ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যে বাড়িতে সত্যজিৎ রায় কখনো আসেননি

এস এম জাহিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ১ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১০:৪৯, ১ জানুয়ারি ২০২৪
যে বাড়িতে সত্যজিৎ রায় কখনো আসেননি

ছবি: লেখক

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ছোট্ট সুন্দর গ্রাম মসূয়া। এই গ্রামটি বহন করছে অষ্কারজয়ী চলচিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি। সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক বাড়িটি এই গ্রামেই দাঁড়িয়ে আছে।

ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই বাড়ির সামনে একটি বোর্ডে লেখা ‘বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক বসত বাড়ি’ বাড়িটি এখন ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে।

আরো পড়ুন:

সম্প্রতি গিয়েছিলাম এই বাড়ি দেখতে। বাড়িতে গিয়ে প্রথম দৃশ্যই-বৈশাদৃশ্য মনে হলো। বাড়ির সীমানায় বাজার এবং মসুয়া উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত। বাড়ির বাউন্ডারির ভেতরে একটি মাজার এবং মসজিদ। প্রায় ৪.৩ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত বাড়িটি এখন নানা ভাবে, নানা জনের অধিগ্রহণে রয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই বাড়িতে কোনোদিন আসেননি বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়। দেশভাগের সময় এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে তার পূর্বপুরুষরা। এক সময় এই বাড়িতে ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।

তাদের বসবাসের মূল ভবনটি পরিত্যক্ত। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ভবনটি সংস্কার করছে। যেটা আরও অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। যাইহোক দেরিতে হলেও সংস্কার শুরু হয়েছে। ওখানে মিউজিয়াম তৈরির কাজ চলছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রালয়ের পক্ষ থেকে একটা ছোট-খাটো রেস্ট হাউস করে দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি থাকতে চায় তাহলে থাকতে পারে। ওখানে একজন কেয়ার টেকার বাড়িটির দেখভাল করেন।

বাড়ির সামনে একটি পাড়-ভাঙা পুকুর। স্থানীয় একজন জানালেন তিনি তার পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছেন- এই বাড়ি লাগোয়া যে নরসুন্দা নদী সেই নদীপথেই সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষেরা যাতায়াত করতেন।

পরিতাপের বিষয়, আমরা খুব বেশি শিক্ষা সচেতন বা সংস্কৃতি সচেতন হতে পারিনি। যার ফলে সত্যজিৎ রায় যে কে- তা এখনও বুঝিনা অথবা বুঝতে বুঝতে দেরি হয়ে যায়।

সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক বাড়ি কিছুক্ষণ ঘুরে দেখলাম। বসবাসের মূল ভবনের সংস্কার কাজ দেখে মনে হলো কাজটা ঠিকঠাক হচ্ছে না। এই ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা স্থাপত্যবিদদের দ্বারা এবং তাদের তত্বাবধানে সংস্কার করা প্রয়োজন। যেন-তেন ভাবে একজন রাজমিস্ত্রী দিয়ে সংস্কারের কাজ করালে স্থাপনার আদি রূপটা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে। বাস্তবিক অর্থে তাই হচ্ছে। যেটা আমি জঙ্গলবাড়িতে দেখলাম। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলের একটা মসজিদ সেটা এমনভাবে প্লাস্টার করা হয়েছে, যেন মসজিদটি সম্প্রতি বানানো হয়েছে।

এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আমাদের সংস্কৃতির ধারক-বাহক। এগুলোর প্রত্নতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। যার মধ্যে নিহিত রয়েছে একটি জাতির গৌরবময় পরিচয়। কিন্তু আমার উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছি। ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে। যেমন চদ্রাবতীর বাড়ি। সাংস্কৃতিক বিবেচনায় আট-দশটা জমিদার বাড়ির থেকে আগে এটা সংস্কার করা জরুরি।

আমাদের যে ঐতিহ্য, ইতিহাস, প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ মোটামুটি সবগুলোই অবহেলিত। টেকনাফে মাথিনের কূপ দেখতে গিয়েছিলাম, সেখানেও অযত্নের ছাপ স্পষ্ট। শুধু থানা কম্পাউন্ডের ভেতরে বলেই হয়তো এখন পর্যন্ত টিকে আছে। নাহলে সম্ভবত এটিও থাকতো না।

এরকম ছড়ানো ছিটানো যেসব ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে এবং প্রাচীন সাহিত্যে যেগুলোর উল্লেখ পাওয়া যায় সেগুলো যতদূর সম্ভব আমরা যেন সংরক্ষণ করি।

সযত্নে, সদিচ্ছায় যেন সংস্কার করি। সংস্কারের নামে প্রত্নতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক মূল্য যেন খর্ব না হয়। সংস্কার ভুল হলে এসব ঐতিহাসিক নির্দশন তার সৌন্দর্য হারাবে, গৌরব হারাবে। ভবিষৎ প্রজন্ম সত্যিকার ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হবে।

/স্বরলিপি/

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়