সাকা চৌধুরীর কাদের নগরে পোকামাকড়ের ঘরবসতি
রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম
রাঙ্গুনিয়ায় সাকা চৌধুরীর খামার বাড়ির মূল ফটক
রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার আদি বাসিন্দা হয়েও পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাঙ্গুনিয়ায় সমান আধিপত্য বজায় রেখেছিলো সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) পরিবার। মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সাকা চৌধুরীর পিতা প্রয়াত ফজলুল কাদের চৌধুরীর সময় থেকেই রাউজান-রাঙ্গুনিয়াসহ সমগ্র চট্টগ্রামেই ছিলো এই পরিবারের রাম রাজত্ব।
কথিত আছে মুক্তিযুদ্ধের আগে সাকা চৌধুরীর পিতা রাজার মত ঘোড়ায় চড়ে রাঙ্গুনিয়ায় আসতেন এবং রাঙ্গুনিয়ার মানুষকে তার প্রজা ভেবেই আধিপত্য চালাতেন, শাসন করতেন।
ফজলুল কাদের চৌধুরীর মৃত্যুর পর সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার পুরো পরিবার রাঙ্গুনিয়ায় তাদের আধিপত্য বজায় রাখেন এবং একাধিকবার সাকা চৌধুরী ও তার ছোটভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী রাঙ্গুনিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের দিকে রাঙ্গুনিয়ার সাধারন মানুষ সচেতন হয়ে উঠলে আওয়ামী লীগ নেতারা সাকা চৌধুরীকে বহিরাগত নেতা আখ্যায়িত করে রাঙ্গুনিয়া থেকে বিতাড়িত করার স্লোগান তোলেন। এরপরই এখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এমনকি রাঙ্গুনিয়ার নেতা হওয়ার বিষয়টি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
এই অবস্থায় নিজেকে রাঙ্গুনিয়ার মানুষ হিসেবে তুলে ধরার জন্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ১৯৯১ সালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদরে ইছাখালীর কাছে গোডাউন সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১০ একর পাহাড়ী ভুমি কিনে নিয়ে সেখানে খামার বাড়ি গড়ে তোলেন। আর এই খামার বাড়ির নাম দেওয়া হয় ‘কাদের নগর’।
মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য থাকার সময় এই খামার বাড়িতে বসেই স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন সাকা চৌধুরী। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কর্মীদেরকে এই খামার বাড়িতে ধরে এনে অনেক নির্যাতন চালানোর কাহিনীও রয়েছে বলে স্থানীয় অনেকেই বলেছেন।
সাকা চৌধুরী ও তার দল ক্ষমতায় থাকাকালে এই বাড়িতেই হয়েছে অনেক সভা-সমাবেশ, রমরমা মেজবান। শত শত গরু জবাই করে করা হয়েছে ভুড়ি ভোজের আয়োজন। এই বাড়িটিই ছিলো স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রধান আশ্রয়স্থল।
সাকা চৌধুরীর খামার বাড়ির অভ্যন্তরে কটেজ
১/১১’র রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে সাকা চৌধুরী গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়ার পর ২০০৭ সাল থেকেই তার এই খামার বাড়ি অনেকটা পরিত্যক্ত। প্রথমদিকে খামার বাড়িতে সাকা চৌধুরী ও তার পুত্ররা আসা যাওয়া করলেও বেশ কয়েকবছর ধরে এখানে চৌধুরী পরিবারের কারও আনাগোনা নেই।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঝে মাঝে এই বাড়িতে বিএনপি বা এর অঙ্গসংগঠনসমূহের কোন সভা সমাবেশের আয়োজন করতে চাইলেও প্রশাসন কিংবা সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বাধায় সেটা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। গত ৫ বছরে সাকা চৌধুরীর স্বপ্নের এই খামার বাড়ি রীতিমত পোকামাকড়ের ঘরবসতিতে পরিণত হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়ার সাধারণ মানুষ জানিয়েছে, সাকা চৌধুরী ফাঁসির দণ্ড পেয়ে ফাঁসির আসামির জন্য নির্ধারিত কনডেম সেলে ফাঁসির দিন গুণছেন। পক্ষান্তরে রাঙ্গুনিয়ায় তার বিলাসবহুল খামারবাড়িতে বাস করছে পোকামাকড়।
স্থানীয় ছাত্রদল কর্মী আনছুর উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এই খামার বাড়িতে এখন কেউ থাকেন না। একজন কেয়ারটেকার বাড়িটি পাহাড়া দেন। চৌধুরী পরিবারের কেউ আজকাল এই বাড়িতে আসেন না। প্রশাসন এবং সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের বাধায় এখানে বিএনপি কিংবা এর অঙ্গ সংগঠনের সভা সমাবেশ করাও সম্ভব হয় না।’
স্থানীয় বিএনপি কর্মী দিদারুল আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গত রমজানে আমরা এই বাড়িতে ইফতার পার্টির আয়োজন করেও সরকারি দলের বাধায় তা শেষ পর্যন্ত করতে পারিনি।’ তিনি জানান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ও তার পুত্র এই বাড়ির খোঁজ খবর রাখেন।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে বাড়ির কেয়ারটেকারকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। খামার বাড়ির ভেতরে ঘুরে দেখা গেছে এখানে সর্বত্র গরু-ছাগলের বিচরণ। খামার বাড়ির মূল গেইটের কাছে একটি পুকুর থাকায় ওই পুকুরে ভাড়ায় চালিত বিভিন্ন যানবাহন ধোয়ার কাজ করছে যানবাহন চালকরা। মূল গেইটের কাছে বিএনপি’র রাজনৈতিক কার্যালয়টি মাকড়সার জাল আর কাদা পানিতে আবদ্ধ হয়ে আছে। খামার বাড়ির অভ্যন্তরে আছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ ডিসেম্বর ২০১৫/রেজাউল করিম/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম