ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

রায় বৃহস্পতিবার

‘সগিরা মোর্শেদকে খুনের চুক্তি হয় ২৫ হাজার টাকায়’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১১:১০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
‘সগিরা মোর্শেদকে খুনের চুক্তি হয় ২৫ হাজার টাকায়’

সগিরা মোর্শেদ

৩৫ বছর আগে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় খুন হন সগিরা মোর্শেদ সালাম (৩৪)। সেই ঘটনায় করা মামলায় রায়ের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন ঢাকার বিশেষ  জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইনের আদালত।

এই মামলার আসামিরা হলেন-সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, জা সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহিন, শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান, মারুফ রেজা ও মন্টু মণ্ডল।

সগিরা মোর্শেদ হত্যার ঘটনায় করা মামলা ২৫ জন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করে গড়ে একজন করে আসামি গ্রেপ্তার করেছেন। ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্টু নামে একজনকে আসামি করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এরপর মামলাটি উচ্চ আদালতে স্থগিত করা হয়।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালে মামলাটি তদন্তের ভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তে নেমে পিবিআই জানতে পারে, মারুফ রেজা মামলা স্থগিতাদেশের জন্য আবেদন করেন। সেখান থেকে পুনরায় তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের পর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে উঠে আসে সগিরা মোর্শেদকে কীভাবে হত্যা করা হয়।

ডা. হাসান আলী চৌধুরী আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ইস্কাটনে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন। আসামি মারুফ রেজা তার রোগী ছিলেন। সে শহরে মাস্তানি করতো। সগিরা মোর্শেদকে শায়েস্তা করার জন্য তিনি তাকেই ঠিক করেন। তার সাথে ২৫ হাজার টাকায় হয় এ কাজের জন্য। কিন্তু সে সগিরা মোর্শেদকে চিনতেন না। এজন্য তার শ্যালককে দায়িত্ব দেন সগিরা মোর্শেদকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য।

