ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পাচার ১৬ কোটি টাকা হংকং থেকে ফিরছে

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৩, ১৩ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাচার ১৬ কোটি টাকা হংকং থেকে ফিরছে

এম এ রহমান মাসুম: বিএনপি সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খানের হংকংয়ে পাচার করা ১৬ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাষ্ট্রের অনুকুলে ওই অর্থ বাজেয়াপ্তের বিষয়ে সম্প্রতি দায়রা জজ আদালতের রায় পাওয়ার পর চূড়ান্ত আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুদক। 

এর অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি সংযুক্ত করে হংকং এ্যার্টনী জেনারেলের কাছে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে সংস্থাটি।

যদিও মোর্শেদ খান পরিবারের বিরুদ্ধে প্রায় ৩২১ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।  যা দুদকে তদন্তাধীন।

এ বিষয়ে দুদকের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, হংকং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে বাজেয়াপ্ত হওয়া অর্থের বিষয়ে আদালতের রায় পাওয়ার পরপরই রায়ের কপি সংযুক্ত করে বাংলাদেশের এ্যার্টনী জেনারেলের মাধ্যমে এমএলএআর পাঠিয়েছে দুদক। এমএলএআরে দুদকের পক্ষ থেকে রায় বাস্তবায়ন করে জব্দকৃত অর্থ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এমএলএআরের জবাব পাওয়ার পরপরই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকা পূনরুদ্ধার করা হবে।  কারণ আদালতের রায়ের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত যে ওই টাকা বাংলাদেশ থেকে হংকং পাচার হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট নির্দেশনায় খারিজকৃত মামলার পুনরায় তদন্ত শুরু করার অনুমতি পায় দুদক। এর তদন্ত চলমান অবস্থায় হংকংয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দকৃত টাকা বাংলাদেশের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশনা দেয় আদালত।  ইতোমধ্যে আদালতের ওই আদেশ হংকং-এ পাঠানো হয়েছে বলে জানি।

তিনি আরো বলেন, তদন্ত চলমান অবস্থায় এ ধরণের আদেশ বাংলাদেশে এই প্রথম।  এখন ওই অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে আর কোনো বাঁধা নেই।  এর আগে চূড়ান্ত রায়ের পর পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার নজির রয়েছে। 

৩২১ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান, তার স্ত্রী ও পুত্রের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করে দুদক।  দুদকের অনুসন্ধানে এম মোর্শেদ খান, তার স্ত্রী ও পুত্রের মালিকানাধীন ফারইস্ট টেলিকমিউনিকেশনস লিমিটেডের নামে হংকং স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে সাতটি মাল্টি কারেন্সি অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়।

এর মধ্যে একটি চলতি হিসাব, পাঁচটি সঞ্চয়ী হিসাব ও একটি ইনভেস্টমেন্ট হিসাব রয়েছে। এ ছাড়া একই ব্যাংকে এম মোর্শেদ খানের নামে ছয়টি মার্কিন ও হংকং ডলারের সঞ্চয়ী হিসাব এবং তার ছেলের নামে দুটি সঞ্চয়ী হিসাব পাওয়া যায়।

মামলা এজাহারে মোর্শেদ খান ও তার স্ত্রী-পুত্র ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিন কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার ৫৪১ মার্কিন ডলার ও এক কোটি ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার ৫৮৩ হংকং ডলার পাচার করেছেন।  যা বাংলাদেশি টাকায় ৩২১ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৭২ টাকা। মামলা দায়ের করার পর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দেয় দুদক। যেখানে অর্থ থাকার প্রমাণ থাকলেও মানি লন্ডারিংয়ের কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। যে কারণে ওই একই বছরের ১৫ এপ্রিল তাদেরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়।

তবে কিছুদিন পরই এফআরটির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি আবেদন করে দুদক।  আর ওই আবেদন খারিজ হলেও পরবর্তীতে দুদকের আপীল আবেদনে হাইকোর্ট থেকে পুন:তদন্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।  যার প্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত পুনরায় শুরু করে দুদক।  যা এখনো চলমান রয়েছে বলে জানা যায়। 

হংকংয়ের স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংকের ওই হিসাবটি ২০০৮ সাল থেকে এক প্রশাসনিক আদেশে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬ কোটি টাকা জব্দ করে রাখে হংকংয়ের পুলিশ।  এরপর তারা বাংলাদেশে চিঠি দিয়ে জানায়, নতুন কোনো পদক্ষেপ না থাকলে ওই অ্যাকাউন্ট তারা খুলে দেবে। 

সবশেষ গত সেপ্টেম্বরে হংকং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক জানায়, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে মোর্শেদ খান ও তার ছেলে ফয়সাল মোর্শেদের ১৬ কোটি টাকা ও প্রায় ১৭ লাখ শেয়ার আর রাখা সম্ভব নয়।  এরপর গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রের অনুকুলে সম্পদ বাজেয়াপ্তের আবেদন করে অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদক। 

শুনানি শেষে ওই অর্থ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। সেই সাথে প্রায় ১৭ লাখ শেয়ারও বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  

এর আগে সিঙ্গাপুর থেকে দ্বিপাক্ষিক আইনি চুক্তির মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থ এনেছিলো বাংলাদেশ সরকার।

চার দলীয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আরাফাত রহমান কোকো ঘুষ হিসেবে মোট ২১ কোটি ৫৫ হাজার ৩৯৪ টাকা গ্রহণ করে সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে জমা রেখেছিলেন। 

বিষয়টি সিঙ্গাপুরের আদালতে প্রমাণিত হওয়ার পর সিঙ্গাপুর ওভারসিস ব্যাংক থেকে তিন দফায় টাকাগুলো দুদকের অ্যাকাউন্টে ফেরত আনা হয়। ২০১৩ সালের আগস্টে কিস্তির মাধ্যমে পুরো টাকা দুদকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।



ঢাকা/এম এ রহমান/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়