ঢাকা     সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

যাকাত প্রদানে কী লাভ, আদায় না করলে কী ক্ষতি

প্রকাশিত: ১২:১২, ১৫ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ১৫:৩৬, ১৫ এপ্রিল ২০২৩
যাকাত প্রদানে কী লাভ, আদায় না করলে কী ক্ষতি

ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম। যাকাত ফরজ হওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হলো- দারিদ্র্য বিমোচন এবং ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা। যাকাত হলো দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনের ‘সুরক্ষা প্রাচীর’। সমাজের বিত্তবানরা যথানিয়মে যাকাত প্রদান করলে রাষ্ট্রের অর্থ কিছুসংখ্যকের হাতে কুক্ষিগত হওয়ার সুযোগ থাকে না। বরং, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের স্বচ্ছল জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (সদাকাহ, দান ও যাকাত এজন্য যে) ‘যাতে ধন-সম্পদ যেন তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত হয়ে না যায়।’ (সূরা হাশর: ০৭)

কাজেই ধনীরা যদি যাকাত প্রদান করে তবে দেশে গরিবের সংখ্যা যে কমে আসবে এটা সুনিশ্চিত। কেবল এতোটুকুই নয়, বরং দেশের সব সম্পদশালী হিসাব করে যথাযথভাবে যাকাত প্রদান করলে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ‘গরিব মানুষে ঠাসা’ বাংলাদেশেও যাকাত গ্রহণের জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে এক গবেষণায় বলা হয়েছে।  

যাকাত প্রদানের মাধ্যমে যাকাত দাতা যা অর্জন করেন:

১. যাকাত প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহর আদেশ পালনের নেকী অর্জন করতে সক্ষম হন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সালাত কায়েম করো এবং যাকাত প্রদান করো (সূরা বাকারা: ৪৩)। আল্লাহর এ আদেশ মান্য করার বদৌলতে মানুষ অবশ্যই মর্যাদাবান হবে। 

২. যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি হয়। যাকাত প্রদানের সময় যাকাত দাতার মনে হতে পারে আমার কিছু সম্পদ খরচ হয়ে যাচ্ছে বা কমে যাচ্ছে। তার এ ধারণা একেবারেই অমূলক। মনে রাখতে হবে আপাতদৃষ্টিতে কিছু টাকা কমে গেলেও এর বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তার সম্পদের মধ্যে বরকত দিয়ে দেবেন। যাকাত দিয়ে কোনো মানুষ নিঃস্ব হয়েছে ইতিহাসে এর কোনো প্রমাণ নেই। তাবে এ নজির অনেক রয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি এক সময় সুদে টাকা খাটাতো। পরবর্তী সময়ে সে পথের ফকির হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা নিজেই এ ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে এভাবে, অর্থ: তোমরা সম্পদ বৃদ্ধির আশায় সুদে যা কিছু দাও আল্লাহর কাছে তাতে কিছুই বৃদ্ধি হয় না। অন্যদিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যারা যাকাত দিয়ে থাকে তারাই দ্বিগুণ লাভ করে থাকে’। (সূরা আররূম: ৩৯) অর্থাৎ সুদের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ নগদ প্রাপ্তি হলেও তা থাকে বরকতশূন্য।   

৩. যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ ও অন্তর পবিত্র হয়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, অর্থ: (হে নবী) আপনি তাদের সম্পদ থেকে যাকাত উত্তোলন করুন। যাতে আপনি এর মাধ্যমে তাদের সম্পদ ও অন্তরকে পবিত্র করতে পারেন। (সূরা তওবা: ১০৩)

৪. যাকাত প্রদানের মাধ্যমে যাবতীয় অমঙ্গল দূর হয়ে যায়। নবীজি সা. ইরশাদ করেছেন, অর্থ: হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা সমাজের এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল সা. যাকাত আদায় করা প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী? নবীজি সা. বললেন, কোনো ব্যক্তি যাকাত আদায় করলে তার থেকে যাবতীয় অমঙ্গল দূর হয়ে যায়। (তাবরানী: ৪৩৩৪)

