ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

নাজাত পেতে আসুন চূড়ান্তভাবে তওবা-ইস্তিগফার করি

প্রকাশিত: ১১:৪১, ১৭ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ১১:৪৯, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
নাজাত পেতে আসুন চূড়ান্তভাবে তওবা-ইস্তিগফার করি

হযরত কা’আব বিন উজরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা নবীয়ে কারীম সা. আদেশ করলেন, তোমরা মিম্বরের নিকটবর্তী হও। আমরা হাজির হলাম। অতঃপর হুজুর সা. মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা মোবারক রেখে বললেন, ‘আমীন’। অর্থাৎ আল্লাহ তুমি কবুল কর। আবার যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠালেন, বললেন, ‘আমীন’।  পুনরায় তৃতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, ‘আমীন’।

খুৎবা শেষে হুজুর সা. যখন মিম্বর হতে নামলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম। বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল সা. আজকে মিম্বরে ওঠার সময় যা কিছু শুনলাম ইতোপূর্বে এমন শুনি নাই।’ 

রাসূল সা. বললেন, ‘‘এইমাত্র হজরত জিব্রাঈল আ. এসে বললেন, ‘ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে রমজান পেলো অথচ তার গুনাহ মাফ হলো না’। আমি বললাম, ‘আমীন’। অর্থাৎ তাই হোক। দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময় জিব্রাঈল আ. বললেন, ‘ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যার সামনে আপনার নাম উচ্চারণ করা সত্বেও সে আপনার উপর দরূদ পড়ল না’। আমি বললাম, ‘আমীন’। আবার তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই জিব্রাঈল আ. বললেন, ‘ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যার সম্মুখে তার মাতা-পিতা অথবা উভয়ের একজন বার্ধক্যে উপণীত হয়েছে অথচ তারা তাকে জান্নাতে পৌঁছাতে পারলো না’। আমি বললাম, আমীন।’’ (মুসতাদরাকে হাকীম: হাদীস নং-৭২৫৬)

উল্লেখিত প্রসিদ্ধ হাদীসটি জিব্রাঈল আ. তিন ব্যক্তির জন্য ধ্বংসের দোয়া করেছেন। নবীজি সা. ‘আমীন’ বলেছেন। নবী-রাসূলদের দোয়া অবশ্যই কবুল হয়। কাজেই এ দোয়াগুলোও অবশ্যই কবুল হয়েছে। এই তিন ব্যক্তির প্রথম ব্যক্তি হলো- যে রমজান পেলো অথচ তার গুনাহ মাফ হলো না। বর্তমান সময়ে আমাদের ভয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই হলো এটি। অতএব, আমরা যদি আমাদের গুনাহ মাফ করাতে চাই তবে অন্যতম পথ হলো ‘তওবা’ করা ‘ইস্তিগফার’ করা।

‘তওবা’র অর্থ ফিরে আসা, লজ্জিত হওয়া, দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। ইস্তিগফার অর্থ হলো ক্ষমা প্রার্থনা করা। তওবা ও ইস্তিগফার প্রায় সমার্থবোধক শব্দ। তওবা ও ইস্তিগফার হলো মানব জাতির এক বিশেষ মর্যাদা ও সুযোগ। বান্দা আল্লাহর গোলাম হিসাবে যখনই সে নফস ও শয়তানের ধোকায় পড়ে গুনাহের কাজ করবে সাথে সাথে তার দায়িত্ব হলো তওবা করবে, ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদি সে যথাযথভবে তওবা ও ইস্তিগফার করতে পারে তবে আল্লাহ তা‘আলাও তাকে ক্ষমা করার ওয়াদা করেছেন। তওবা ও ইস্তিগফারের বিষয়ে কুরআন হাদীসে যে আলোচনা এসেছে তা বেশ আশাব্যঞ্জক।

১. আল্লাহ তা‘আলা তওবাকারীদেরকে পছন্দ করেন, ভালোবাসেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তওবাকারীদেরকে এবং ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা-২২২)

২. তওবার দ্বারা গুণাহ মাফ হয়। আল্লাহ তা‘আলা সূরা আলে ইমরানের ১৩৫ নং আয়াতে বলেন, অর্থ: আর তারা কখনো অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়লে অথবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে তৎখনাত আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? 

