আগামীর বাংলাদেশ চাঁদা চাইলে জীবন শেষ
যারা সংস্কার চান না, তাদের নিশ্চিয়ই বদমতলব আছে: ডা. তাহের
বিশেষ প্রতিবেদক ও নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
দেশের জনগণ ও বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল সংস্কার চাইলেও কেউ কেউ মন থেকে সংস্কার চায় না বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ তাহের।
শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
তাহের বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল মনে করে, সংস্কার সবার জন্যই কল্যাণকর কিন্তু যারা সংস্কার চান না, তাদের নিশ্চিয়ই বদমতলব আছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেশের জনগণ সংস্কার চেয়েছে। তারা এখনো সংস্কার চায়, সংস্কারের পরেই নির্বাচনের পক্ষে দেশের জনগণ।”
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “বাইরে সভা করেন, সমাবেশ করেন, বলে বেড়ান সংস্কার মানি, অথচ ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়ে বসলে কিচ্ছু মানি না ভাব দেখায় তারা।”
“আপনারা বলছেন পার্লামেন্টে বসে সংস্কার করবেন। কেন এমনটা মনে করছেন? আপনারা মনে করছেন আগামী নির্বাচনে আপনারা জিতবেন, নাকি দখল করবেন? নির্বাচনে দখলবাজি করতে দেবে না জনগণ,” বলেন জামায়াতের এই নেতা।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি করে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে টাকা দিয়ে ভোট কেনার সুযোগ নেই। সেজন্য মতলব পূরণ হবে না। পিআর পদ্ধতিতে স্বচ্ছ নির্বাচনের বিরোধিতা করা মানে তারা জাতির প্রত্যাশা নিয়ে সচেতন নয়।”
‘‘জামায়াতে ইসলামী চায় আগামী নির্বাচনে জনগণের জয় হোক। জনগণ যাদের ভোট দেবে, তারাই জিতবে। সোহরাওয়ার্দীর বিশাল এ সমাবেশ, মেসেজ কি পাওয়া যাচ্ছে না কারা জিতবে? আগামীতে বাংলাদেশপন্থিরাই জিতবে, চাঁদাবাজবিরোধীরাই জিতবে, সুশাসনের পক্ষের শক্তির বিজয় হবে,” আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে না জানিয়ে দলটির নায়েবে আমির বলেন, “জামায়াত কোনো সন্ত্রাসবাদকে পছন্দ করে না। ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিবাদ আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। সেটা ধর্মীয় জঙ্গিবাদ হতে পারে আবার রাজনৈতিক জঙ্গিবাদ হতে পারে। জামায়াত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, সংগ্রাম করবে, প্রয়োজনে রুখে দাঁড়াবে।”
“আগামীর বাংলাদেশ চাঁদা চাইলে জীবন শেষ-এ আইন চালু করতে হবে। দেশে চাঁদাবাজি বন্ধে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে,” বলে মন্তব্য করেন দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
জাতীয় সমাবেশে তিনি বলেন, “আজব বাংলাদেশ চাঁদা না দিলে জীবন শেষ। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে আগামীর বাংলাদেশ চাঁদা চাইলে জীবন শেষ-এই আইন চালু করতে হবে। তাহলে চাঁদা বন্ধ হয়ে যাবে।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের কথা তুলে ধরে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, “সেখানে দুই তৃতীয়াংশের বেশি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছেন।”
অবিলম্বে সরকারকে সংবিধানে পিআর পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আজাদ বলেন, “এ পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্বাচনের ঘোষণা দিতে হবে। অন্যথায় রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে এ দাবি আদায় করে ছাড়ব।”
ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের দাবি জানান আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের লম্প-ঝম্প দেখতে চাই না। কোনো ফ্যাসিবাদী শাসন ফিরে আসতে দেওয়া হবে না। নতুন ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হতে দেব না।”
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নাজিউর রহমান মোমেন। তিনি বলেন, “যে ফ্যাসিবাদীরা দেশের আলেমদের হত্যা করেছিল তারা আজ কোথায়? আজ তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। জুলাইয়ের এক বছর হয়ে গেল, এখনো পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের বিচার হয়নি, গণহত্যার বিচার হয়নি। উল্টো দেখা যাচ্ছে ফ্যাসিবাদ আজও চোখ রাঙাচ্ছে, জুলাই বিপ্লবের বীরদের ওপর হাত তুলেছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।”
তিনি আরো বলেন, “আজ আমরা জামায়াতের আমিরের দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য শুনব। যে বক্তব্য ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।”
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ তাহের
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের, গণ-অধিকার পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক নুর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, নেজামে ইসলামের মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, শহীদ পরিবারের সদস্য, কয়েকজন পঙ্গু জুলাই যোদ্ধা।
দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ছাড়াও জাতীয় সমাবেশ যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম।
উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, নায়েবে আমির মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল ও মাওলানা মুহাম্মাদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, আবদুর রব, অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন, অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ ও মোবারক হোসাইনসহ দেশের জেলা, মহানগর ও উপজেলা নেতারা।
জামায়াতের এই জাতীয় সমাবেশ লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে মহাসমাবেশে পরিণত হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতাকর্মীর ঢল নামে। দেশের প্রত্যক এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা গাড়ির বহর নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশকে ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতারাও নেতাকর্মীর মিছিল নিয়ে শোডাউন করেন। দুপুরের মধ্যেই নেতাকর্মীতে ভরে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। একপর্যায়ে জায়গা না পেয়ে নেতাকর্মীর ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নেয় পল্টন, মৎসভবন, শাহবাগ, কাটাবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায়। সমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপুর্ণভাবে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ সমাপ্ত হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রায়হান/সাইফ