ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কমলা-ফাতেমাদের দিন বদলের গল্প  

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ২ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৪:৫১, ২ আগস্ট ২০২১
কমলা-ফাতেমাদের দিন বদলের গল্প  

ষাটোর্ধ্ব কমলা খাতুন জীবনের পুরো সময়টাই কাটিয়েছেন কষ্টে। স্বামী জসিম মিয়া বহুদিন আগেই তাকে একা করে চলে গেছেন পরপারে। এক ছেলে ও এক মেয়ে থেকেও তাকে ঘুরতে হয়েছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। জেলা সদরের যশোদল ইউনিয়নের মধ্যপাড়া ভাড়া বাসায় থাকতেন, আর অন্যের বাসায় কাজ করে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে সংসার পেতেছিলেন। ভালো থাকার স্বপ্ন দেখতে দেখতে একটা সময় স্বপ্ন দেখতেই ভুলে গিয়েছিলেন কমলা। কিন্তু এবার তার মতো আরও ২২টি পরিবারের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। 

কিশোরগঞ্জ যশোদল আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায় এক দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ। সবুজ গাছপালাবেষ্টিত আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে ২২টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে শুধু ঘর নয়, শিশুদের খেলাধুলার জন্য মাঠ, দোলনাসহ নানা ধরনের আয়োজন রাখা হয়েছে। চারপাশে লেক, নামাজের জন্য পৃথক স্থান সবমিলিয়ে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করে দেওয়া হয়েছে সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের। এতে আরও রয়েছে নতুন সংযোজন চুলাসহ গ্যাসের সিলিন্ডার, যা সবাইকে মুগ্ধ করেছে।

প্রায় সব জায়গায় গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর জন্য বানানো ঘরে কমবেশি ক্রটিবিচ্যুতি থাকে। নিম্নমানের কাজের অভিযোগও পাওয়া যায়। তবে কিশোরগঞ্জের যশোদলে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পটি একেবারে আদর্শ একটি গ্রাম হয়ে উঠেছে। আন্তরিকতার সঙ্গে ভালো কিছু করার ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব হয়, যার দেখা মিলছে যশোদল আশ্রয়ণ প্রকল্প গিয়ে। 

তিন ছেলে এক মেয়ের সংসার ফাতেমার (৫০)। কষ্টে ভরা এত দিনের জীবনে সুখের আলো দেখতে পাচ্ছেন। স্বামী ইউনুছ আলী রাস্তায় ঘুরে ঘুরে গ্যাস লাইটারে গ্যাস ভরাট করতেন। আর ফাতেমা কাজ করতেন অন্যের বাড়িতে। আজ ঘরটি পেয়ে তাদের সারাজীবনের কষ্ট লাঘব হয়েছে। তার সুখের পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে।

গৃহহীনদের ২২টি ঘর ৩১ জুলাই দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। তিনি বলেন, আমি এ আশ্রয়ণ প্রকল্পটি দেখে অভিভূত হয়েছি। আমার ধারণা এটি আদর্শ একটি গ্রাম হয়ে উঠবে। যেখানে সব ধরনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া এখানে যারা থাকবেন, তাদের ছেলে-মেয়েরাও নতুন একটি পরিবেশে বড় হবে।

 

এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদির, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাগুফতা হক, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সাত্তার, মাছুমা আক্তার, উপজেলা প্রকৌশলী মো. জুনায়েত আলম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ, যশোদল ইউপি চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ সুলতান রাজন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাদির রাইজিংবিডিকে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্প কেমন, সেদিকে আমরা নজর দেইনি। আমরা যা চেয়েছি, তার অনেকটাই সফলভাবে করতে পেরেছি। সুন্দর এবং নান্দনিক একটি পরিবেশে সুপরিকল্পিতভাবে প্রকল্পটি ডিজাইন করা হয়েছে। উপকারভোগীরা যেন কোনোভাবেই কোনো কিছুর ঘাটতি উপলব্ধি করতে না পারেন, সেদিকে লক্ষ রেখে নির্ধারিত কোনো বাজেটের চিন্তা করিনি। উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে দিয়ে হলেও দৃষ্টিনন্দন ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সমন্বলিত একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।

তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখনো বাকি রয়েছে বসবাসকারী লোকদের জীবনমান উন্নয়নের কাজ। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, ঋণসহ সরকারি সব সুযোগ-সুবিধায় তাদের যুক্ত করার প্রচেষ্টা করা হবে। 

এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, কিশোরগঞ্জ জেলায় মোট ১২৪৭টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯৭৮টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে।

কিশোরগঞ্জ/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়