ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

কোটি টাকার ওয়েস্টবিন, খুঁজতে গেলে সোনার হরিণ

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৮, ১ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোটি টাকার ওয়েস্টবিন, খুঁজতে গেলে সোনার হরিণ

ছবি : শাহীন ভূঁইয়া

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি ও নগরীকে পরিচ্ছন্ন হিসেবে গড়তে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে সড়কের দুই পাশে ১১ হাজার মিনি ওয়েস্টবিন বসানো হয়েছিল। কিন্তু জনসচেতনতা, নিয়মিত মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সড়কে সেসব ওয়েস্টবিন নেই বললেই চলে।

দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রায় ১১ হাজার মিনি ওয়েস্টবিন বসানো হয়েছিল। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পাঁচ হাজার ৭০০ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে পাঁচ হাজারেরও বেশি ওয়েস্টবিন বসানো হয়। দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে এর খরচ পড়েছিল পাঁচ কোটি টাকারও বেশি।

নির্ধারিত জায়গায় ময়লা ফেলার ব্যবস্থা তৈরি করায় ওই সময় রাজধানীবাসী দুই সিটি করপোরেশনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তবে দিন দিন এগুলো হারিয়ে যাওয়ার সাধারণ মানুষ সিটি করপোরেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন বলছে, রাস্তার দুই পাশে বসানো ওয়েস্টবিন রক্ষার দায়িত্ব নগরবাসীরও।

দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা দেখা গেছে, অল্পসংখ্যক জায়গায় ভাঙা ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে কিছু ওয়েস্টবিন। কোথাও ওয়েস্টবিনের পিলার স্ট্যান্ডসহ নাই। আবার কোথাও এসবের ঢাকনা নাই। মনে হবে, এখানে কখনো কোনো দিন ওয়েস্টবিন বসানোই হয়নি। কোটি টাকার ওয়েস্টবিন প্রকল্পের বিন খুঁজতে গলে মনে হবে, এসব যেন সোনার হরিণ।

সরেজমিন চিত্র:

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ২৭ নাম্বার, শংকর, জিগাতলা, সিটি কলেজ, রাসেল স্কয়ার, আসাদ গেট, কলেজ গেট, শ্যামলী, নূরজাহান রোড, বাবর রোড, কল্যাণপুর, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়া পাড়া, আগারগাও, মহাখালী, বনানী, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, পল্টন, শান্তিনগর, বনশ্রী, বাড্ডা নতুন বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ওয়েস্টবিন নেই। এতে সাধারণ মানুষ ময়লা নির্দিষ্ট জায়গায় না ফেলে ফুটপাতে, সড়কে ফেলছেন।  কয়েকটি জায়গায় ওয়েস্টবিন দেখা গেলেও এগুলো ময়লায় উপচে আশপাশের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলছে। মনে হবে, ওয়েস্টবিন বসানোর পর কখনো জমা হওয়া ময়লা সরানো হয়নি।

নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়েস্টবিন বাসানোর পর এসবের ব্যবহারের বিষয়ে দুই সিটি করপোরেশনের কেউই কোনো ধরনের প্রচারণা চালায়নি। শুরুর কয়েকদিন নতুন জিনিস হিসেবে নগরবাসী এটি স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু ময়লা জমা হওয়ার পর এগুলো খালি না করায় অনেকে ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হন। এরপর একসময় রাতে চোর বিন চুরি করা শুরু করে। এরপর দণ্ডগুলোও চুরি করে নিয়ে যায়। এ ব্যপারে সিটি করপোরেশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ধানমন্ডির বাসিন্দা রিফাত হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ওয়েস্টবিন বসালে তো হবে না। এগুলো ব্যবহারে সাধারণ মানুষদের উৎসাহিত করতে হবে।

শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ বিষয়ে জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘রাতে পুলিশের টহল দল থাকে। তারা ওয়েস্টবিন রক্ষায় কী করলো? পুলিশের সদিচ্ছা থাকলেও একটি ওয়েস্টবিনও রাস্তা থেকে চুরি হতো না।’

প্রেসক্লাব এলাকায় কথা হয় সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা সভ্য হতে চাই না বলেই এতো টাকা খরচ করে ওয়েস্টবিন বসানো হলো। কিন্তু সেগুলো আবার চুরি বা গায়েব হয়ে গেলো।’

নূরজাহান রোডের বাসিন্দা জান্নাত হৃদি বলেন, ‘শুরুর দিকে ওয়েস্টবিন ব্যবহার করতাম। কিন্তু পরে দেখি, এগুলো উধাও হয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও পরিস্কার করা হয়না। এজন্য আর ব্যবহার করা হয়না।’

গ্রীণ রোডের বাসিন্দা রূপা বিশ্বাস বলেন, ময়লা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে চাইলেও তো উপায় নেই। কারণ কোথাও কোনো ওয়েস্টবিন নেই।

তবে ওয়েস্টবিন চুরি ও এর রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারার দায় নিতে রাজ নন দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সব দায় সাধারণ মানুষের। কারণ তারা এগুলো ধরে রাখতে পারেননি।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, সব ওয়েস্টবিন রিপ্লেস করার চিন্তা করছে তারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘নানা কারণে বসানো ৫ হাজার ৭০০ ওয়েস্টবিন রাখা সম্ভব হয়নি। আমরা এগুলো নতুনভাবে মেরামত বা রিপ্লেস করার চেষ্টা করছি।’

তবে জানা গেছে, ওয়েস্টবিন নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এখনো কোনো পরিকল্পনা নেয়নি। তারা বাসা বাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বেশি উদ্যোগী হচ্ছেন।


ঢাকা/নূর/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়