ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আসামে কংগ্রেস নেতার ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া নিয়ে তোলপাড়

কলকাতা ব্যুরো || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১২, ৩০ অক্টোবর ২০২৫   আপডেট: ১৪:১৬, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
আসামে কংগ্রেস নেতার ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া নিয়ে তোলপাড়

ভারতের আসামের শ্রীভূমি জেলায় জাতীয় কংগ্রেসের এক কর্মসূচিতে ভারতের জাতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া নিয়ে রাজ্যটির রাজনীতিতে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। 

অনুষ্ঠানে জেলা পর্যায়ের এক কংগ্রেস নেতা ‘আমার সোনার বাংলা’ আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি নিজস্ব কণ্ঠে গাওয়ার অপরাধে রাতারাতি তাকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে।

আরো পড়ুন:

ঘটনাচক্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানটি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের ‘জাতীয় সংগীত’ হিসেবে পরিচিত। বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেস এখন ‘বাংলাদেশমুগ্ধ’। তাদের বক্তব্য, ‘এমন এক সময় এই ঘটনা ঘটল যখন বাংলাদেশের নতুন মানচিত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশিরভাগ অংশকে নিজেদের বলে দেখানো হয়েছে।’ ঘটনাটি নিয়ে বিজেপি রাজনীতির মাঠ গরম করার চেষ্টা করলেও, কংগ্রেস এনিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।

বিজেপির অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলছেন অনেকেই। কারণ, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, যা দেশপ্রেমের গান হিসাবে পরিচিত। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে তিনি গানটি লিখেছিলেন। গানটি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের বিভাজন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। ১৯১১ সালে সেই বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার করা হয়। স্বাধীন হওয়ার বহু বছর পর ১৯৭১ সালে ‘আমার সোনার বাংলা’কে নিজেদের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করে বাংলাদেশ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় বাংলার প্রকৃতি, মাটি, আর মানুষের প্রতি ভালবাসা উঠে এসেছে। দুই বাংলার বাঙালিরা এখনও গানটি নানা অনুষ্ঠানে গেয়ে থাকেন। এমনকি, দেশের নানা প্রান্তে বাঙালি রেস্তোরাঁগুলোর নামেও ‘আমার সোনার বাংলা’ ব্যবহৃত হয়। ফলে আসামের শ্রীভূমি জেলা, যার ভৌগোলিক অবস্থান প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সীমানার খুব কাছাকাছি এবং বরাক উপত্যকার অন্তর্গত, সেখানে এই গান গাওয়া আদৌ আশ্চর্যের নয় বলে মনে করছেন অনেকেই।

এই বিতর্কে মুখ খুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার ডেপুটি লিডার গৌরব গগৈ। তার বক্তব্য, “বিধুভূষণ দাস, ৮০ বছরের একজন প্রবীণ সদস্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ আমি তোমায় ভালোবাসি গেয়েছেন। বিজেপি বলছে, এটা নাকি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের গান। তারা বুঝতেই পারছে না এই গানের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব কতটা।”

তিনি আরো বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয় কবি হিসাবে ভারতের গর্ব এবং নোবেলজয়ী সাহিত্যিক। একটা বাংলা গান গাওয়া মানে আমাদের ঐতিহ্য ও সাহিত্যিক উত্তরাধিকারের উদযাপন, সেটাকে কেন বিকৃতভাবে দেখা হবে?”

তবে বিজেপি কিন্তু নিজের কথায় অনড়। দলের আসাম শাখা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছে, “সংকেত একদম পরিষ্কার। কয়েক দিন আগেই বাংলাদেশ সাহস করে এমন মানচিত্র প্রকাশ করেছে যেখানে গোটা উত্তর-পূর্বকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর এখন সেই বাংলাদেশমুগ্ধ কংগ্রেস আসামে বসে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাইছে! এর পরেও কেউ যদি বোঝে না কী পরিকল্পনা চলছে, তাহলে হয় সে অন্ধ নয়তো সহযোগী।”

আসামের মন্ত্রী অশোক সিংহলও লিখেছেন, “বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া হয়েছে আসামের শ্রীভূমিতে কংগ্রেসের এক সভায়, সেই দেশ, যারা উত্তর-পূর্বকে আলাদা করতে চায়! এখন স্পষ্ট কেন কংগ্রেস বছরের পর বছর বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের উৎসাহ দিয়েছে, ভোটব্যাংক রাজনীতির জন্য, রাজ্যের জনতাত্ত্বিক ভারসাম্য নষ্ট করতেই।”

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বিষয়টিকে জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক বিতর্কে নিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সংশ্লিষ্ট জাতীয় কংগ্রেস নেতার গানের ভিডিও ফুটেজটি দিল্লির বিজেপি নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছেন।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়