যেভাবে হারিয়ে গেল সাইবার ক্যাফে
![যেভাবে হারিয়ে গেল সাইবার ক্যাফে যেভাবে হারিয়ে গেল সাইবার ক্যাফে](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2022March/cyber-cafe-risingbd-2205051526.jpg)
জরুরি ই-মেইল করা দরকার অথচ আপনার বাসায় ইন্টারনেট নেই, কোনো সমস্যা নাই, এলাকায় ‘সাইবার ক্যাফে’ আছে না! অথবা জরুরি কোনো কাজ করার সময় আপনার বাসার ইন্টারনেট সমস্যা দেখা দিলো। সেক্ষেত্রেও ভরসা ছিল সাইবার ক্যাফে।
নব্বই দশকের পরপর এদেশে ইন্টারনেট ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকলেও সেটা ধরাছোঁয়ার মধ্যে ছিল না। কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের দাম ছিল মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। আর ইন্টারনেটও এখনকার মতো এতো সহজলভ্য ছিল না।
সহজলভ্য বলতে শুধু খরচের ব্যাপারই না। তখন ইন্টারনেট পেতে হলে বাসায় টেলিফোনের লাইন থাকতে হতো। সেটাও কম ঝক্কি ঝামেলার ছিল না। যাদের এতো কিছুর সামর্থ্য ছিল না, তাদের ভরসার জায়গা ছিল ওই সাইবার ক্যাফে।
আবার চাকরি পাওয়ার আশায় অনেকেই কম্পিটারের বিভিন্ন কোর্স করতেন কিন্তু তাদের অনেকেরই হয়তো বাসায় ল্যাপটপ কিংবা পিসি ছিল না, তাদের জন্যও সাইবার ক্যাফে ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। যাতে কম্পিউটারের কোর্স চর্চার অভাবে ভুলে না যায়, সেজন্য অনেকেই সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে চর্চা করতেন।
এভাবেই সাইবার ক্যাফে সামাজিক দায়বদ্ধতার পাশাপাশি ভালো একটা ব্যবসা হিসেবেও আবির্ভিত হয়েছিল সেসময়। কিন্তু অপব্যবহার সব কিছুকেই ধ্বংস করে দেয়। সাইবার ক্যাফের ক্ষেত্রেও হয়েছিল তাই।
সাইবার ক্যাফেগুলোতে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য পাশাপাশি দুটি কম্পিউটার ডেস্কের মাঝে ছোট্ট করে আড়াল করার ব্যবস্থা থাকতো। এটার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ভালোই ছিল। যাতে একজন ব্যবহারকারী অন্যের ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি দেখতে না পায়।
এক সময় এই প্রাইভেসির দেয়াল ‘বড়’ হতে থাকে। এবং সেটা এক সময় ছোট ছোট খুপরিতে রূপ নেয়। আর এখান থেকেই সমস্যার শুরু। এই খুপরিগুলো নানা অসামাজিক কাজে অপব্যবহৃত হতে থাকে। কেউ এই খুপরির সুযোগ নিয়ে অশ্লীল ভিডিও দেখে, তো কেউ এই খুপরিতে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে সময় কাটাতে থাকে। এভাবে সাইবার ক্যাফেগুলো তাদের মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে আসতে থাকে।
অন্যদিকে ল্যাপটপ, পিসিও ধীরে ধীরে সহজলভ্য হয়ে যায়। দেশের ইন্টারনেট দুনিয়ায়ও আসে ব্যাপক পরিবর্তন। মোবাইল ইন্টারনেটের পাশাপাশি ডঙ্গলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা চালু হয় দেশে। ফলে ইন্টারনেট চলে আসে মধ্যবিত্তের ধরা ছোঁয়ার মধ্যে। অন্যদিকে সাইবার ক্যাফেগুলোর অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে ওঠায়, এক সময় এসব ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসা পরিবর্তনে বাধ্য হয়।
তবে সাইবার ক্যাফে উঠে গেলেও ‘ফোন-ফ্যাক্সের’ দোকানে সাইবার ক্যাফের কিছু সুবিধা এখনো পাওয়া যায়। বরং আগের চেয়ে বেশিমাত্রায় পাওয়া যায়। কেননা এসব দোকানে প্রশিক্ষিত লোক থাকে, তারা আপনার চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে পারেন। যেমন, কেউ যদি সিভি বানাতে চান কিংবা কোনো চাকরির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে চান, এসব দোকানের ব্যক্তিরা চার্জের বিনিময়ে এসব সেবা দক্ষতার সঙ্গে প্রদান করে থাকে।
এভাবে একটি ব্যবসা আরেকটি ব্যবসাকে টেকওভার করে নেয় আর বিলুপ্তির পথে চলে যায় এক সময়ের বিপুল জনপ্রিয় সাইবার ক্যাফে। যেটা ঈদেও বিনোদনের একটি মাধ্যম হিসেবে একসময় বিবেচ্য ছিল। অনেক প্রেমিক জুটি ঈদে সাইবার ক্যাফেতে নিরাপদ সময় কাটাতে পছন্দ করতো।
/ফিরোজ/
আরো পড়ুন