ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফুরিয়ে গেছে মার্বেল খেলার দিন!

আবদুল মান্নান পলাশ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২১, ১৪ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফুরিয়ে গেছে মার্বেল খেলার দিন!

মার্বেল খেলা (ফাইল ফটো)

আবদুল মান্নান পলাশ, চাটমোহর (পাবনা) : আমরা যাকে মার্বেল বলে চিনি প্রয়াত কথা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে তা হচ্ছে ‘রয়্যাল গুলি’। সুনীল তার বিখ্যাত ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় শৈশবের স্মৃতিচারণে এই রয়্যাল গুলির কথা উল্লেখ করেছেন।

 

তিনি লেখেন, ‘একটা রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো / লাঠি লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে / লস্করবাড়ির ছেলেরা / ভিখারীর মতো চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি।’

 

দারিদ্র্যের কশাঘাতে কৈশোরে দুর্বার আকর্ষণের এই মার্বেল কেনার সামর্থ্য না থাকা কতটা কষ্টের, তারই বর্ননা সুনীলের এই কবিতার পংক্তিতে দৃশ্যমান। কোলকাতায় মার্বেলকে বলা হয় রয়েলগুলি।

 

আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে মার্বেল খেলাটা জমে উঠতো মূলত বিশেষ কোন উৎসবে-পার্বণে। তবে এখন আর তেমনভাবে দেখা যায় না। মার্বেলের স্থান দখল করেছে মুঠোফোনে-কম্পিউটারে কার্টুন আর গেমসে।

 

গ্রামাঞ্চলে ছিটেফোঁটা হলেও মার্বেল খেলার প্রচলন আছে এখনো। গাঁয়ের পায়ে চলার সরু পথ, বাড়ির পাশের আম-কাঁঠালের বাগানের ভেতর ফাঁকা জায়গাসহ সামান্য খোলামেলা জায়গাতেই চলে এ খেলা।

 

মার্বেল খেলার ধরণ অনেকটা এরকম : ছেলেরা নির্দিষ্ট একটা ছকের বাইরে একটা গর্ত করে। ছকের বাইরে বসে প্রত্যেকে একটি করে মার্বেল ওই গর্তে ফেলার চেষ্টা করে। যার মার্বেল গর্তে পড়ে বা সবচেয়ে কাছে যায় সে প্রথম দান পায়। যে প্রথম দান পায় সবাই তার হাতে ২/৩/৪টি করে মার্বেল জমা দেয়। সে মার্বেলগুলো ছকের বাইরে বসে সামনের দিকে ওই গর্তের আশপাশে আলতো করে ছড়িয়ে দেয়। এরপর অন্য খেলোয়াড়রা একটা নির্দিষ্ট মার্বেলকে বলে ‘বাদ’।

 

অর্থাৎ ওই মার্বেল ছাড়া বাকি যে কোন একটি মার্বেলকে অন্য একটি মার্বেল ছেড়ে দিয়ে স্পর্শ করতে হবে। যদি এমনটা পারে তাহলে ওই দান সে জিতে যায়। আর না পারলে পরবর্তী জন একইভাবে খেলার সুযোগ পায়। তবে ‘বাদ’ দেয়া মার্বেল কিংবা অন্য একাধিক মার্বেলকে ছুড়ে দেয়া মার্বেল স্পর্শ করলে ওই খেলোয়াড়কে ফাইন দিতে হয়। আর দান জেতার জন্য পরবর্তী খেলোয়াড় ফাইন হওয়া মার্বেলসহ সেগুলো ছড়িয়ে দিয়ে খেলতে থাকে। যে কেউ দান জিতলে আবার পুনরায় খেলা শুরু হয়। এভাবেই চলতে থাকে যতক্ষণ না প্রতিপক্ষ আত্মসমর্পণ করে কিংবা তার কাছের মার্বেল শেষ না হয়ে যায়। চাটমোহরে বা চলনবিল এলাকায় এভাবেই মার্বেল খেলা হয়ে থাকে।

 

কোন কোন অঞ্চলে অবশ্য মার্বেল খেলাকে বিঘত খেলাও বলে। গ্রামের রাখাল বালক থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও দেখা যায় মার্বেল আসক্তি। দেখা গেছে, অনেকেই স্কুল ব্যাগের ভেতর কিংবা হাফপ্যান্টের পকেটে মার্বেল নিয়ে ঘুরছে।

 

আর এ জন্য অভিভাবক কিংবা শিক্ষকের হাতে কানমলা খায়নি এমন কিশোর এক সময় খুঁজে পাওয়া মুশকিলই ছিল। স্কুলে টিফিনের ফাঁকে সামান্য দূরে শিক্ষকদের চোখের আড়ালে গিয়েও শিশু-কিশোররা মেতে উঠত মার্বেল খেলায়।

 

চাটমোহর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরার তার মার্বেল জীবন সম্পর্কে বলেন, ‘আমার এলাকায় আমি ছিলাম বড় মাপের একজন মার্বেলিষ্ট। সকালেই খেলা শুরু হতো, দুপুর গড়িয়েও চলতো সে খেলা। মার্বেল খেলা নিয়ে শিক্ষকের হাতে, বাবার হাতে কত যে মার খেয়েছি তার ইয়াত্তা নেই।

 

মার্বেল খেলা নিয়ে এমন নানা স্মৃতি এখনও অনেকের মাঝে বিদ্যমান, আর কয়েক দশক পর স্মৃতিমন্থনের মতো কাউকে খুঁজে পাওয়াও কঠিন হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা /১৪ আগস্ট ২০১৪/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়