৩. তওবা করলে গুণাহ সমূহকে আল্লাহ তা‘আলা নেকের দ্বারা পরিবর্তন করে দেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, অর্থ: হে মুমীনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা করো,  আন্তরিক তওবা। আশা করা যায় তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কাজসমূহ ক্ষমা করে ‘নেকী’র দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। (সূরা তাহরীম: ৮)

৪. তওবা হলো সফলতার চাবিকাঠি: কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, অর্থ: তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা করো হে বিশ্বাসীগণ। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। (সূরা নূর: ৩১)

৫. তওবাকারীকে আল্লাহ তা‘আলা সুখ-স্বাচ্ছন্দের জীবন দান করবেন। ইরশাদ হয়েছে, অর্থ: তোমরা যদি তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তওবা করে ফিরে আস তবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত স্বচ্ছন্দের জীবন দান করবেন। সাথে সাথে সব ধরনের মর্যাদা ও অনুগ্রহ প্রদান করবেন। (সূরা হুদ; ০৩) 

প্রসিদ্ধ এক ঘটনা

একদা হযরত হাসান বসরী রহ. বসে ছিলেন। এক লোক এসে বললেন, ‘হযরত, আমি অনেক বড় গুনাহগার। আমাকে এর জন্য কোনো আমল বলে। দিন।’ তিনি বললেন, ‘ইস্তিগফার করো।’ এরপর এক ব্যক্তি এসে বললেন, ‘অনেকদিন যাবৎ বৃষ্টি হচ্ছে না, কোনো আমল বাতলে দিন।’ তিনি বললেন, ‘ইস্তিগফার করো।’ আরেকজন এসে বললেন, ‘আমি খুবই দরিদ্র, কোনো কাজ-কারবার নেই। অনেক ঋণ হয়ে গেছে। কোনো আমল বলে দিন।’

তিনি বললেন, ‘ইস্তিগফার করো।’  আরেক ব্যক্তি এসে বললেন, ‘হযরত, দুআ চাই যেন আল্লাহ আমাকে সন্তান দান করেন।’ তিনি বললেন, ‘ইস্তিগফার করো।’ এরপর আরেকজন এসে বললেন, ‘আমার একটি বাগান আছে। দুআ চাই যেন ভালো ফল আসে।’ তিনি বললেন, ‘ইস্তিগফার করো।’

গুনাহময় জীবনে তাওবার পরশ

আরেক লোক এসে বললেন, ‘হযরত, আমার জন্য দুআ করুন যেন ঘরে মিষ্টি পানি পাওয়া যায়, বাড়িতে মিষ্টি পানির কূপ মিলে যায়।’ তিনি বললেন, ‘ইস্তিগফার করো।’ তাঁর পাশে থাকা এক ব্যক্তি সব অবলোকন করে বললেন, ‘আপনার কাছে তো আশ্চর্য আমল এসে গেছে। যেই আসে তাকেই ইস্তিগফারের (গুনাহ মাফের জন্য ক্ষমা চাওয়ার) আমল দিচ্ছেন!’ 

তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন: অর্থ: তোমরা তোমার পালন কর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন। তোমাদের জন্য ফসলের বাগান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন। (সূরা নূহ: ১০-১২)

শুধু এক ইস্তিগফারের আমলেই এত সব নেয়ামত লাভ হয়। আজ চিন্তা করলে দেখা যাবে আমাদের যত সমস্যা আছে তা ওসবের কোনো কোনোটার সাথে সম্পৃক্ত। আমরা নিয়মিত ইস্তিগফার পড়তে থাকলে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকল সমস্যার সমাধান করে দেবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা যদি মাহে রমজানে নিজেদের গুনাহসমূহ মাফ করিয়ে নিতে না পারি তাহলে নবীজি সা. এর ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের ধ্বংস অনিবার্য। 

অতএব, মাহে রমজানের একেবারেই শেষ সময়ে আসুন আমরা বেশি বেশি তওবা- ইস্তিগফার করি। মহান আল্লাহর নিকট চূড়ান্তভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তার ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করে নিন। আমীন।

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়