সিলেটে দুই যুগে ছাত্ররাজনীতির বলি ৫০
বদর || রাইজিংবিডি.কম
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের একটি দৃশ্য (ছবি : বদর উদ্দিন)
বদর উদ্দিন আহমদ, সিলেট : গোটা দেশ এখন এক অস্থির রাজনীতিতে নিমজ্জিত। রাজনীতি মানেই ক্ষমতা, অর্থকড়ি, বিলাসবহুল জীবনযাপন আরো কত কী। অতীতের রাজনীতিতে ছিল না কোনো ভোগবিলাস। দেশের ও জাতীয় স্বার্থে নিজেদের বিলীন করে দিতেও কেউ পিছপা হতো না। আর সে সময়ের ছাত্ররাজনীতিকে মানুষ অনেক সমীহ করত। আর এখন ছাত্ররাজনীতি মানেই হচ্ছে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি সর্বোপরি ক্ষমতা। এরই ধারাবাহিকতায় কত নিরীহ মেধাবী শিক্ষার্থী অকালে হারিয়ে যাচ্ছে হিংসাত্মক রাজনীতির জাঁতাকলে পড়ে।
সিলেটে ছাত্ররাজনীতির নামে সংঘাতে হত্যার মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। এ পর্যন্ত গত ২৬ বছরে ছাত্ররাজনীতির বলি হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০ জন। গত বৃহস্পতিবার যার সর্বশেষ শিকার হলেন সুমন চন্দ্র দাস। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জড়িয়ে প্রাণ হারান সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এই শিক্ষার্থী। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ফাঁদে পড়ে লেখাপড়া করতে এসে মরতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। একের পর এক এসব প্রাণহানির ঘটনায় মামলা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে না আসামিরা। আবার কদাচিৎ ধরা পড়লেও কিছুদিন পরই জামিনে বেরিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত এসব ঘটনায় জড়িতদের কেউই শাস্তি পায়নি। রাজনৈতিক নেতাদের আপসকামিতায় পার পেয়ে যায় খুনিরা। ফলে রাজনৈতিক সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ধারাবাহিকভাবেই ঘটছে সংঘাত-প্রাণহানির ঘটনা। কেবল প্রতিপক্ষ দলের মধ্যে নয়, আধিপত্য বিস্তার আর অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে নিজ দলের মধ্যেও প্রাণঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রনেতা নামধারী সন্ত্রাসীরা। হত্যা করছে নিজ দলের অনুসারীদেরই।
গত বৃহস্পতিবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী সুমন নিজ দলের অনুসারীদের গুলিতেই নিহত হন। ১৯৮৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর শিবির ক্যাডারদের হাতে খুন হন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুনীর-ই-কিবরিয়া চৌধুরী, তপনজ্যোতি ও এনামুল হক জুয়েল। এর মধ্য দিয়েই শুরু সিলেটে হত্যার রাজনীতি। এরপর ধারাবাহিকভাবেই ঘটছে ছাত্ররাজনীতির নামে খুনোখুনির ঘটনা। চলতি বছরে সিলেটে ছাত্ররাজনীতির বলি হন সুমন ছাড়াও সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদল নেতা তাওহিদুল ইসলাম ও মহানগর ছাত্রদল নেতা জিল্লুল হক জিলু। তাওহিদ ৪ জুন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় ও ২৭ জুন নিজ দলের ক্যাডারদের হামলায় নিহত হন জিলু। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে নগরীর শিবগঞ্জে নিজ দলের ক্যাডারদের হামলায় খুন হন ছাত্রদল নেতা সজীব আবদুল্লাহ। এর আগে ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর ছাত্রদলের হামলায় নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল্লাহ আল মামুন শিহাব। ২০১০ সালের ১২ জুলাই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুন হন এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা পলাশ। একই বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় খুন হন ছাত্রদল কর্মী সৌরভ ও ৬ মে নগরীতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মারা যান ছাত্রদল কর্মী সাজু আহমদ। এ ছাড়াও ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ১৯৯১ সালে বিশ্বনাথ কলেজে বিধান, ১৯৯৩ সালের ২৩ মে সরকারি কলেজে দুলাল, ১৯৯৪ সালে এনামুল হক মুন্না, ১৯৯৫ সালে মুরাদ চৌধুরী সিপার ও মুহিন খান নিহত হন। শিবিরের হাতে ১৯৯৮ সালের ২৪ মে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সৌমিত্র বিশ্বাস, ২০০২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মদন মোহন কলেজ ছাত্রদল নেতা হামিদ আহমদ খান দোয়েল ও ২০০৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর সিলেট ভেটেরিনারি কলেজ ছাত্রদল নেতা রফিকুল হাসান সোহাগ খুন হন। ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৯৯১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছাত্রদল কর্মী মাহবুব আলম, ১৯৯৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বাবুল আহমদ রাহী, ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি রুহুল আমিন ও ১৯৯৮ সালের ২৩ মে শিবির কর্মী মহসিন খুন হন।
এদিকে, ছাত্রদলের হাতে ২০০৩ সালের ৭ জানুয়ারি সিলেট সরকারি কলেজে ছাত্রদল কর্মী আকবর সুলতান নিহত হন।
এসব হত্যাকাণ্ডে দায়েরকৃত মামলায় দুর্বল অভিযোগপত্র ও সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে শাস্তি থেকে পার পেয়ে যায় অভিযুক্তরা। অনেক ক্ষেত্রে মামলা নিষ্পত্তিতে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে আপসকামিতারও অভিযোগ ওঠে।
রাইজিংবিডি/সিলেট/২৫ নভেম্বর ২০১৪/বদর/দিলারা/এএ
রাইজিংবিডি.কম