ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

হলুদ তরমুজ চাষে দূর হচ্ছে বেকারত্ব

শামীম কাদির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৫, ১৬ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১২:০১, ১৬ আগস্ট ২০২১

জয়পুরহাটে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাচা পদ্ধতিতে বিদেশি বিভিন্ন জাতের বারোমাসি তরমুজের চাষ। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অন্য ফসল বাদ দিয়ে এ তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।

বিঘা প্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। এতে ব্যাপক লাভের পাশাপাশি বেকারত্ব দূর হচ্ছে শত শত বেকার যুবকের।

কৃষকরা বলছেন, এ তরমুজ চাষে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে একদিকে যেমন  কৃষকরা লাভবান হবেন, অন্যদিকে সারাবছর সুস্বাদু এ ফল খেতে পারবেন মানুষ।

২০১৮ সালে সর্বপ্রথম জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত গ্রামের কৃষক আবু মুসা মাত্র আড়াই শতক জমিতে মাচায় ব্লাক বেবি ও মধুমালা  তরমুজ  চাষ শুরু করেন। পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে এই তরমুজের চাষ করে ৭০ দিনে লাভ হয় ২২ হাজার টাকা। পরে তার সাফল্য দেখে ছড়িয়ে পড়ে এ চাষ। বর্তমানে জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর ও কালাই উপজেলার ৬৫ গ্রামের তিন শতাধিক কৃষক তৃপ্তি, ডায়না, সুগার কুইনসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করছেন। এসব জাতের বেশিরভাগ তরমুজ চায়না, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানের।

বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় ধানসহ অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে এ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে এ তরমুজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে রাজধানী ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রাজশাহী বগুড়া, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

জেলার প্রথম তরমুজ চাষি পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত গ্রামের আবু মুসা জানান, একটি বেসরকারি এনজিওর পরামর্শে তিনি ২০১৮ সালে জেলার সর্বপ্রথম আড়াই শতক জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করেন।  বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করছেন তিনি। অসময়ে এ তরমুজ চাষ দেখে  প্রথমে অনেকেই হাসাহাসি করেছেন। কিন্তু তরমুজের ফলন ভালো, স্বাদ ভালো হাওয়ায় ও বাজার ভালো হওয়ায় এখন অনেকেই চাষ করতে আমার কাছে পরামর্শ নিতে আসেন। 

তিনি আরও জানান, ‘আমার মতো এখন অনেকেই এসব বিদেশি জাতের তরমুজের চাষ করছেন। অসময়ের এই তরমুজ দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা এক নজর দেখতে আসেন। আবার কেউ কেউ এসে জমি থেকে টাটকা তরমুজ কিনেও নিয়ে যান।’

কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। এবার বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো রয়েছে। আমি এক বিঘা জমির তরমুজ ২ লাখ টাকার কাছাকাছি বিক্রি করেছি।’

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার গ্রামের কৃষক আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধান-আলুর চেয়ে এ তরমুজ চাষ অনেক লাভজনক ফসল। আমি এ বছর ১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে দেড় লাখ টাকার তরমুজ বেশি বিক্রি করেছি। জমিতে আরও তরমুজ আছে সেগুলোও বিক্রি করবো। তাতে আরও লাভ আসবে।’

ভুতগাড়ী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে কোনো অফিসার আমাদের কাছে আসে না। তাই তরমুজ গাছের কোনো রোগ হলে আমরা বেকায়দায় পরি।’

কালাই উপজেলার খুশাল নওপাড়া গ্রামের কৃষক নুর মুহাম্মদ বলেন, ‘বীজ রোপণের ৩৫ দিনের মধ্যে গাছ মাচায় উঠে যায়। ৪০ দিনের মধ্যে গাছে প্রচুর ফুল ও কুড়ি আসে। তারপর ৭৫ দিনের পরিপক্ক হয়ে মাচায় ডগায় ডগায় ঝুলে  আছে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের প্রায় ২৪শ তরমুজ। ওই তরমুজ কাটলে ভেতরে লাল টুকটুকে, রসালো আর খেতে মিষ্টি ও খুব সুস্বাদ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশা করছি এই মাসেই সব তরমুজ বিক্রি হবে। বর্তমান বাজারে এই তরমুজের চাহিদা অনেক বেশি, দামও ভালো আছে। প্রতিটি তরমুজ গড়ে ১শ টাকায় বিক্রি হবে। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে আমার আয় হবে প্রায় ২ লাখ টাকারও বেশি।’

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স.ম মেফতাহুল বারি  জানান, জেলায় প্রায় ৩৯২ বিঘার বেশি জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। লাভজনক এ চাষ আরও বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কারিগারি সহায়তাসহ সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জয়পুরহাট/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়