ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

থেমে নেই আমরা

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ২ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
থেমে নেই আমরা

আট মার্চ (২০২০)।   লাঞ্চ সেরে বাসা থেকে বের হই ধানমন্ডির উদ্দেশে।  গন্তব্য মাইডাস সেন্টারে এলিজা বিনতে এলাহীর ট্র্যাভেল চলচ্চিত্র প্রদর্শিত দেখা।  ধানমন্ডি-২৭ এর কাছাকাছি তখন, হঠাৎ প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হলো।  সকালে চমৎকার রোদ্রোজ্জল আবহাওয়ার কারণে ছাতা নেওয়া হয়নি সঙ্গে।

বৃষ্টি থামছেই না।  আমিও স্থির করলাম যখনই বৃষ্টি থামবে তখনই বাস থেকে নামব।  ততক্ষণে নির্দিষ্ট গন্তব্য পার হয়ে চলে গেছি অনেকদূর।  বৃষ্টি থামল।  হাতে সময় থাকায় বাস থেকে নেমে ফ্রেশ হবার জন্য চায়ের দোকানে সমুচা আর চা খাচ্ছি।  পকেট থেকে ফোনটা বের করে নিউজ ফিড দেখছি।  হঠাৎ ব্রেকিং নিউজ পেলাম, বাংলাদেশে তিন করোনা রোগী শনাক্ত।  সাথে সাথে বার্তাকক্ষে (রাইজিংবিডি) ফোন দিলাম।  বার্তাকক্ষ থেকে জানানো হলো, ব্রেকিং নিউজ আপ হয়ে যাচ্ছে।

ট্র্যাভেল চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে বিকেল ৫টায়।  হাতে আরো কিছুটা সময় আছে।  আমি হেঁটে হেঁটে মাইডাস সেন্টার থেকে সামনে আরো কিছুদূর গিয়ে ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে আরো এক কাপ রং চা অর্ডার দিলাম।  এরই মধ্যে আরও কয়েজন যোগ দিলেন।  চা খাচ্ছি আর মোবাইলে নিউজ দেখছি।  পাশে দাঁড়ানো অন্য যারা চা খাচ্ছেন—সবার মুখেই করোনা নিয়ে কর্তাবার্তা হচ্ছে।  এরই মধ্যে আমার ফোনে কয়েকটি কল এলো (‘করোনা এসে গেছে সাবধানে থাকিস’)।

পরেরদিন অফিসে গেলাম।  সবার মুখে একই আলোচনা।  এদিকে চীন, ইতালি, ইরানে মৃত্যুর সংখ্যা ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে।  বিভিন্ন দেশে লকডাউনের খবর গণমাধ্যমে পাচ্ছি।  আমার মাথায় চিন্তা এলো, আমাদের দেশেও যদি লকডাউন হয় আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা কীভাবে কাজ করবো।  অফিস শেষ করে রাতে বাসায় ফিরে পুরনো ডায়েরি চোখ বুলাচ্ছিলাম।   হঠাৎ মোবাইলে নোটিফিকেশন দেখে নেট অন করি দেখি চীনে কয়েকটি শহরে লকডাউনের খবর।  আমি চিন্তা করছি, আমাদের এখানে পরিস্থিতি যদি এরকম হয়, কীভাবে আমরা কাজ করবো।  তবে আমার কয়েক বছরের অনলাইন সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় এ নিয়ে শঙ্কা জাগেনি।  আমরা রাইজিংবিডি থেকে কয়েকবার পিকনিক করেছি।  সে সময় এবং  বিভিন্ন ইভেন্টে আমরা আগে থেকেই কনটেন্ট রেডি করে রাখতাম।  এছাড়া ঢাকার বাইরে গেলেই মডেম আর ল্যাপটপ সঙ্গে থাকতো।   প্রতিবেদক ভাইয়েরা মোবাইলেই নিউজ লিখতেন, ছবি ও ভিডিও পাঠাতেন।  এছাড়া আগেই আমরা বার্তাকক্ষে বসে আলোচনা করে নিতাম—কীভাবে কাজ করবো।  এজন্য সমস্যা মনে হয়নি।

১৬ মার্চ দুপুর।  করোনাভাইরাস রোধে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা হলো।  ১৯ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ‌্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বললেন, যেসব অঞ্চলে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি অবনতি হবে, সেসব অঞ্চলে লকডাউন করা হবে।  সম্ভাব্য এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে মাদারীপুর, শিবচর, ফরিদপুর।   ঐদিন সন্ধ্যায় খবর এলো করোনা সংক্রমণ রোধে মাদারীপুরের শিবচর লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।

২৩ মার্চ খবর পেলাম ঢাকার মিরপুরে টোলারবাগে করোনার বিস্তার রোধে চলাচল সীমিত করা হয়েছে।  সময় যত যাচ্ছে ততই টোলারাগের করোনা নিয়ে নানা খবর পাচ্ছি।  আরো চিন্তা হচ্ছে আমাদের অফিস মিরপুর এক নম্বরেই।  ২৪ মার্চ, একে একে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধের খবর আসছে।  ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা হলো।  সবকিছু বন্ধের ঘোষণা, আর আমরা বার্তাকক্ষ থেকে একটু পরপর ব্রেকিং নিউজ দিয়েই যাচ্ছি।  এরই মধ্যে উপদেষ্টা সম্পাদক উদয় হাকিম, নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায়, বার্তা সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল হক ভাইয়ের সঙ্গে বসে দ্রুত সিদ্ধান্ত হলো, ২৫ মার্চ থেকেই অফিস বন্ধ।  যার যার বাসা থেকে কাজ করতে হবে (বাসা থেকে কাজ করবেন রাইজিংবিডির সংবাদকর্মীরা) । অনেকের বাসায় প্রযুক্তি সুবিধা বাড়ানো হলো (ল্যাপটপ, পিসির ব্যবস্থা) ।  আমরা খবর পেলাম আরও বেশকিছু গণমাধ্যম বাসা থেকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  মিডিয়া বন্ধুদের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ হলো-তারাও বাসা থেকে কাজ করছেন।  ঢাকার বাইরেও অনেক স্থানীয় পত্রিকা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।  স্বাস্থ্যমন্ত্রী, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এখন অনলাইনে করোনা নিয়ে ব্রিফ করছে।  প্রধানমন্ত্রীও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করোনা নিয়ে জেলা প্রশাসকদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।  এছাড়া রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতারাও এখন অনলাইনে ব্রিফ করছেন।

প্রায় দশদিন ধরে আমরা বাসায় কাজ করছি।  আমাদের কাজ চব্বিশ ঘণ্টার।  মিডিয়ায় মূল কাজ এটিই।  ঘটনার প্রতি মুহূর্তের আপডেট খবর দিচ্ছি।  সবার আগে সব খবর পাঠকদের দেওয়ার চেষ্টায় আমাদের সংবাদকর্মীরা নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন।  করোনার এই সময়টিতে প্রায় সবগুলো মিডিয়া হাউজেই চলছে এভাবেই (অনলাইন, ভার্চুয়াল, সীমিত আকারে অফিস, শিফটিং)  কাজ।  করোনার এই দিনগুলোতে ভার্চুয়ালভাবেই সবকিছু হচ্ছে।  থেমে নেই সংবাদকর্মীদের পথচলা।  সামনে যেকোনও দুর্যোগে অনলাইন প্রধান ভূমিকা রাখবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

লেখক: সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

 

ঢাকা/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়