৫. যাকাত প্রদানকারী অবারিত আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হন: আল্লাহ তা‘আলা নিজেই এ প্রসঙ্গে সুসংবাদ দিয়ে বলেন, অর্থ: আমার (অবারিত) রহমত তাদের জন্য লিখে দিবো যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে’। (সূরা আ‘রাফ: ১৫৬)

যাকাত প্রদান না করার ক্ষতি:

১. যাকাত প্রদান না করলে ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রূপা (সম্পদ) জমা করে রাখে, আল্লাহর পথে ব্যয় করে না (যাকাত দেয় না) তদেরকে কঠোর শাস্তির সুসংবাদ জানিয়ে দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে এসব সম্পদ উত্তপ্ত করে তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠাদেশ দগ্ধ করা হবে। (সেদিন বলা হবে), এগুলো সে সব সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। কাজেই কুক্ষিগত করে রাখা সম্পদের শাস্তি এখন ভোগ করো। (সূরা তাওবা ৩৪-৩৫)

২. হিসাব করে যথাযথভাবে যাকাত না দিলে জাহান্নামে বিষক্ত সাপ দংশন করবে।  আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা যাকে সম্পদ দান করেছেন অতঃপর সে তা থেকে যাকাত প্রদান করল না, কিয়ামতের দ্বিবসে তার সমুদয় সম্পদকে মাথায় লোমহীন বিষাক্ত সাপে পরিণত করা হবে। তার মাথায় দুটি কালো বিন্দু থাকবে। অতঃপর সেই সাপ যাকাত আদায় না করা ব্যক্তির গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সেই সাপ ওই ব্যক্তির দুই চোয়ালে প্রচণ্ডভাবে কামড়াতে থাকবে আর বলবে, আমি তোমার সে কুক্ষিগত সম্পদ এবং আমি তোমার ধনভাণ্ডার। (বুখারি, মুসনাদে আহমাদ: ৮৬৬১)

এভাবে কুরআন, হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা এসেছে যাকাত প্রদান না করার ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা হিসাবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, মানুষকে আল্লাহ তা‘আলাই সকল সম্পদ প্রদান করেন। তার এ সম্পদের মধ্যে গরিবের সম্পদ রেখে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, অর্থ: ধনীর সম্পদের মাধ্যে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে। (সুরা যারিয়াত: ১৯)

এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে পরীক্ষা করেন। দেখতে চান যে, এ ব্যক্তি আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক খরচ করেন কি না, গরীবকে তার প্রাপ্যটুকু প্রদান করে কিনা, নাকি পুরো সম্পদ নিজে কুক্ষিগত করে রাখে।

একটু ভেবে দেখুন, আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, সে দেশের আইন অনুযায়ী আমাদের সম্পদের বৃহৎ একটি অংশ ভ্যাট-ট্যাক্স হিসাবে প্রদান করতে হয়। মজার ব্যাপার হলো, ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে সম্পদের বৃদ্ধি হবে এমন কোনো গ্যারান্টি কোনো সরকার কখনও দিতে পারে না। অথচ দেখুন, যিনি আমাদের সম্পদের মালিক করেছেন, তিনি বলছেন, ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যদি সম্পদ থেকে মাত্র আড়াই ভাগ যাকাত হিসাবে গরিবকে প্রদান কর, তবে তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধির গ্যারান্টি তোমরা পাবে। আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে? (সূরা নিছা: ১২২)

এরপরও মানুষ কেন হিসাব করে যথাযথভাবে যাকাত প্রদান করবে না! 

কাজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, যাদের উপর যাকাত ফরজ হয়েছে, তারা হিসাব করে যাকাত প্রদান করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করব। আল্লাহ তা‘আলা তৌফিক দান করুন, আমিন।
 

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়