১৯৮৯ সালের ২৪ জুলাই সগিরা মোর্শেদের মেঝ বোন আমেরিকা থেকে ঢাকায় আসেন। এজন্য সগিরা মোর্শেদ ও আব্দুস সালাম তাদের রাজারবাগের বাসায় অনুষ্ঠানে সগিরা মোর্শেদের ভাই ডা.গওজ নেওয়াজ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। গওজ নেওয়াজকে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য সগিরা মোর্শেদ ২৫ জুলাই বড় মেয়েকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে নামিয়ে দিয়ে মেঝ মেয়ে ও ছোট মেয়েকে নিয়ে ধানমন্ডি বাবার বাসায় যান। বিকেল ৪টার দিকে সগিরা মোর্শেদ বাবার বাসা থেকে রাজারবাগে স্বামীর বাসায় ফিরে আসেন। সগিরা মোর্শেদের বড় মেয়ে সিদ্ধেশ্বরী ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ডে শিফটে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো। তার স্কুল ছিলো দুপুর সোয়া একটা থেকে। মা বড় মেয়েকে নিয়মিত রিকশায় স্কুলে আনা নেওয়া করতো। বিষয়টি ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী শাহিন এবং শ্যালক আনাস মাহমুদ জানতো। ২৫ জুলাই হাসান আলী চৌধুরী দুপুর দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে আনাসকে মৌচাকে গিয়ে মারুফ রেজাকে যেন সগিরা মোর্শেদকে চিনিয়ে দেয়। হাসান আলী চৌধুরীর কাছ থেকে বিস্তারিত টেলিফোনে জেনে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে বাসে, পরে টেম্পুতে করে বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে মৌচাক পৌঁছান। আনাস পৌঁছানোর প্রায় ১৫/২০ মিনিট পর মারুফ রেজা মোটরসাইকেলে মৌচাক পৌঁছান। মোটর সাইকেলে করে তারা দুই জনে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের দিকে চলে যায়। তারা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের গেটের একটু দূরে মোটরসাইকেলে বসে সগিরা মোর্শেদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সগিরা মোর্শেদ বড় মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে আনার জন্য বাসা থেকে বের হন। চার টাকায় ছালাম মোল্লা নামে এক রিকশাচালকের রিকশা ভাড়া করে স্কুলের দিকে রওনা দেন। মালিবাগ মোড় পেট্রোল পাম্পের সামনে গিয়ে মৌচাকের গলির ভিতর দিয়ে সগিরা মোর্শেদের রিকশাটি সিদ্ধেশ্বরীর মাঝামাঝি অতিক্রমকালে আগে থেকে অপেক্ষারত  আনাস মাহমুদ আঙ্গুল দিয়ে মারুফ রেজাকে ‘এটা সগিরা মোর্শেদ’ বলে চিনিয়ে দেয়। মারুফ রেজা তাৎক্ষণিকভাবে মোটর সাইকেলে রিকশা কিছুক্ষণ ফলো করে। পরবর্তীতে রিকশার সামনে গিয়ে মোটরসাইকেল দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে দাঁড় করায়। তারা দুজন মোটরসাইকেল থেকে নেমে পড়ে। মারুফ রেজা সগিরা মোর্শেদের হাতের ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। স্বর্ণ টানা হেঁচড়া করতে থাকেন। সগিরা মোর্শেদ সামান্য চিৎকার চেচাঁমেচি করতে থাকে। মারুফ রেজা তাকে থ্রেট করে। সগিরা মোর্শেদ ওই সময় আনাস মাহমুদকে চিনে ফেলে। বলে,‘তুমি তো রেজওয়ান, তোমাকে আমি চিনি। তুমি এখানে কেন।’এই কথা বলার পরপরই মারুফ রেজা কোমরে থাকা রিভলবার বের করে এক রাউন্ড গুলি করে। প্রথম গুলিটি সগিরা মোর্শেদের ডান হাতের কনুইয়ের নিচে লাগে। আনাস মারুফ রেজাকে গুলি করতে নিবৃত্ত না করলে মারুফ আরেক রাউন্ড গুলি করে। দ্বিতীয় গুলি সগিরা মোর্শেদের বুক ভেদ করে সোজাসুজি পিঠ দিয়ে বের হয়ে রিকশার হুড ছিদ্র হয়ে যায়। 

আনাস মাহমুদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, সগিরা মোর্শেদের বুকে গুলি লাগার সাথে সাথে তিনি রিকশার বাম দিকে হেলে পড়েন। তার পুরো শরীরসহ রিকশা রক্তাক্ত হয়ে পড়ে। সগিরা মোর্শেদকে দ্বিতীয় গুলি করার পর আনাস মাহমুদ মারুফ রেজাকে বলেন, চলো পালাই। তারা সগিরা মোর্শেদের ব্যাগ ফেলে দেয়। সগিরা মোর্শেদের হাতে স্বর্ণের বালা থেকে যায়। ভীতি ছড়ানোর জন্য মারুফ রেজা তাৎক্ষণিক উপরের দিকে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এরপর তারা সেখান থেকে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সামনে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সগিরা মোর্শেদকে বহনকারী রিকশাচালক ছালাম মোল্লা একটি ইট হাতে হ্জ্যাাকার, হাইজ্যাকার বলে চিৎকার করতে করতে ধাওয়া করে। শান্তিনগরের কাছে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সামনে আনাস মাহমুদকে মারুফ রেজা মোটর সাইকেল থেকে নামিয়ে দেন। এদিকে রিকশাচালক ফিরে এসে দেখেন সগিরা মোর্শেদ নেই। রিকশায় রক্ত দেখতে পাই।  পরে তিনি রমনা থানায় গিয়ে বিষয়টি জানান।

মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন পিবিআই ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) এর পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। চার্জশিটে সগিরা মোর্শেদকে ২৫ হাজার টাকা খুনের চুক্তির বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, চুক্তিকৃত ২৫ হাজার টাকার মধ্যে হাসান আলী মারুফ রেজাকে ১৫ হাজার টাকা দেন। ১০ হাজার টাকা পরে দেওয়ার কথা বললেও তিনি আর তাকে সেই টাকা দেননি।

/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়