ঢাকা     শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

সরকার বিরোধী দলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে: রিজভী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৫:১৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
সরকার বিরোধী দলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে: রিজভী

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে রুহুল কবির রিজভীসহ অন্য নেতারা

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আদালত, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে বিরোধী দলের কর্মসূচি বানচাল করার জন্য। জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকার শেষ অস্ত্র হিসেবে আদালতকে ব্যবহার করছে এক অমানবিক দমনের যন্ত্র হিসেবে। 

বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানসহ বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীরা এখন আজ্ঞাবহ আদালতের কোপানলে সাজার শিকার হচ্ছেন। এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে—গত দুইবারের মতো বিনা ভোটে নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকার চূড়ান্ত মরণকামড়। সুষ্ঠু ভোটের প্রতি সরকারের একধরনের ক্রোধ থেকে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে হিংস্র প্রতিশোধ। যারাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দাবি করছেন, তারাই বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন। এখন এসব প্রতিহিংসা পূরণ করা হচ্ছে আদালতকে দিয়ে।

তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির মূল প্রতিপাদ্য ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু, বহুদলীয় গণতন্ত্রের কথা শুনলেই সরকার অস্থির হয়ে পড়ে। তাই, স্বৈরাচারের উগ্রমূর্তির প্রতিফলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ক্ষত-বিক্ষত। আইন, বিচার, আদালত, প্রশাসন, পুলিশ সবকিছুই একাট্টা হয়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিগুলোর ওপর সর্বগ্রাসী আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার হিংসার পথে গণতন্ত্রের পক্ষের মজলুম নেতাদের নতজানু করতে না পেরে এখন আদালতকে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সাজা দেওয়ার হিড়িক শুরু করেছে।

শেখ হাসিনা সরকার জাতির দুর্দিনের প্রতীক, মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, তাই তারা গোটা জাতির ওপর দুঃসময় নামিয়ে এনেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার সদিচ্ছাপ্রসূত কোনো কাজই করেননি। অশান্তি, হিংসা, সংঘাত ও হানাহানি করে, জনগণকে দূরে ঠেলে, অবৈধ ক্ষমতাকে নিরাপদ করার চেষ্টায় রত আছে। বর্তমান আওয়ামী সরকার ফ্যাসিবাদের বাংলাদেশি সংস্করণ।

দেশ এখন চরম সঙ্কটে, দাবি করে তিনি বলেন, সারা দেশ এখন ডেঙ্গু জ্বরে কাঁপছে। ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে মৃত্যুর সংবাদই এখন প্রধান সংবাদ। এরইমধ্যে হাসপাতালে সর্বোচ্চ ভর্তি ও সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। প্রতিদিন ১২-১৫ জন  মানুষ ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সারাদেশে শুধু ডেঙ্গুতে সাড়ে ছয় শতাধিক লোক মারা গেছে। অবৈধ সরকারের উদাসীনতা, দুর্নীতি ও অবহেলার কারণে এই রোগ এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা, মামলা ও  গ্রেপ্তারের বিবরণ তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বাংশাল থানাধীন ৩৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ নাজিম, মুগদা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাহপুর উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আনোয়ার হোসেন রাখু, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইবনে সিনা, পলাশবাড়ি উপজেলা যুবদল নেতা সবুজ ও বিএনপিকর্মী মোজাকে গভীর রাতে বাসা থেকে বিনা ওয়ারেন্টে তুলে নিয়ে যায় ডিবি।

গাইবান্ধা জেলা যুবদলের সভাপতি রাগিব হাসান চৌধুরী, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইমতিয়াজ আহমেদ রনি ও জেলা কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান রানা, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মহিবুল হক টুটুল, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য হানিফ শাকের উল্লাহ, সদস্য এস এম দুলাল, গৌরীপুর উপজেলার সাবেক সদস্য মনির হোসেন মনির, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য বিপ্লব হোসেন রবি, গৌরীপুর উপজেলা যুবদল নেতা হান্নান তালুকদার, সোহেল মিয়া, আশিকুর রহমান নয়ন, তারাকান্দা উপজেলা যুবদল নেতা মোজাম্মেল হক সরকার, জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ন কবির, সদস্য আলী আক্তার পল্লব, তৌফিকুল ইসলাম তারেক, ফুলপুর উপজেলা যুবদলের নেতা কাজিম উদ্দীন, ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল আলম রাতুল, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ মেম্বার, ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতা আব্দুল খালেক, পৌর কৃষকদল সভাপতি মকবুল হোসেন, বিএনপি নেতা বাদশা মিয়া, রিপন মিয়া, মৎস্যজীবী দল নেতা কিশোর মিয়া, হালুয়াঘাট  উপজেলা বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ, ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব কামাল হোসেন, জেলা ছাত্রদল নেতা মোখলেস মিয়া, নান্দাইল উপজেলা বিএনপি নেতা মাসুদ উদ্দিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা, যুবদল নেতা জসিম মিয়া, বাবু মিয়া, জামাল মিয়া, হারুন অর রশিদ, রুবেল মিয়া, রুহুল আমিন, রসুল মিয়া, আকরাম হোসেন ও সিরাজ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এছাড়াও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলার পাগলা থানার উন্সি ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আবুবক্কর ও রিপন, পাইথল ইউনিয়ন বিএনপির নেতা মো. রমজান, গফরগাঁও উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পাগলা থানা বিএনপির সদস্য মাহবুবুর রহমান ফোরকান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের গেন্ডারিয়া থানা বিএনপি নেতা মো. আসাদ, মো. মাসুদ ও শাহজাহানপুর থানাধীন ১১ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মজিবর মুন্সিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সারা দেশে প্রতিনিয়ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা ও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান রিজভী। 

সম্প্রতি যাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে আছে—জামালপুর জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি আব্দুল হালিমসহ ৪০ জন বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৌমিক হাসান সোহাত ও জেলা শ্রমিকদল নেতা আব্দুস সোবহানসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

গত ২৮ ও ২৯ জুলাই তারিখ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আহত, মামলা, গ্রপ্তার এবং সারা দেশে যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের তথ্য অনুযায়ী, মোট আহত ১ হাজার ৩৫০ জন, মোট মামলা হয়েছে ৩৩৩টি, আসামি করা হয়েছে ৪ হাজার ১৩০ জনকে এবং মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ৭২০ জনকে।

সবশেষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনঃগঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট দলগুলো যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা ও সফল করার লক্ষ্যে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীতে গণমিছিল করা হবে। 

বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে ৯ সেপ্টেম্বরের গণমিছিল কর্মসূচি সফল করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

মেয়া/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়