ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

‘লাইলাতুল কদর’ সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য 

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১৮ এপ্রিল ২০২৩  
‘লাইলাতুল কদর’ সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য 

কোন রজনী ‘লাইলাতুল কদর’ হবে এ সম্পর্কে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য কথা হলো যেটা নবীজি সা. বলেছেন। তা হলো রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে হবে। এরপরও সাহাবায়ে কিরাম রা. সহ যুগে যুগে বিজ্ঞ ও বুজুর্গ ব্যক্তিগণ তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বেশ চমৎকার কিছু মতামত ব্যাক্ত করেছেন। সম্মানিত পাঠকদের জন্য এসব মতামত থেকে কিছু তুলে ধরা হলো:

১. শবে কদরের তারিখ নিয়ে প্রায় ৪০টি মত রয়েছে। অধিকাংশের মত এ রজনীটি ঘূর্ণায়মান। প্রত্যেক বছর যে, একই তারিখে লাইলাতুল কদর হবে এমন নয়। কোনো বছর ২১তম রজনীতে, কোনো বছর ২৫তম রজনীতে লাইলাতুল কদর হবে। এভাবে বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর হতে পারে।

২. মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে: অর্থ: হযরত ‘উবাই ইবনু কা‘ব রা. থেকে বর্ণিত তিনি ‘লাইলাতুল ক্বদ্র’ সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি রাতটি সম্পর্কে জানি। এ ব্যাপারে আমি যা জানি তা হচ্ছে, এটা ঐ রাত যে রাতে রসূল সা. আমাদের সলাত আদায় করতে আদেশ করেছেন। আর তা ছিল সাতাশতম ‘কদরের’ রাত’। (মুসলিম, হাদীস নং: ১৮২২)

৩. মুসলিম শরীফের অন্য বর্ণনায় এসেছে: ‘হযরত আবূ হোরায়রাহ্ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রসূল সা. এর সামনে কদরের রাত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে সে (রাত) স্মরণ রাখবে, যখন চাঁদ উদিত হবে থালার একটি টুকরার ন্যায়? (মুসলিম, হাদিস নং-২৮৩৬) আবুল হাসান আল ফার্সি বলেন, চাঁদ সাতাশতম রজনীতে এই আকৃতি নিয়ে উদিত হয়।

৪. লাইলাতুল কদর নিয়ে মজার একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সূরা মুমীনুন এর ১২-১৪ নং আয়াতের তাফসীরে। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত; একদা ওমর ফারুখ রা. উপস্থিত সাহাবাদের প্রশ্ন করলেন, রমজানের কোন তারিখে শবে কদর? সবাই উত্তরে ‘আল্লাহ্ তা‘আলাই জানেন' বলে পাশ কাটিয়ে গেলেন। হযরত ইবনে আব্বাস রা. তাঁদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন: আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহ্ তা‘আলা সাত আকাশ ও সাত জমিন সৃষ্টি করেছেন। মানুষের সৃষ্টিও সাত স্তরে সম্পন্ন করেছেন এবং সাতটি বস্তুকে মানুষের খাদ্য করেছেন। তাই আমার তো মনে হয় যে, শবে কদরও রমজানের সাতাশতম রাত্রিতে হবে। খলিফা এই অভিনব প্রমাণ শুনে বিশিষ্ট সাহাবিগণকে বললেন: এই বালকের মাথার চুল এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি গজায়নি; অথচ সে এমন কথা বলেছে, যা আপনারা বলতে পারেননি। ইবনে আবী শায়বার মুসনাদে এই দীর্ঘ হাদীসটি বর্ণিত রয়েছে। (তফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন, কুরতুবীত)

৫. আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী রহ. তার রচিত ‘লাতাইফুল মা‘আরিফ’ কিতাবের (পৃ.:৬৭২) উল্লেখ করেছেন: মুতাআখখিরীনগণ ২ কারণে মনে করেন ২৭তম রাত্রিতেই লাইলাতুল কদর হবে। তার বক্তব্যের পক্ষে তিনি ২টি বিস্ময়কর যুক্তি তুলে ধরেছেন:

এক. (লাইলাতুল কদর) কথাটির মধ্যে আরবী হরফ (অক্ষর আছে) আছে ৯টি। আল্লাহ তা‘আলা সূরা কদরের মধ্যে এ কথাটি ৩ বার উল্লেখ করেছেন। তাহলে (লাইলাতুল কদর) এর ৯টি অক্ষরকে ৩ দিয়ে গুণ করলে ফলাফল হয় ২৭। এ থেকে বুঝা যায় রমজানের ২৭ তম রজনীতেই লাইলাতুল কদর হবে।

দুই. ‘সূরা কদর’-এ বর্ণিত হয়েছে: سَلَامٌ هِيَ। এখানে هِيَ শব্দটি থেকে উদ্দেশ্য ‘লাইলাতুল কদর’। মজার ব্যপার হলো; এ সূরায় মোট শব্দ আছে ৩০টি। এই هِيَ শব্দটি হলো ২৭ তম শব্দ যা থেকে উদ্দেশ্য ‘লাইলাতুল কদর’। এ থেকেও অনুমেয় হয়, লাইলাতুল কদর হবে ২৭ তম রজনীতে।  

এ সকল আলোচনা থেকে একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, লাইলাতুল কদর মাহে রমজানের ২৭তম রজনীতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এখন আমাদের সকলের দায়িত্ব হলো আসন্ন লাইলাতুল কদরে বেশি বেশি ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করা। আল্লাহ তা‘আলা তৌফিক দান করুন, আমীন।

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়