ঢাকা     সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

সাদাকাতুল ফিতরের প্রয়োজনীয় মাসআলা

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ২১ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ১৩:৫৫, ১২ মার্চ ২০২৪
সাদাকাতুল ফিতরের প্রয়োজনীয় মাসআলা

সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এতে রয়েছে উম্মাহর জন্য প্রভূত কল্যাণ। ইসলামি আইনের ভাষায় এটি ‘ওয়াজিব’। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঈদগাহে যাওয়ার আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী: ১৫০৯) কাজেই এ সম্পর্কিত মাসআলা জেনে সে অনুযায়ী আমল করা প্রত্যেক মুমীনের কর্তব্য। সাদাকাতুল ফিতর সম্পর্কিত নিম্নের মাসআলাগুলো প্রয়োজনীয়।

১. প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যার মালিকানায় মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার ওপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। 
২. যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য যে পরিমান সম্পদ থাকতে হয়, সে পরিমান সম্পদ থাকলে ব্যক্তির উপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, বসবাসের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য, অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র- এসব কিছু সাদাকাতুল ফিতরের নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
৩. তবে এখানে পার্থক্য এতোটুকু যে, যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদ এক বছর তার নিকট থাকতে হয়। কিন্তু ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার জন্য এটা শর্ত নয়। শুধু ঈদুল ফিতরের দিন তার নিকট ঐ পরিমান সম্পদ জমা থাকলেই তার উপর ফিতরা ওয়াজিব হবে।  
৪. ঈদের দিন সুবহে সাদেকের সময় থেকে ফিতরা ওয়াজিব হয়। কাজেই কেউ যদি সুবহে সাদেকের পূর্বেই মারা যায়, তার পক্ষে আর ফিতরা দিতে হবে না। অন্যদিকে কারো সন্তান যদি সুবহে সাদেকের পূর্ব মুহূর্তে জন্মগ্রহণ করে তবে তারও ফিতরা দিতে হবে। কিন্তু যদি সন্তান সুবহে সাদেকের পরে জন্ম নেয়, তবে তার জন্য ফিতরা দিতে হবে না।

৫. ঈদের নামাজের পূর্বেই ফিতরা প্রদান করতে হবে। নামাজের পরে দিলে সাধারণ সাদাকহ হবে। ফিতরা হবে না। 
৬. ঈদের দিনের পূর্বেই মাহে রমজানে ফিতরার নিয়ত করে ফিতরা দিয়ে দিলে ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। 
৭. প্রত্যেক পুরুষ তার নিজের পক্ষ থেকে এবং নাবালক সন্তানের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবে। 
৮. একজন নারী সম্পদশালী হলে তাকে শুধু তার নিজের ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। স্বামী, সন্তান, মা, বাবা অথবা অন্য কারও ফিতরা আদায় করা তাঁর ওপর ওয়াজিব নয়। তবে এ নারীর পক্ষ থেকে যে কেউ ফিতরা আদায় করে দিতে পারবে।
৯. কিন্তু একজন পুরুষের ওপর তার সম্পদহীন নাবালক ও প্রতিবন্ধী ছেলে মেয়েদের ফিতরা আদায় করতে হবে। এদের নিজস্ব সম্পদ থাকলে সেই সম্পদ থেকেই ফিতরা দিতে হবে। অবশ্য সাবালক ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী ও পিতা-মাতা একান্নভুক্ত পরিবারে হলে এবং তাদের নিজস্ব সম্পদ বা উপার্জন না থাকলে সেক্ষেত্রে বাবার এদের সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করে দেয়া উত্তম।

১০. কেউ যদি ঋণগ্রস্ত হয়, তাহলে সে ঋণ বাদ দিয়ে নেসাবের হিসাব করবে।
১১. যাদের যাকাত প্রদান করা যায়, তাদের ফিতরা প্রদান করা যায়।
১২. রোজা একটি পৃথক ইবাদত। ফিতরা দেওয়া মাহে রমজানের আরেকটি পৃথক ইবাদত। কেউ যদি কোনো কারণে রোজা পালন না করে বা করতে না পারে, সেক্ষেত্রে তার ফিতরা মাফ হয়ে যাবে না।
১৩. এক জনের ফিতরা এক জনকে দেয়া বা এক জনের ফিতরা কয়েক জনকে ভাগ করে দেয়া উভয়ই জায়েজ। যদি কয়েক জনের ফিতরা এক জনকে দেয়া হয় তাও জায়েজ। তবে একজন গরিবকে অন্তত পূর্ণ একটি ফিতরা দেওয়া উত্তম।
১৪. হাদীসে মোট ৫ প্রকার খাদ্য দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের বর্ণনা পাওয়া যায়। যথা- ১. যব, ২. খেজুর, ৩. পনির, ৪. কিসমিস ৫. গম। এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে চাইলে মাথাপিছু এক ‘সা’ পরিমাণ দিতে হবে। কেজির হিসাবে যা ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম। 

১৫. আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’ দিতে হবে। কেজির হিসাবে ১ কেজি ৬৩৫ গ্রাম। এসব দ্রব্যের মূল্য যেহেতু ওঠা-নামা করে, তাই ফিতরা আদায়ের আগে বাজার-মূল্য যাচাই করে নেয়া উত্তম।
১৬. ফিতরা প্রদানের ক্ষেত্রে উল্লিখিত পণ্যগুলোর মধ্যে ভালোটার মূল্য হিসাব করাটা উত্তম।
১৭. খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে এর মূল্য প্রদান করলে মানুষ তার প্রয়োজন অধিক মেটাতে পারে তাই এসব দ্রব্যের মূল্য প্রদান করাটা উত্তম।
১৮. ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঘোষিত এ বছর জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ১০০ টাকা। 

শেষ কথা হলো, হাদীসে উল্লেখিত ৫টি খাদ্যদ্রব্যের যে কোনো একটি দ্বারা কিংবা তার যে কোনো একটির মূল্য প্রদানের মাধ্যমে সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে। আমাদের দেশে প্রচলন হলো, সকলেই সবচেয়ে কম দামের হিসাব করে তা দিয়ে ফিতরা প্রদান করে। অঢেল বিত্ত বৈভবের মালিকরাও এ সুযোগ গ্রহণ করেন। এটা উচিত নয়। আমাদের কর্তব্য, প্রত্যেকে তার সামার্থ অনুযায়ী বেশি মূল্যের পণ্যটা হিসাব করে ফিতরা আদায় করবেন। প্রয়োজনে নিজে বাজারে গিয়ে উল্লিখিত পণ্যমূল্য যাচাই করে সে হিসাবে ফিতরা প্রদান করবেন। 

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, অর্থ: যে ব্যক্তি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো উত্তম কাজের অনুসরণ করবে, সে উত্তম কাজের প্রতিদান সেই পাবে। (সূরা বাকারা ১৮৪)
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সাদাকাতুল ফিতর যথানিয়মে আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
 

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়