ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মেহেরপুরে গরুর ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব

মেহেরপুর প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
মেহেরপুরে গরুর ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব

মেহেরপুর জেলায় গরুর ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যে সব বাড়ি বা খামারে এই রোগ ঢুকেছে, সেখানে সব গরু আক্রান্ত হচ্ছে। বেশকিছু গরু মারা গেছে। এতে খামারি ও কৃষকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। 

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, মেহেরপুর জেলায় বর্তমানে ৭৫ হাজার ৩৮০টি গরু, ১ লাখ ৮৫ হাজার ছাগল ও ১৫ হাজার ভেড়া রয়েছে। ভারত থেকে আসা গরুগুলো প্রায়ই অসুস্থ হচ্ছে। সংক্রামক রোগ হওয়ায় মূলতঃ ভারতীয় গরু থেকে ক্ষুরা রোগের বিস্তার ঘটেছে। বাছুর গরুর মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার যুগিন্দা গ্রামের বোরহানউদ্দিন জানান, তিনি ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু (বকনা) কিনে লালনপালন করছিলেন। সম্প্রতি সেই গরুটি ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের তোহিদুল ইসলাম জানান, তিনি দুই লাখ টাকা দিয়ে ফ্রিজিয়ান জাতের তিনটি গরু কিনে মোটাতাজা করছিলেন। হঠাৎ করে একটি গরু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এর পরদিন ক্ষুরা রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। মুখের ভিতরে ব্যথাযুক্ত ঘা হয়ে মুখ থেকে ফেনাযুক্ত লালা ঝরতে থাকে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। পায়ের খুরার মাঝেও ঘা দেখা দেয়। এর কয়েকদিনের মধ্যে অন্য দুটি গরুও আক্রান্ত হয়। গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করিয়ে ভালো না হওয়ায় শেষপর্যন্ত গরুটি জবাই করে গোশত বিক্রি করে দেন। অন্য দুটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। 

তিনটি গরুর চিকিৎসা করতে তার ছয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তোহিদুল ইসলাম। 

ওই গ্রামের হামিদুল ইসলাম জানান, তার তিনটি গরু রয়েছে, তিনটিই ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়। তবে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা দিয়ে ভালো হয়ে গেছে। একইভাবে ওই এলাকার যার যার বাড়িতে গরু রয়েছে, প্রায় সব বাড়িতে ক্ষুরা রোগ দেখা দিয়েছে বলেও জানান তিনি। 

একই উপজেলার বানিয়াপুকুর গ্রামের খামারি শাজাহান আলী জানান, তার খামারে ৫২টি গরু রয়েছে। যার মধ্যে ৩০টি গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়। প্রাণিসম্পদ দপ্তরে কোনো টিকা না থাকায় বাইরে থেকে কিনে প্রয়োগ করেছেন। 

মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের গ্রাম্য ডাক্তার শরিফুল ইসলাম জানান, এলাকায় ক্ষুরা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। একটি গরুর চিকিৎসা করাতে কৃষককে এক থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। শুরুতে চিকিৎসা দিতে পারলে কয়েকদিনের মধ্যে গরু সুস্থ হয়ে যায়। তিনি জানান, উজলপুর গ্রামে অন্ততঃ ১০টি গরু মারা গেছে। 

দক্ষিণ শালিকা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শাহিদুল ইসলাম জানান, শালিকা, বাড়িবাঁকা, বুড়িপোতা, রাজাপুর, রাঁধাকান্তপুরসহ আশপাশের সব গ্রামে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তবে এখন গরুগুলো সুস্থ হয়ে উঠছে। 

ভুক্তভোগীরা বলছেন, তারা গ্রাম্য ডাক্তারের কাছেই বেশি চিকিৎসা করাচ্ছেন। কেননা ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরু ঠিকমতো হাঁটতে না পারায় উপজেলাশহরে সরকারি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। আবার সেখানে নেওয়া হলেও ঠিকমত চিকিৎসক পাওয়া যায় না। আবার এলাকায় ডেকে এনে চিকিৎসা করালে তাদের ভিজিট দিতে হয়। 

মেহেরপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় মেহেরপুর জেলার অনেকেই ওই থেকে বিভিন্নভাবে গরু নিয়ে আসেন। তাই আক্রান্তের হার একটু বেশি। তবে ওষুধের কোনো সংকট নেই। চিকিৎসাসেবাও দেওয়া হচ্ছে ঠিকমতো। 

তিনি জানান, মেহেরপুরের তিন উপজেলার কোনোটিতে ভেটেরিনারি সার্জন নেই। জেলায় প্রকল্পের অধীন মোট পাঁচজন ডিপ্লোমাধারী পশু চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। 
 

মহাসিন/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়