ঢাকা     সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

কুরআনের সাথে সম্পর্ক হয়েছে তো?

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ১৬ এপ্রিল ২০২৩  
কুরআনের সাথে সম্পর্ক হয়েছে তো?

পূর্ব যুগের সব নবীকেই আল্লাহ তাআলা কিছু অলৌকিক ক্ষমতা বা মুজিজা দিয়েছিলেন। সমযুগের সবাই এসব মুজিজার কাছে অক্ষমতা প্রকাশ করতে বাধ্য হতো। এতে নবী আলাইহিস সালামদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হতো। এসব অলৌকিক ক্ষমতা প্রদানের পিছনে আরো কিছু কারণ ও রহস্য ছিল।

নবীদের মুজিজার মধ্যে যেমন, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম মৃত ব্যক্তিদের আল্লাহর নামে জীবিত হতে বললে সাময়িক সময়ের জন্য জীবিত হয়ে যেত। হযরত মূসা আলাইহিস সালামেরর ছিল লাঠি ও হাতের শুভ্রতা। মূছা আলাইহিস সালাম তাঁর হাত বগলের নিচে প্রবেশ করিয়ে তা আবার বের করলে শ্রভ্র আলো ছড়িয়ে পড়ত। তার লাঠির মুজিজাতো সর্বজন বিদিত। ফেরআউনের যাদুকরদের সব সাপ মুহূর্তেই গিলে ফেলেছিল সেই লাঠি। হযরত নুহ আলাইহিস সালামকে দিয়েছিলেন কিশতি বা জাহাজ। আল্লাহ তাআলা এ কিশতির মাধ্যমে মহাপ্লাবন থেকে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ ও কিছু প্রাণীকে রক্ষা করেছিলেন। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনা আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত চমৎকার ভাষায় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। 

এ মুজিজাগুলো তৎকালীন মানুষদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। সে যুগের মানুষেরা এগুলো দেখে হতভম্ব হয়ে যেত। নবী-রাসূল আলাইহিস সালামের হাতে হাত দিয়ে তাদের ধর্ম গ্রহণ করতো। এর মাধ্যমে তাদের রবের পরিচয় জেনে নিতো। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এতো সব মুজিজা বা অলৌকিক ক্ষমতা ছিল সাময়িক সময়ের জন্য। সংশ্লিষ্ট নবী-রাসূল যতদিন দুনিয়াতে হায়াতপ্রাপ্ত হতেন ততোদিন পর্যন্ত এর স্থায়ীত্ব হতো। নবী-রাসূল চলে যাওয়ার পর এর কার্যকারিতাও চলে যেত। 

আমাদের নবী বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য মুজিজা দান করেছিলেন। অধিকাংশ মুহাক্কিকদের মত হলো, পূর্ব যুগের নবী-রাসুলদেকে যত মুজিজা দেওয়া হয়েছিল এর চেয়ে অধিক পরিমাণ আমাদের রাসুলকে (সা.)  এককভাবে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের নবীকে (সা.) দেওয়া সব মুজিজার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল: ‘কুরআনুল কারীম’। পূর্বেই আলোচিত হয়েছে, আগের যুগের নবীদের মুজিজা ছিল সাময়িক সময়ের জন্য। সংশ্লিষ্ট নবী-রাসুল যতদিন দুনিয়াতে হায়াত পেতেন ততোদিন পর্যন্ত এর স্থায়ীত্ব হতো। নবী-রাসুলরা চলে যাওয়ার পর এর কার্যকারিতাও চলে যেত। 

কিন্তু আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ‘কুরআন’ নামক মুজিজা তার ইহজগতে থাকাকালীনও যেমন মুজিজা, তার চলে যাওয়ার পরও কিয়ামত পর্যন্ত এ মুজিজা বলবৎ থাকবে। তৎকালীন যুগে সর্বশ্রেণির মানুষ কুরআনের সামনে তাদের অক্ষমতা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিল। কুরআন শুনে মানুষতো বটেই, জ্বিন জাতি পর্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হয়েছে। তারা বলতে বাধ্য হয়েছে, ‘আমরা বিস্ময়কর এক কুরআন শুনেছি’। (সূরা জ্বিন: ০১)

