনি পরবর্তী বছর বিশ দিন এ’তেকাফ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ: ২৪৬৩)

এ’তেকাফকারীর এ’তেকাফের কারণে লাভবান হয়ে থাকেন। যেমন:

১. তার জন্য লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়।
২. তিনি সদা মসজিদে অবসস্থান করায় অনিচ্ছাকৃত অনেক গুনাহ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।
৩. তাঁর মসজিদে অবস্থান করাটাই যেহেতু সুন্নত, ফলে তিনি মসজিদে বসে পৃথক কোন ইবাদত না করলেও তার আমল নামায় ইবাদতের নেকী লেখা হতে থাকে।
৪. রোজার যাবতীয় হক আদায় করা তার পক্ষে সহজতর হয়ে যায়। 

এ’তেকাফ ত্রুটি মুক্ত করতে হলে কিছু প্রয়োজনীয় মাসআলা জানা থাকা দরকার। যেমন: 

১. জামে মসজিদে এ’তেকাফ  করা উত্তম। তবে পাঞ্জেগানা মসজিদেও এ’তেকাফ  করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে জুমার দিন জুমার জন্য এতটুকু পূর্বে বের হওয়া যাবে যাতে জুম‘আ মসজিদে গিয়ে ৪/৬ রাকাআত নামাজ আদায় করার পরই খুৎবা শুরু হয়। জুম‘আ এর ফরয শেষ হওয়ার পরপরই ৪/৬ রাকাআত নামাজ পড়েই এ’তেকাফের জায়গায় এসে পড়তে হবে।
২. এ’তেকাফকারীর জন্য মসজিদের মধ্যে পর্দা টানিয়ে লোকজন থেকে একটু আড়াল করে নেয়া মুস্তাহাব। নবীজি সা. এমনটা করতেন।
৩. সুন্নত এ’তেকাফের জন্য শর্ত হলো সর্বদা মসজিদে থাকতে হবে। কেবলমাত্র ওজু, ফরজ গোসল এবং জুমার গোসল করতে স্বল্পতম সময়ের জন্য বের হতে পারবেন। যতটুকুতে তার প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব তার অতিরিক্ত বাইরে থাকলে এ’তেকাফ  ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৪. শুধু শারীরিক আরামের উদ্দেশ্যে গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নেই। তবে বাথরুমের মধ্যেই গোসলের ব্যবস্থা থাকলে কিংবা ইস্তিঞ্জা থেকে আসার পথে গোসলের ব্যবস্থা থাকলে সেখানে খুবই দ্রুততার সাথে গোসল করে নিতে পারবেন। সাবান ব্যবহারে সময় ব্যয় করা যাবে না। খুবই দ্রুততার সাথে গোসলের কাপড় ধুতে পারবেন।

৫. পৃথকভাবে শুধু ব্রাশ করা কিংবা মেছওয়াক করার জন্য বাইরে যাওয়া যাবে না। বরং ওজু করার সময় এ কাজগুলো করে নিতে হবে।
৬. এ’তেকাফকারীকে খাওয়া-দাওয়া মসজিদেই করতে হবে। খাবার পৌঁছে দেয়ার কোন ব্যবস্থা যদি করা না যায় তবে এ’তেকাফকারী নিজে গিয়ে খাবার আনতে পারবেন। খাবার আনতে গিয়ে কোনো ধরনের অপেক্ষা করা চলবে না। খাবার এনে মসজিদে বসে খেতে হবে।
৭. এ’তেকাফকারী শরীয়ত সম্মত প্রয়োজনে বাইরে গেলে অতিরিক্ত দ্রুত হাঁটা জরুরি নয়। স্বাভাবিক অভ্যাস অনুযায়ী হাঁটতে হবে।  
৮. আজানের জায়গা মসজিদের বাইরে হলে কেবলমাত্র আজানের জন্য বাইরে যেতে পারবেন।
৯. জানাযার নামাজ আদায়ের জন্য মাসজিদের বাইরে যাওয়া জায়েজ নেই। এতে এ’তেকাফ  ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১০. কোন রুগীকে দেখতে গেলেও এ’তেকাফ  ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে বাহির থেকে যে কেউ এসে তার সাথে দেখা করতে পারবে।

আল্লাহ তা’আলা সকল এ’তেকাফকারীদের এ’তেকাফ কবুল করুন। আমীন।
 

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়