ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিচার দেখে যেতে পারলেন না মোহাম্মদ আলী

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ১৫ আগস্ট ২০২২  
বিচার দেখে যেতে পারলেন না মোহাম্মদ আলী

প্রতীকী ছবি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শেষ হলেও একইদিন খুনিদের দিকবেদিক ছোঁড়া কামানের গোলায় মোহাম্মাদপুরে শেরশাহ সুরী রোডে ১৩ জন নিহতের মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। সাক্ষী না আসায় থমকে আছে বিচার। কবে নাগাদ মামলার বিচার শেষ হবে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৬ বছর আগে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। তবে এতদিনেও মামলার বিচার শেষ হয়নি। ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি এখন সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে সিআইডির তৎকালীন এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ১৮ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। এরপর আর কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। গত বছর ২ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একটি আবেদন করা হয়। এ মামলার পলাতক আসামিদের মধ্য থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোন কোন আসামি দণ্ড কার্যকর বিষয়ে একটি প্রতিবেদন করার প্রার্থনা করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার এবং মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে এক আসামির বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু তথ্যবিভ্রাট থাকায় পুনরায় প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন আদালত। প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে না।  আগামী ২৩ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য রয়েছে।

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান চৌধুরী পুলিশ বিভাগকে দায়ী করে বলেন, ‘সাক্ষী হাজির করার দায়িত্ব পুলিশের। আমরা আদালত থেকে যথাযথভাবে সাক্ষী হাজির করতে পুলিশের কাছে সমন পাঠানোর পরও তারা তা করছে না।’

তিনি আরও বলেন, মামলাটিতে সাক্ষী হাজিরের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইজিপিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমেও আদালতের আদেশ পাঠানো হয়েছে। তাতেও কাজ হচ্ছে না। মামলাটিতে দুই তদন্ত কর্মকর্তাসহ আরও কমপক্ষে ১২-১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা প্রয়োজন।’

এদিকে মামলার বাদী মোহাম্মদপুর থানাধীন ৩২/৫ শেরশাহ সূরি রোডের বাসিন্দা সে দিনের ঘটনায় আহত মোহাম্মাদ আলী গত বছর ১৫ আগস্ট মারা গেছেন বলে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাহনাজ আক্তার মেরিনার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

তিনি বলেন, স্বামীর ইচ্ছা ছিল বিচার দেখে যাবেন। কিন্তু বিচার শেষ হওয়ার আগেই তিনি মারা যান। এরপর সন্তানদের নিয়ে আর্থিতভাবে অসহায়ত্বের মধ্যে বাবার বাড়ি আছি।

প্রসঙ্গত, ৪৩ বছর আগের ওই হত্যার ঘটনায় মামলা হয় ১৯৯৬ সালে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের সময় সেনা সদস্যরা কামানের গোলা ছুঁড়লে তা গিয়ে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডর ৮ ও ৯ এবং ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ির (টিনশেড বস্তি) ওপর পড়ে। লে. কর্নেল মুহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারি) ছোড়া কামানের গোলার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। মুহূর্তে ধুলায় মিশে যায় ওই বস্তি। ওই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৩ জন মারা যায়। প্রায় ৪০ জন আহতের মধ্যে কয়েকজন পুরুষ সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে। নিহতরা হলো রিজিয়া বেগম ও তার ছয় মাসের মেয়ে নাসিমা, কাশেদা বেগম, ছাবেরা বেগম, সাফিয়া খাতুন, আনোয়ারা বেগম (প্রথম), ময়ফুল বিবি, আনোয়ারা বেগম (দ্বিতীয়), হাবিবুর রহমান, আবদুল্লাহ, রফিজল, সাহাব উদ্দিন আহম্মেদ ও আমিন উদ্দিন আহম্মেদ।

ওই ঘটনায় ৮ নম্বর বাড়ির মালিক মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ১৯৯৬ সালের ২৯ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় এ মামলা করেন। ২০০১ সালের এপ্রিলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

১৭ আসামির মধ্যে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরা হলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ। ওই পাঁচজন ছাড়া এ মামলায় প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে (প্রয়াত) গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।  গত বছর ১২ এপ্রিল ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদেরও ফাঁসি কার্যকর হয়।

এখনো পলাতক রয়েছেন-লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) শরিফুল হক ডালিম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ইবি, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এএম রাশেদ চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আহমদ শরিফুল হোসেন ওরফে শরিফুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) মো. কিসমত হাসেম, ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসার, রিসালদার (অবসরপ্রাপ্ত) মোসলেম উদ্দিন ওরফে মোসলেহ উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী ও এলভি মো. আলী হোসেন মৃধা।

এদিকে মামলার নথিতে দেখা যায়, ৫ সাক্ষীকে হাজির করতে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে রেখেছেন। তারা হলেন, চার্জশিটের ৫২ নম্বর সাক্ষী মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ডা. এজাজ মাহমুদ ও ৫৩ নম্বর সাক্ষী ডা. আবদুস সামাদ, ৫৪ নম্বর সাক্ষী ঢাকা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. এফএম হাসান, ৫৫ নম্বর সাক্ষী ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম হাবিবুর রহমান এবং ৫৬ নম্বর সাক্ষী ঢাকা মহানগর হাকিম এম আফজালুর রহমান।

/মামুন/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়