ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঋদ্ধআর্ক: ফিরে দেখার গল্প

তামিম রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঋদ্ধআর্ক: ফিরে দেখার গল্প

তখন ২০১৮ সাল। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন। জীবনের নতুন একটি অধ্যায় রচনার উদ্দেশে ১০৬ একরের ক্যাম্পাসে প্রবেশ। অপেক্ষা করছিল নতুন কিছু, প্রতীক্ষায় ছিলাম ভালো কিছুর। তখনো কি কেউ জানতো কীভাবে হতে যাচ্ছে প্রত্যেকের নতুন অধ্যায়ের সূচনা, বা এখনো কি কেউ জানে এই অধ্যায়ের সমাপ্তি কেমন হবে?

কিছু বুঝে উঠতে না উঠতেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম মাসটি কেটে গিয়েছিল। জানুয়ারির ৫ তারিখ বগুড়ার ছেলে আল আসিফ অনিকের ক্রিকেট বল লেগে নাক ফাটল। তাকে দেখভাল করার জন্যে সবার সেই কী প্রচেষ্টা! সেই থেকে নিজেদের আপন হওয়া শুরু। আস্তে আস্তে শিখেছিলাম ক্যাম্পাসে ব্যাচ বলে একটা ব্যাপার আছে। ক্রমে ক্রমে শুরু হয়েছিল আমাদের সেই নিজস্বতা অর্জনের চেষ্টা।

‘তোরা চল্লিশ জন না, তোরা একজন, চল্লিশ জন মিলে একজন’ সিনিয়র ভাই-আপুদের মুখে প্রথমবার এই কথা শোনার পর সবাই ভেতরে একটা নাড়া খেয়েছিলাম। কেউ কখনো শুনেছে এ কথা!  এমনটাও কি আবার হয় নাকি!  এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেশিদূর যেতে হয়নি আমাদের। কারণ আমরা এক হয়েছিলাম। ব্যাচ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলাম। নিজেদের নাম পেয়েছিলাম ‘ঋদ্ধআর্ক’। হ্যাঁ আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীবৃন্দ ‘ঋদ্ধআর্ক’ আমাদের পরিচয়।

মনে পড়ে ফার্স্ট ইয়ারের সেই ভলিবল ম্যাচ জেতার দিনগুলো। আন্তঃডিসিপ্লিন কুইজ প্রতিযোগিতায় রানার-আপ হওয়া। সেবারই আমরা প্রথম ক্রিকেটে কারো বিপক্ষে জিতেছিলাম। সবার সেই কী বাঁধভাঙা উল্লাস! খুবির ঐতিহ্যবাহী র‌্যাগডে উদযাপন। সবসময় মনে থাকবে ১৭ মার্চে ‘গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক প্রদর্শনী নামাতে সিনিয়রদের সাহায্য করার কথা, খুবির বুকে রাতভর আরব্য রজনী আলিফ-লায়লার কথা।

একসাথে মিলে পয়লা বৈশাখে নিজেদের স্টল দাঁড় করানো, সিনিয়র ভাই-আপুদের ধরে এনে জোর করে খাওয়ানো। সবাই মিলে একত্রে পিকনিক করা, পিকনিকে আরেক বগুড়ার ছেলে সিয়ান আল সিফাতের মূকাভিনয়, সবই যেন এখনো জীবন্ত হয়ে আছে।

দেখতে দেখতে প্রথম টার্মের সমাপ্তি। সাতক্ষীরার ছেলে রায়হানুল ফেরদৌসের ব্যাচে ফার্স্ট হয়ে ‘সিজি’ খেতাব পাওয়া। দ্বিতীয় টার্মে ফুটবল টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। সিনিয়র খাইরুল বাশার ভাইয়ের টাইব্রেকারে সেভ দেওয়া শটগুলো সেদিন যারা মাঠে ছিল সবাই নিশ্চয়ই মনে রাখবে। আরো মনে রাখবে ২৫ অক্টোবরের কথা, আমাদের রিসিপশন পাবার দিনের কথা!  ঋদ্ধআর্ক হয়ে ওঠার কথা।

আমাদের এই অধ্যায়ের শেষ পৃষ্ঠা এখনো রচিত হয়নি। কিন্তু একদিন হবে। যান্ত্রিক এ পৃথিবীতে আমরা সকলে স্ব-স্ব ব্যস্ততায় হারিয়ে যাব। ‘ঋদ্ধআর্ক’ নামের মেসেঞ্জার গ্রুপটিতে নোটিফিকেশনের টুং আওয়াজ হবে না। কারো কারো চ্যাটলিস্টের অতল গভীরে হারিয়ে যাবে সবাই।

এতকিছুর মাঝেও একদিন ব্যস্ততা কমবে। জীবনের হিসাব-নিকাশ করতে বসবে কেউ কেউ। কারো মিলবে না, কারো বা মিলবে। দু’পক্ষই তখন সুখানুভূতির খোঁজে অতীত হাতড়ে বেড়াবে। মনে পড়বে তখন জীবন নামক উপন্যাসের এই অধ্যায়টির কথা। ইচ্ছে করবে ফাদার পাভেলের বাইবেলের শ্লোক শুনতে, অথবা পোপ তারিকের সুন্দর বাচনভঙ্গি মনে পড়বে।

সেদিন হয়তো আফসোস হবে, কেন আরেকটু বেশি করে নিশাতের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত শুনে নিলাম না, তামিম ছেলেটা কি এখনো সেরকম যুক্তি দেয়, মনে পড়বে সবার কথা। স্মৃতির সাগর হাতড়ে সেদিন ঋদ্ধআর্কে ফিরে যেতে চাইব।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।


খুবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়