আজও পর্যন্ত কেউই কুরআনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। ভাষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ সব বিষয়ে গবেষণার চরম উৎকর্ষ সাধিত হওয়ার পরেও কুরআনে আলোচিত কোনো তথ্য, আলোচিত কোন ইতিহাস ও বিজ্ঞানের কোন সূত্র আজও পর্যন্ত কেউ ভুল প্রমাণ করতে পারেনি। কোনোদিন পারবেও না। এই মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারীমই হলো এই উম্মতের গর্বের বিষয়। এই উম্মতের সম্মানের মানদণ্ড ও সাফল্যের চাবিকাঠি। কুরআনের সাথে আপনি যেভাবেই সম্পর্ক করুন না কেন তাতেই আপনি লাভবান হবেন। সম্মানিত হবেন এবং সঠিক পথের দিশা পাবেন। যেমন:

১.কুরআন পড়লেই নেকি। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ (অক্ষর) পাঠ করবে, সে একটি নেকি প্রাপ্ত হবে। আর এই এক নেকিকে দশগুণ করে দেওয়া হবে। আমি একথা বলছি না যে, ‘আলিম লাম মীম’ একটি হরফ। বরং ‘আলিফ’ একটি হরফ, ‘লাম’ একটি হরফ, ‘মীম’ একটি হরফ। (তিরমিযি: হাদিস নং-২৯১০)

২.কুরআন তিলাওয়াতকারী পরকালে সম্মানিত ফেরেশতাদের শ্রেণিভুক্ত হবেন: হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, দক্ষতার সাথে কুরআন তিলাওয়াতকারী কিয়ামতে বিশিষ্ট সম্মানিত ফেরেশতাদের মর্যাদা প্রাপ্ত হবেন। অপরদিকে যিনি তার মুখের জড়তার কারণে কষ্ট করে করে কুরআন পড়বেন তিনি দুটি পুরুস্কার প্রাপ্ত হবেন। (মুসলিম: ২৪৪)

৩.কুরআন মানুষকে সব ক্ষেত্রে উত্তম পথ প্রদর্শন করে। আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআনে ঘোষণা করেছেন,‘এই কুরআন (মানব জাতিকে) সর্বোত্তম পথ প্রদর্শন করে। সৎ কর্মপরায়ন মুমিনদেরকে এই সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরুস্কার’(সুরা ইসরা: ০৯)। কাজেই সফলতা পেতে হলে কুরআন নির্দেশিত পথ অবলম্বন করতেই হবে।

৪.কুরআনবিহীন অন্তর শূন্য ঘরের মত। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যার অন্তরের মধ্যে কুরআনের সামান্যতম কোনো অংশ নেই, সে বিরান বাড়ির মত’ (তিরমিজি: ২৯১৩) । অর্থাৎ তার অন্তরটা মৃত্যু। তাকে প্রকৃত অর্থে জীবিত মানুষ বলা যায় না। সে জড় ও শক্তিহীন।

পবিত্র মাহে রমাদানে এই ‘কুরআনুল কারীম’কে আল্লাহ তাআলা ‘লাওহে মাহফুজ’ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ করেছেন। ফলে কুরআনের অধিক চর্চা হওয়ার কথা ছিল এই রমাদানে। অনেকে করেছেনও। রমাযানের শেষে এসে আমাদেরকেও হিসাব মিলাতে হবে আমরা প্রত্যেকে কুরআনের সাথে কতটুকু সম্পর্ক করতে পেরেছি?

কুরআনের প্রথম দাবি হলো বিশুদ্ধ তিলাওয়াত বা বিশুদ্ধভাবে পড়তে পারা। নামাজের জন্য অন্যতম শর্ত হলো নামাজে অন্তত যতটুকু কুরআন পড়া হবে তা যেন বিশুদ্ধ হয়। কুরআন শুদ্ধ পাঠ শিক্ষা করাটাও অনেক সহজ। আপনি পৃথিবীর অনেক ভাষা জানেন, অনেক লেখাপড়া করেছেন, অনেক জ্ঞান রাখেন কিন্তু একজন মুলমান হয়ে যদি আপনি কুরআন পড়তে না জানেন, তবে এটা চরম দুঃখজনক, লজ্জাজনক। 

অতএব, আসুন কুরআন নাজিলের মাসে কুরআনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলি। প্রতিজ্ঞা করি, কুরআনের সাথে নিজের জীবনকে অবশ্যই মিলিয়ে নেওয়ার। পথনকশা তৈরী করে নেই যেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত শিখে নিতে পারি। 

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তৌফিক দিন, আমীন।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়