ঢাকা     শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ১৮ ১৪৩১

সৎ মানুষের সংকটই বড় দুর্ভিক্ষ

এম আর লিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ৪ অক্টোবর ২০২৪  
সৎ মানুষের সংকটই বড় দুর্ভিক্ষ

চাল, ডাল, আলু, পটোল, লবণ ও মরিচের অভাবে বাজারে সাময়িক অস্থিরতা তৈরি হয়। কিন্তু এ কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে না। প্রকৃত দুর্ভিক্ষ আসে তখনই, যখন ভালো মানুষের সংকট দেখা দেয়। বর্তমান সমাজে সৎ মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। এতে সামাজিক অবক্ষয় দিনদিন বাড়ছে। 

ভালো মানুষ সমাজের আলোকবর্তিকা। তারা নৈতিক মূল্যবোধে স্থির, সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল। একজন ভালো মানুষ নিজ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সমাজের জন্য কাজ করেন। তারা দুর্নীতি প্রশ্রয় দেন না, অন্যায় সহ্য করেন না এবং সর্বদা মানুষের কল্যাণে কাজ করেন। সমাজে তাদের উপস্থিতি ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলার নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু যখন এই ভালো মানুষদের সংকট দেখা দেয়, তখন সমাজে অন্যায়, দুর্নীতি ও অরাজকতার বিস্তার ঘটে।

বর্তমান সমাজে ভালো মানুষের সংকট রয়েছে। এর কারণগুলো হলো, প্রথমত, নৈতিক শিক্ষার অভাব। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা জিপিএ ও সার্টিফিকেট অর্জন করা শেখালেও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। ফলে প্রজন্ম মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, সামাজিক অবক্ষয়। অর্থনৈতিক বৈষম্য, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এটি ভালো মানুষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃতীয়ত, ভালো মানুষের প্রতি সমাজের অবমূল্যায়ন। আজকের সমাজে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি প্রায়শই অবহেলিত ও উপেক্ষিত হন। এতে অন্যদের ভালো হওয়ার অনুপ্রেরণা নষ্ট হচ্ছে। 

যখন সমাজে ভালো মানুষের সংখ্যা কমে যায়, তখন সে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দেয়। দুর্নীতি, অন্যায় ও ক্ষমতার অপব্যবহার বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করতে শুরু করে। একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে যতই সমৃদ্ধ হোক না কেন, যদি সে দেশের মানুষ নৈতিকভাবে দুর্বল হয়, তবে ওই সমাজে স্থিতিশীলতা থাকে না। এতে দেশে অস্থিরতা, সহিংসতা ও চূড়ান্তভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্দশা দেখা দেয়।

ভালো মানুষের সংকট মোকাবিলা করার জন্য সমাজে নৈতিক শিক্ষার প্রচলন জরুরি। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে একসঙ্গে কাজ করে নতুন প্রজন্মকে সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সৎ মানুষদের মূল্যায়ন ও সম্মান করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে ভালো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

ভালো মানুষের সংকট একটি দেশের জন্য সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ। এই দুর্ভিক্ষের পরিণতি সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে। তাই সমাজে ভালো মানুষের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। কারণ, একটি দেশের প্রকৃত উন্নতি তখনই সম্ভব, যখন ওই দেশের মানুষ নীতিগতভাবে সৎ হয়। নৈতিক শক্তি ছাড়া কোনো সমাজ বা জাতি টিকে থাকতে পারে না। আবার টিকে থাকলেও সেটি কখনোই প্রকৃত সুখ ও সমৃদ্ধির স্বাদ পায় না।

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়