ঢাকা     সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

সিয়ামের অন্যতম শিক্ষা ‘সহমর্মীতা’ 

প্রকাশিত: ১৩:২০, ১৯ এপ্রিল ২০২৩  
সিয়ামের অন্যতম শিক্ষা ‘সহমর্মীতা’ 

রাসূলুল্লাহ সা. এর একান্ত প্রিয় সাহাবী হযরত সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের শাবান মাসের শেষ দিনের ঐতিহসিক ভাষণে বললেন, আগত মাহে রমজান হলো পরস্পর ‘সহমর্মীতার’ মাস। (বায়হাকী) 

‘সিয়াম’ (রোজা)-এর নানা বাস্তবতায়ও মানুষ একে অন্যের প্রতি সহমর্মী হয়ে ওঠে। যেমন: 

১. মাহে রমজানের সারাদিন না খেয়ে থাকার মাধ্যমে সকলের মধ্যে ক্ষুধার্থ মানুষের জঠর জ্বালার কিছুটা হলেও অনুভূত হয়। ফলে সে অন্যের প্রতি সহমর্মী হয়ে ওঠে।
২. রোজাদারের মধ্যে ‘তাকওয়া’ অর্জিত হওয়ার কারণে সে ‘সহমর্মী’ হয়।
৩. একই হাদীসে নবীজি সা. এ মাসকে ‘ধৈর্যের মাস’ হিসাবে ঘোষণা করেছেন। এই ধৈর্য্য ধারণ করতে গিয়েও মানুষ অন্যের প্রতি খানিকটা সহমর্মী হয়ে যায়।
৪. দীর্ঘ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকায় মানুষ শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে সে বাধ্য হয়েই অনেক সময় সহমর্মীতা প্রদর্শন করে।

যেভাবেই হোক কিংবা যে কারণেই হোক না কেন রোজার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এ গুণটি অর্জিত হয়। এটি ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। সমাজের মানুষের মধ্যে সহমর্মীতার গুণ অর্জিত হলে সে সমাজ উন্নত হতে বাধ্য হবে।

সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে চমৎকার একটি ঘটনা আলোচিত হয়েছে। হযরত জারীর ইবনে আব্দিল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা দিনের শুরুতে আমরা রাসূল সা. এর নিকট ছিলাম। এ সময় অনেকটা উলঙ্গ, কেবল সামান্য ডোরাকাটা চাদর পেচিয়ে, গলায় তলোয়ার ঝুলন্ত অবস্থায় কিছু লোক নবীজির সা. নিকট এলেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই বা বলতে গেলে সকলেই ছিল ‘মুযর’ গোত্রের। তাদের জীর্ণতা দেখে রাসূলুল্লাহ সা. এর চেহারা মলিন হয়ে গেল। তিনি কিছু সাহায্য করার আশায় দ্রুত নিজ গৃহে প্রবেশ করলেন। সেখানে কিছুই না পেয়ে বেরিয়ে আসলেন। 

অতঃপর নামাজের সময় হওয়ায় হযরত বেলাল রা. কে নামাজের জন্য আজান দিতে বললেন। আজানের পর নবীজি সা. ইমামতি করে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে তিনি মর্মস্পর্শী এক বক্তৃতা করলেন। তিনি বললেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাদের উভয় হতে বহু পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করেছেন। আর ভয় করো সেই আল্লাহকে; যার দোহাই দিয়ে একে অপরের নিকট অধিকার দাবি করে থাকে এবং ভয় করো আত্মীয়তার বন্ধনকে (ছিন্ন করা হতে)। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন’। (সূরা নিসা: ১) 

অতঃপর রাসূল সা. সূরা হাশরের এই আয়াতটি পাঠ করেন। অর্থ: ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর প্রত্যেকের লক্ষ্য করা উচিত যে, আগামী কাল তথা রোজ কিয়ামতের জন্য সে কি প্রেরণ করেছে’। (সূরা হাশর: ১৮) 

কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেরই তার দিনার (স্বর্ণমুদ্রা), দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা), কাপড়, গমের ও খেজুরের একটা পরিমাণ দান করা উচিত। তিনি বললেন, তোমরা দান করো যদিও তা খেজুরের এক টুকরাও হয়। 

বর্ণনাকারী জারীর রা. বলেন, এ কথা শুনে আনসারদের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি একটি পরিপূর্ণ থলে নিয়ে উপস্থিত হলেন। যা নিয়ে আসতে তার হাত প্রায় অসমর্থ হয়ে পড়েছিল। অতঃপর লোকেরা একে অপরের অনুসরণ করতে লাগলেন। এমনকি অবশেষে আমি দেখলাম যে, খাদ্যসামগ্রী ও কাপড়ের ২টি স্তূপ জমে গেছে। 

এ সময় আমি দেখতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ সা.-এর মুখমণ্ডল আনন্দে যেন তা স্বর্ণমণ্ডিত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো উত্তম পদ্ধতি চালু করবে, তার জন্য এর বিনিময় রয়েছে এবং তার পরে যারা এই কাজ করে তাদের কাজের ছওয়াব সে পাবে। এতে আমলকারীদের ছওয়াব বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। এমনভাবে যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো মন্দ প্রথা চালু করে, তাদের পাপের অংশও সে পাবে; এতে তাদের গুনাহের কিছুই হ্রাস করা হবে না। (মেশকাত, কিতাবুল ইলম)

লক্ষ্য করুন! আমাদের প্রিয় নবী সা. অন্যের ব্যথায় কতটা ব্যথিত হতেন এ হাদীসটি তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। তিনি কতটা সহমর্মী ছিলেন যে, অসহায় ব্যক্তিকে সহায়তা প্রদান না করা পর্যন্ত তিনি স্বস্তি বোধটুকু করতে পারেননি। তাদের অভাব দূর করার পরই তিনি যারপর নাই আনন্দিত হয়েছেন। এটাই হওয়া উচিত একজন প্রকৃত মুমীনের বৈশিষ্ট্য। মাহে রমজান আমাদের সে শিক্ষা প্রদান করে। 

রমজানের বিদায় বেলা আমাদের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন আমরা এ মহৎ শিক্ষার কতটা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি? ঈদের চাঁদ পশ্চিম দিগন্তে উঁকি দেয়ার আগেই আমাদের পড়শীদের খবর নেই। তারা ঈদের আনন্দের জন্য কতটা প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হয়েছে? সাধ্য মোতাবেক আমাদের অধীনস্থ, মহল্লা, গ্রাম, ওয়ার্ড, থানাসহ আরো ব্যাপক পরিসরে খোঁজ নেই। তাদের প্রতি সম্মানের সাথে আমাদের সহায়তার হাত প্রসারিত করি। আমাদের আনন্দগুলোতে তাদের শরীক করি এবং এ চর্চা বছরজুড়ে অব্যাহত রাখতে নিজেকে প্রস্তুত করি। তবেই স্বার্থক হবে আমাদের সিয়াম সাধনা।

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি তার মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত হতে পারবে সে সফলকাম হবে। (সূরা হাশর: ৯)

আল্লাহ তা’আলা আমাদের মাহে রমজানের শিক্ষাগুলো অর্জন করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়