বিজয় দিবসে বিশ্ব মঞ্চে নতুন রেকর্ড দেখাবে বাংলাদেশ
আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্যে অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি এবার সর্বাধিক পতাকা উড়িয়ে প্যারাস্যুটিং করে বিশ্বরেকর্ড গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌ-বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদ্যাপনে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করবেন। এটিই হবে বিশ্বের বুকে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং, যা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়বে।
মহান বিজয় দিবস ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে সোমবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সভায় আলোচকগণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাপক আকারে বিশেষ বিশেষ কর্মসূচির প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা করেন।
বিজয় দিবসের দিন বেলা ১১টা থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে ফ্লাই পাস্ট মহড়া পরিচালনা করবে। চলবে বিজয় দিবসের বিশেষ ব্যান্ড-শো। বেলা ১১টা ৪০ মিনিট থেকে “টিম বাংলাদেশ” এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদ্যাপনে পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করবেন। জনসাধারণের জন্য এই বিশেষ আয়োজন উন্মুক্ত থাকবে।
পাশাপাশি, দেশের অন্যান্য শহরেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমানবাহিনী ফ্লাই-পাস্ট মহড়া পরিচালনা করবে। সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী, বিজিবি, আনসার বাহিনী ব্যান্ড-শো’য়ের আয়োজন করবে। প্রতিটি আয়োজন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত বছরের মতো এবারও দেশের সকল জেলা-উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয়মেলা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিশুদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল ৩টায় আ্যাক্রোবেটিক শো ও সন্ধ্যা ৬টায় যাত্রাপালা “জেনারেল ওসমানী” অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৩টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিবেশিত হবে বিজয় দিবসের গান। পাশাপাশি, সারা দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা।
বৈঠক শেষে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে অনুপ্রেরণাদায়ী বেশিরভাগ গানই ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের। আমি নিশ্চিত এটা অরগানিকভাবেই হয়েছে। এটাই বলে দেয় এই প্রজন্মের কাছে দেশ, দেশের অস্তিত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এবারের বিজয় দিবসে দেশব্যাপী বিজয় মেলা, এই প্রজন্মের শিল্পীদের কণ্ঠে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাত্রাপালা ‘জেনারেল ওসমানী’, কনসার্ট, এবং পুরাতন এয়ারপোর্টে এয়ার শো এবং ৫৪টা পতাকা নিয়ে ৫৪জন প্যারাট্রুপারের জাম্প- এই সব মিলিয়ে নতুন প্রজন্ম এক স্মরণীয় বিজয় দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছে। আশা করছি, এবারের বিজয় উদযাপন অতীতের সব উদযাপনকে ছাড়িয়ে যাবে।”
দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে তথ্য মন্ত্রণালয়। বিধি অনুযায়ী, এদিন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন, বিদেশে অবস্থানরত দূতাবাস ও মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা হবে।
প্রতিবছরের মতো এবারেও একত্রিশবার তোপধ্বনি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠান, জেলা-উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া, চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, পাগলা ও বরিশালসহ বিআইডাব্লিউটিসি এর ঘাটে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড একক বা যৌথভাবে জাহাজসমূহ সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
ঢাকাসহ সারা দেশের সিনেমা হলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা টিকেটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং মিলনায়তন ও উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
সরকারি ও বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জাদুঘরগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনা টিকেটে জনসাধারণ প্রবেশ করতে পারবেন। দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি বিনোদনমূলক স্থান শিশুদের জন্য সকাল-সন্ধ্যা উন্মুক্ত রাখা ও বিনাটিকেটে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে।
সারাদেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত বা প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
দেশের সকল হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র, প্রতিবন্ধি কল্যাণ কেন্দ্র, ডে কেয়ার ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র এবং শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রীতিভোজের আয়োজন থাকবে।
ঢাকা/ইভা